Advertisement
০৩ মে ২০২৪

রানাঘাট থানায় ফিরতে পারে বৈদ্যপুর, স্বস্তির হাওয়া এলাকায়

গ্রামবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে বৈদ্যপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতকে রানাঘাট থানা এলাকার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রস্তাব পাঠাল নদিয়া জেলা প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ছিল ১২ কিলোমিটার দূরের গাংনাপুর থানা নয় ২ কিলোমিটার দূরের রানাঘাট থানার অধীনে আনা হোক বৈদ্যপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩০
Share: Save:

গ্রামবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে বৈদ্যপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতকে রানাঘাট থানা এলাকার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রস্তাব পাঠাল নদিয়া জেলা প্রশাসন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ছিল ১২ কিলোমিটার দূরের গাংনাপুর থানা নয় ২ কিলোমিটার দূরের রানাঘাট থানার অধীনে আনা হোক বৈদ্যপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাকে। গাংনাপুর থানা তৈরির সময় থেকে তাঁরা সেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তাঁদের সেই দাবিতে কান দেয়নি কেউই। সম্প্রতি কনভেন্ট জেসাস অ্যান্ড মেরি স্কুলে ডাকাতি এবং সুপিরিয়র সিস্টারকে ধর্ষণের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের টনক নড়ে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পঞ্চায়েতকে গাংনাপুর থানা থেকে রানাঘাট থানার অধীনে আনার জন্য রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বেশ কয়েক ধাপ কাজ এগিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। বাকিটা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে দাবি প্রশাসনের।

জেলা পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘সব দিক খতিয়ে দেখে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতকে রানাঘাট থানার অন্তর্ভূক্ত করার জন্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সবুজসংকেত মিললেই বাকি কাজ শুরু করা হবে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় গাংনাপুর দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য ছিল। তাদের দৌরাত্ম্য এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে গাংনাপুরে একটি থানা তৈরির জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে গাংনাপুর থানা স্থাপন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করেন। এমনকী ২০০৩ সালে গ্রামবাসীরা নিজেরাই চাঁদা তুলে থানার তৈরির জন্য ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ব্যায়ে তিন বিঘা জমি পুলিশকে কিনে দিয়েছিলেন। সেই মতো ২০০৮ সালের ৫ জানুয়ারি গাংনাপুর বাজারে থেকে রানাঘাট যাওয়ার পথে রাস্তার ধারে বাঁ দিকে তৈরি হয় গাংনাপুর থানা। থানার উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অনুপভূষণ ভোরা। ঠিক হয়, রানাঘাট ও ধানতলা থানার অধীন পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দায়িত্বে থাকবে ওই থানা।

বৈদ্যপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল সেগুলির মধ্যে একটি। এর আগে গাংনাপুর এলাকায় কোনও ঘটনা ঘটলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ১৬ কিলোমিটার দূরে রানাঘাট বা ১৪ কিলোমিটার দূরে ধানতলা থানায় যেতে হত। তাই নতুন থানা হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা খুশি হলেও বৈদ্যপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। প্রতিবাদ জানিয়ে এলাকার হাজার পাঁচেক মানুষ গণস্বাক্ষর গ্রহণ করে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে জমা দেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, ওই এলাকা থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে রানাঘাট থানা। সে তুলনায় গাংনাপুর থানার দূরত্ব কমপক্ষে ১২ কিলোমিটার। যার কারণে ওই সব এলাকায় কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে তাদের হিমসিম খেতে হবে।

গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, সে দিন অবশ্য তাঁদের সেই দাবিকে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি রানাঘাট কাণ্ডের প্রতিবাদে ৩৪ নম্বর জাতীয় জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন স্কুল পড়ুয়া, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। দোষীদের গ্রেফতারে দাবি ছাড়াও, বৈদ্যপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাকে রানাঘাট থানার অধীনে ফিরিয়ে আনার দাবিও তাঁরা জানান। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সেদিন তাঁদের এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

স্বভাবতই প্রশাসনের ওই উদ্যোগে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তবে, এই উদ্যোগ আগে নেওয়া হলে আমাদের এতগুলো বছর দুশিন্তায় কাটাতে হত না।’’ বৈদ্যপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান তৃণমূলের সঞ্জয় সরকার বলেন, ‘‘এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে সত্যিই খুব ভাল হবে। এর ফলে কমবেশি ২৪ হাজার মানুষ উপকৃত হবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE