সরকারি বাস চালাতে বাধা। মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী সোমবারই হুঙ্কার দিয়েছিলেন, “বাধা দিলে বাধবে লড়াই!”
সেটা যে একেবারে কথার কথা নয়, তা টের পাওয়া গেল মঙ্গলবার বামেদের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের সকালেই। বহু দিন বাদে মরিয়া হয়ে রাস্তায় নামতে দেখা গেল বামেদের। বহু দিন বাদে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা ‘পথে এ বার নামো সাথী’ গানটাকে যেন ফিরিয়ে আনল সিপিএম।
তাতে যা প্রত্যাশিত ছিল, তা-ই হয়েছে অবশ্য। দীর্ঘ দিন সিপিএমের সক্রিয়তা দেখতে অনভ্যস্ত হয়ে পড়া তৃণমূল প্রথমে একটু থতমত, তার পরে হইহই করে রাস্তায় নেমেছে। বড় সংঘর্ষ না হলেও হাতাহাতি বেধেছে। কৃষ্ণনগরে ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে লালঝান্ডা। তাতে আর যা-ই হোক বা না হোক, বহু দিন পরে বামেরা যে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই।
মঙ্গলবার সকালে কৃষ্ণনগরে পোস্ট অফিস মোড় থেকে মিছিল বার করে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরেন সিপিএম নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে স্কুলে-স্কুলে গিয়ে পিকেটিং শুরু করে এসএফআই। গোলমাল বাধে লেডি কারমাইকেল স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে। স্থানীয় সূত্রের খবর, স্কুলের দরজার সামনে পতাকা টাঙিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন কয়েক জন বন্ধ সমর্থক। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সৌরভ বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁদের বচসা বাধে। খবর পেয়ে আরও বন্ধ সমর্থক গিয়ে স্কুলে ঢুকে পড়েন। শিক্ষকদের সঙ্গে তাঁদের বচসা বেধে যায়, সৌরভ বিশ্বাসকে নিগ্রহও করা হয় বলে অভিযোগ।
ঘটনাচক্রে, ওই স্কুলেই শিক্ষকতা করেন জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের পুত্রবধূ
(প্রাক্তন জেলা টিএমসিপি সভাপতি অয়ন দত্তের স্ত্রী)। তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, সেই কারণেই ওই স্কুলে চড়াও হয়েছিল সিপিএম। যদিও তা অস্বীকার করেছেন বাম নেতারা। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সৌরভ তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। তিনিই প্রথম সিপিএম কর্মীদের মারধর করেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কিছু ক্ষণের মধ্যেই অয়ন দত্তের নেতৃত্বে বেশ কিছু তৃণমূল কর্মী এসে সিপিএমের লোকজনকে হটিয়ে দেয়। বাইক-বাহিনী দাপিয়ে বেড়ায় শহর। কারও হাতে তৃণমূলের পতাকা না থাকলেও বাইর-আরোহীরা সকলেই তৃণমূল বা টিএমসিপি কর্মী হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন জায়গায় সিপিএম ও এসএফআইয়ের ঝান্ডা ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলে দেয় তারা।
সকালে রানাঘাট শহরের চাবিগেট এলাকাতেও বামেদের মিছিলে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। হামলায় দুই বন্ধ সমর্থক আহতও হন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টা নাগাদ চাবিগেট দিয়ে বামেদের মিছিল যাচ্ছিল। সেই মিছিলের উপরে হামলা হয়। ফরওয়ার্ড ব্লকের শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি-র জেলা সম্পাদক সুবীর ভৌমিকের দাবি, “মানুষ স্বতঃফূর্ত ভাবে ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছেন। আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে তৃণমূল হামলা চালায়।” রানাঘাট শহর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি পিন্টু সরকার পাল্টা বলেন, “আমরা ওদের মিছিলে হামলা করিনি। ওরা দোকানে ভাঙচুর করছিল। আমরা শুধু ওদের তাড়িয়ে দিয়েছি।”
রানাঘাট রথতলা রেলগেটে অবরোধের জেরে কিছুক্ষণ ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে ধর্মঘটীদের সরিয়ে দিয়েছে। রানাঘাট ১ নম্বর প্লাটফর্মে টিকিট কাউন্টারের সামনে বন্ধ সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি হয়। পায়রাডাঙা স্টেশনেও রেল অবরোধ করে বামেরা। রেললাইনে লালঝান্ডা পুঁতে দেওয়া হয়। তার জেরে ওই শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। রেল অবরোধ হয় পলাশি স্টেশনেও। স্থানীয় ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের সামনেও বিক্ষোভ দেখায় বামেরা। তবে তাদের বাধা দিতে তৃণমূলকে রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি।
চাকদহে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। সকালে ঝামেলা হয় তাহেরপুর বাজারেও। সিপিএমের অভিযোগ, ধর্মঘটের সমর্থনে তাদের মিছিলে হামলা করে তৃণমূল। তবে তৃণমূলের পালটা দাবি, জোর করে দোকান বন্ধ করাচ্ছিল সিপিএম। সেই সময়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের বচসা হয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র অভিযোগ, “পুলিশ ও প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল ধর্মঘট ব্যর্থ করার চেষ্টা করেছে। মানুষকে সন্ত্রস্ত করেছে।” তৃণমূলের গৌরীশঙ্কর দত্ত পাল্টা বলেন, “সিপিএমের হার্মাদ বাহিনি যেখানেই অশান্তি করার করার চেষ্টা করেছে, মানুষ তাদের শিক্ষা দিয়েছে।”
আজ, বুধবার বামেদের সাধারণ ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন জেলায় আসছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএম যেমন এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবে না, শাসক দল তথা পুলিশ-প্রশাসনের চেষ্টা থাকবে পরিস্থিতি যত দূর সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখতে। আখেরে কী হয়, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy