Advertisement
১১ মে ২০২৪
ধর্মঘটের জের

রুজি হারিয়ে বিপাকে বিড়ি শ্রমিকেরা

কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশের বিরুদ্ধে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধর্মঘট করছেন বিড়ি মালিকেরা। বন্ধ উৎপাদন। কিন্তু বিড়ি মালিকদের এই অনড় মনোভাবের ফলে রুজি হারিয়ে অবর্ণনীয় আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন জেলার প্রায় ১১ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক।

বন্ধ বিড়ি কারখানা। — নিজস্ব চিত্র

বন্ধ বিড়ি কারখানা। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
অরঙ্গাবাদ শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১০
Share: Save:

কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশের বিরুদ্ধে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধর্মঘট করছেন বিড়ি মালিকেরা। বন্ধ উৎপাদন। কিন্তু বিড়ি মালিকদের এই অনড় মনোভাবের ফলে রুজি হারিয়ে অবর্ণনীয় আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন জেলার প্রায় ১১ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক।

টোব্যাকো আইন সংশোধনের দাবিতে ১১ এপ্রিল থেকে ধর্মঘটে নেমেছেন বিড়ি কারখানার মালিকেরা। ২৫ এপ্রিল, সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উপর ধর্মঘট উঠবে কি না তা নির্ভর করছে। এ দিকে, সিটু ও আইএনটিইউসি ঘোষণা করেছে সোমবার ধর্মঘট মালিকেরা না তুললে আগামী সপ্তাহ থেকে বিড়ি মালিকদের বাড়ি ও কারখানার সামনে শ্রমিকদের নিয়ে ধর্নায় বসবে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বিড়ির প্যাকেটের উপর ৮৫ শতাংশ জায়গা জুড়ে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ছাপিয়ে বিড়ি বিক্রির নির্দেশ কার্যকরী করেছে ১ এপ্রিল থেকে। প্যাকেটের উপর এতটা অংশ জুড়ে ওই ভয়াবহ ছবি থাকলে বিক্রি কমে যেতে পারে সেই আশঙ্কা করে ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে কর্ণাটক হাইকোর্টে মামলা ঠোকেন সেখানকার বিড়ি মালিকেরা। হাইকোর্ট আর্জি খারিজ করে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে টোব্যাকো আইন চালুর নির্দেশ দেন। ১২ এপ্রিল গুজরাট হাইকোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চে সরকারি নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলা করেছেন বিষ্ণু টোব্যাকো উৎপাদক নামে একটি সংস্থা। সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ২ মে। তার আগেই সুপ্রিম কোর্টে সোমবার একদল টোব্যাকো ব্যবসায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের ৮৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে সচিত্র সতর্কীকরণ ছাপানোর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার পরবর্তী দিন ঠিক করা হয়েছে সোমবার।

বিড়ি শিল্প শহর অরঙ্গাবাদ বিড়ি মালিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার জৈন বলেন, “সোমবার সুপ্রিম কোর্ট কি রায় দেন তা দেখার পরই বিড়ি মালিকেরা ধর্মঘট তুলে বিড়ি উৎপাদন শুরু করবে কিনা তার সিদ্ধান্ত নেবে। যদি দেখা যায় ৮৫ শতাংশ এলাকায় সতর্কীকরণ ছাপানোর নির্দেশ বলবত থাকছে তাহলে ধর্মঘটও চলবে।” সকলেই তাকিয়ে আছেন সোমবার ওই রায়ের দিকে।

এ দিকে, দিনের পর দিন কাজ বন্ধ থাকায় আতান্তরে পড়েছেন বিড়ি শ্রমিকেরা। মঞ্জুর আলির সাত জন সদস্যের পরিবারে ছেলে-বউ মিলিয়ে চার জনই বিড়ি বাঁধেন। তিনি বলেন, “বিড়ি বেঁধে সংসার চলে। সে কাজ দিনের পর দিন বন্ধ থাকলে পথে বসতে হবে।’’ আরও এক বিড়ি শ্রমিক রোকেয়া বলেন, “এই ভাবে ধর্মঘট চলতে থাকলে কী ভাবে সংসার চলবে বুঝতে পারছি না।’’

সিটুর মুর্শিদাবাদ জেলার বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের নেতা চিত্তরঞ্জন সরকার বলেন, “সপ্তাহ দু’এক আগে বিড়ি মালিক ধর্মঘট শুরু হয়েছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় ইতিমধ্যেই হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে বহু পরিবারেই।” তিনি জানান, কয়েকটি ছোট ছোট কোম্পানি গোপনে কিছু বিড়ি তৈরি করে বাজারে ছাড়ছেন। ফলে কিছু লোক এখনও কাজ পাচ্ছে। কিন্তু বড় কারখানাগুলি এখনও বন্ধ। আগামী সপ্তাহে সিটু বিড়ি উৎপাদন শুরু দাবিতে পথে নামবে। আইএনটিইউসি সহ অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনগুলিকেও সামিল হতে আহ্বান জানানো হবে তাতে।

আইএনটিইউসির বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাদশার আলি বলেন, “বহু শ্রমিক পরিবার সব্জি পর্যন্ত কিনতে পারছেন না। ঘটি বাটি বন্ধক দিতে হচ্ছে। দু’টাকা কিলো দরে চাল, গম তাও রেশন দোকানে মিলছে না। পরিস্থিতি সামলাতে প্রশাসনের কোনও উদ্যোগ নেই।”

তিনি জানান, সিটুর সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে কোনও আপত্তি নেই আইএনটিইউসির। একটাই দাবি, অবিলম্বে চালু করতে হবে সমস্ত বিড়ি কারখানার কাজ। না হলে বিড়ি মালিকদের বাড়ির সামনে গিয়ে ধর্নায় বসবেন শ্রমিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bidi factory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE