Advertisement
০৪ মে ২০২৪

জানলাই নেই, শিশু কাঁপে মায়ের কোলে

ভাঙাচোরা জানলা থাকলে তা-ও মানা যায়। কিন্তু কান্দির বড়ঞা গ্রামীণ হাসপাতালে মহিলা বিভাগের গোটা জানালাটাই উধাও! দুটি পাল্লার একটিও  নেই।

ভাঙা শার্সি গলে হিমেল হাওয়ার দাপাদাপি। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।

ভাঙা শার্সি গলে হিমেল হাওয়ার দাপাদাপি। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৭
Share: Save:

ভাঙাচোরা জানলা থাকলে তা-ও মানা যায়। কিন্তু কান্দির বড়ঞা গ্রামীণ হাসপাতালে মহিলা বিভাগের গোটা জানালাটাই উধাও! দুটি পাল্লার একটিও নেই।

করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের পুরুষ বিভাগে একটি জানালা পুরো বন্ধ করা যাচ্ছে না। শীতের রাতে কনকনে হাওয়া ঢুকছে হু-হু করে। হাতে গোনা যে ক’জন রোগী ভর্তি রয়েছেন, তাঁরা কাঁথা-কম্বল মুড়ি দিয়ে কাঁপছেন। যমশেরপুর গ্রামের চন্দন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই ঠান্ডায় আমার বাবা স্বাধীন চক্রবর্তীর শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে গিয়েছে।’ করিমপুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য সান্ত্বনা দিয়েছেন, জানালাটি দ্রুত সারিয়ে ফেলা হবে।

ডোমকল মহকুমা হাসপাতালের মহিলা বিভাগে বেশ কিছু জানলার কাচ ভাঙা। রোগীর বাড়ির লোকজন বাধ্য হন কার্ডবোর্ড লাগিয়ে রাখতে। জুগিন্দার বাবু মণ্ডলের আক্ষেপ, তাঁর মেয়ে পেটের যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু সে যন্ত্রণা ভুলে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে। ভাঙা জানালার পাশেই ছিল তার শয্যা। কাপড় গুঁজেও ঠান্ডা আটকানো যায়নি। গত রবিবার বুকের হাড় ভাঙা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন গোপীপুরের বেলি বিবি। তিনি বলেন, ‘‘আমার বেডের মাথার কাছে জানালার পাটাতন খুলে পড়ে গিয়েছে। হু-হু করে হাওয়া ঢুকছে। খবরের কাগজ গুঁজে কি আর ওই হাড়-হিম করা ঠান্ডা রোখা যায়!’’

বেলডাঙা-১ ব্লক হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগেও জানালার কাচ ভাঙা। কাপড় গুঁজে রেখেছেন প্রসূতি আর তাঁদের পরিজনেরা। বেগুনবাড়ির নয়নতারা খাতুন বলেন, ‘‘হু-হু করে হাওয়া ঢুকছে। মায়েরা সদ্যোজাতদের বুকে আঁকড়ে রেখেছেন।’’ ডাকবাংলো লাগোয়া বেলগ্রামের জুলেখা বিবির সদ্যোজাত শিশুপুত্র গত শুক্রবার থেকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি বড়ঞা গ্রামীণ হাসপাতালে। তাঁর রোগীর বাড়ির লোকজন ভাঙা জানলায় ত্রিপল টাঙিয়ে রেখেছেন। জুলেখা সদ্যোজাতকে বুকে আঁকড়ে বসে রয়েছেন।

কান্দি মহকুমা হাসপাতালের পুরুষ-মহিলা ও সার্জারি বিভাগ-সহ বিভিন্ন বিভাগে জানালা-দরজা ভেঙে পড়ে রয়েছে। শিশু বিভাগে মিনাই-কান্দরা গ্রামের বেদানা বিবির পাঁচ বছরের ছেলে জ্বর নিয়ে ভর্তি। ওই বিভাগের পাঁচটি জানালার মধ্যে তিনটেই ভাঙা। বেদানার ক্ষোভ, ‘‘বাড়িতে জানলা-দরজা লাগিয়েও ছেলে কাঁপছিল। আর, এখানে তিনটে জানলা ভাঙা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাওয়া ঢুকছে। ছেলেটার কী দশা, বুঝুন!’’

কান্দি মহকুমা হাসপাতালের সুপার মহেন্দ্র মান্ডির দাবি, ‘‘সারা বছরই ভাঙা জানলা-দরজা সারানো হয়। কিন্তু রোগীর বাড়ির লোকজন যে ভাবে সেগুলির উপরে অত্যাচার চালান, তাতে বেশি দিন টিকছে না। রোগীদের রেহাই দিতে জানলার ভাঙা অংশ প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করছি। হাসপাতাল কিছু করে না, এমনটা মোটেই নয়।’’

মুর্শিদাবাদের স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিভিন্ন হাসপাতালের সংস্কার কাজের জন্য জেলা প্রশাসন অর্থ বরাদ্দ করেছে। আপাতত জানালায় প্লাস্টিক শিট, কার্ডবোর্ড, পিচবোর্ড লাগানোর কথা বলা হয়েছে।’’ নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়েরও দাবি, ভাঙাচোরা জানলা-দরজা জরুরি ভিত্তিতে সারাই করা হচ্ছে।

সারাই হতে বুঝি শীত পার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital Condition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE