Advertisement
E-Paper

তিন নয় চার, গারদের ওপারে বিড়ি বিদ্রোহ

একটা বাড়তি হবে না কর্তা? আবদারটা দেওয়ালে মাথা কুটে মরছিল দিন কয়েক ধরে। প্রহরী থেকে জেল ওয়ার্ডেন ঘুরে জেলার সাহেবের কাছ থেকেও শেষতক সাড়া না মেলায় ধুন্ধুমার জেলখানা।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০১:০৫

একটা বাড়তি হবে না কর্তা?

আবদারটা দেওয়ালে মাথা কুটে মরছিল দিন কয়েক ধরে।

প্রহরী থেকে জেল ওয়ার্ডেন ঘুরে জেলার সাহেবের কাছ থেকেও শেষতক সাড়া না মেলায় ধুন্ধুমার জেলখানা।

জ্যালজ্যালে প্লাস্টিকের তলায় সাদা ম্যাড়ম্যাড়ে কাগজে প্রস্তুতকারকের নাম-ধাম। দু’ডজন বিড়ির একটা আস্ত প্যাকেট।

তিনের বদলে, সেই বিড়ির একটা বাড়তি প্যাকেট দাবি করে বসেছিল বন্দিরা। আর তা নিয়েই, গত তিন দিন ধরে আকাশ ছোঁয়া পাচিলের আড়ালে তোলপাড় কৃষ্ণনগরের জেলখানা।

ঝগড়া, কথা কাটাকাটি, গালমন্দ থেকে ঘা-কতক দমাদ্দমও হয়েছে বলে খবর। আর তার জেরে অনশনে বন্দিদের বড় অংশ।

বর্ষাতেই বরফ গলে। এনামেলের থালা থেকে মুখ ফেরানো বিড়ি বিদ্রোহী বন্দিদের গোঁসা ভাঙতে, শেষতক তিনের বদলে চারেই রাজি হয়েছেন জেল কর্তৃপক্ষ।

বিড়ি-বিদ্রোহের কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন কৃষ্ণনগরের জেল সুপার স্বপন ঘোষ, ‘‘বিড়ির প্যাকেট নিয়ে আবাসিকদের সঙ্গে একটা জটিলতা তৈরি হয়েছিল ঠিকই। তবে আমরা ওঁদের দাবি মেনে নিয়েছি।’’

সোমবার আর পাঁচটা দিনের মতই ‘ইন্টারভিউ রুম থেকে পরিবারের লোকের সঙ্গে দেখা করে জেলের ভিতরে ফিরে গিয়েছিলেন বন্দিরা। জেলের এক কর্তা বলেন, ‘‘আসলে ইন্টারভিউ রুমে পরিজনের সঙ্গে দেখা করার পরে কোনও বন্দিকে কিছু দিতে গেলে তা প্রধান গেটের প্রহরীদের হাতে দিতে হয়। তারাই পরে ভালো করে তল্লাশি করে সংশ্লিষ্ট বন্দির হাতেতা তুলে দেন।”

সেই তালিকায় যেমন থাকে শুকনো খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, পোশাক তেমনই থাকে বিড়ি, সিগারেট, দেশলাইও। এত দিন বিড়ির পরিমাণ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতেন জেল কর্তৃপক্ষ।

রাশ টানাটা শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। বিপত্তি বাধে তাতেই।

বাড়ির লোক বেশি করে বিড়ি দিতে এলে তিন প্যাকেট রেখে বাকিটা ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। আর এতেই যেন আগুনে ঘি পড়ে।

সোমবার দুপুরে এক দল বন্দি প্রথমে চড়াও হয় সংশোধনাগারের ভিতরে কেস টেবিলের ঘরে বা জমাদারের ঘরে। ঝগড়াটার সূত্রপাত সেখানেই।। উত্তেজিত হয়েই তিন প্যাকেটের বেশি বিড়ির দাবি জানাতে তাকে তারা। তখন কয়েকজন খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত কয়েদি ওই ঘরের চেয়ার টেবিল উল্টে দেয় বলে জানা গিয়েছে। কয়েক জন পরিচিত সমাজ বিরোধী ‘পাল্টা হাঙ্গামা’ হবে কিন্তু বলে শাসায়ও।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ছুটে আসেন প্রহরীরা। তাদের উপরেও চড়াও হয় বন্দিরা। শুরু হয়ে যায় ধস্তাধস্তি। প্রায় আধ-ঘণ্টা ধরে চলে বিড়ি-বিদ্রোহ।

মারমুখি ওই কয়েদীদের সামাল দিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় জেলের নিরাপত্তারক্ষীদের। এরই মধ্যে খবর পেয়ে ছুটে আসেন জেলার গনেশ মাইতি। তাকে ঘিরে ধরেও ধাক্কাধাক্কি করা হয়।

এরপরেই রাত থেকে তারা খাবার নেওয়াও বন্ধ করে দেয়। খবার না নিয়েই নিজেদের ওয়ার্ডে ঢুকে যায় তারা।। এবার পরিস্থিতি সামাল দিতে রাত সাতটা নাগাদ ছুটে আসেন সুপার ও জেলার। তারা ওই বন্দিদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা অনড়। শেষ পর্যন্ত জেল কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা পিছু হটে জানিয়ে দেন, বিড়ি নিয়ে আর কোন সমস্যা হবে না।

সেই মত মঙ্গলবার থেকে আগের নিয়মেই ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কেন এমন হল?

এক জেল কর্তা বলছেন, ‘‘ভেবে দেখুন সামান্য একটা বিড়ির জন্য কি কান্ডটাই না ঘটালো বন্দিরা। এর আগে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে মাওবাদীদের অনশন করতে দেখেছি। খাবারের মান নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখেছি। কিন্তু শুধু মাত্র বিড়ির জন্য এভাবে মারমুখি হয়ে ওঠা বা খাবার খেতে অস্বীকার করতে দেখিনি কোনও দিন।’’

যছা শুনে প্রহরীদের দিকে কটূক্তি ছুড়ে দিচ্ছে এক বন্দি— ‘‘বাবা বিড়ি বলে কথা!’’

biri prisoner
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy