Advertisement
১১ মে ২০২৪
বিজেপির অস্বস্তি অব্যাহত

আয়ুষ্মান নিয়ে প্রচারেও নেই সকলের দেখা

কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল করলেও রানাঘাটে পিছিয়েই ছিল বিজেপি। হবিবপুর বা বেলগড়িয়া ২-এর মতো পঞ্চায়েতে আশা জাগিয়েও বোর্ড পায়নি তারা। ত্রিশঙ্কু হবিবপুরে বৃহত্তম দল হয়েও বোর্ড গঠনে ব্যর্থ হয় পদ্ম শিবির।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

সম্রাট চন্দ
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০২
Share: Save:

মতুয়া নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামার পরে এ বার আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প নিয়েও মাঠে নেমেছে বিজেপির একাংশ। কিন্তু সেখানেও চাপা থাকছে না দলের দুই শিবিরের বিভাজন। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নির্বাচিত সদস্যদের দলত্যাগ। সব মিলিয়ে রানাঘাট লোকসভা আসনে খুব একটা স্বস্তিতে নেই পদ্ম শিবির।

কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল করলেও রানাঘাটে পিছিয়েই ছিল বিজেপি। হবিবপুর বা বেলগড়িয়া ২-এর মতো পঞ্চায়েতে আশা জাগিয়েও বোর্ড পায়নি তারা। ত্রিশঙ্কু হবিবপুরে বৃহত্তম দল হয়েও বোর্ড গঠনে ব্যর্থ হয় পদ্ম শিবির। এখন আবার পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পরে হঠাৎই রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরে।

ভোটের পরেই শান্তিপুরের বাবলা পঞ্চায়েত এলাকা থেকে নির্বাচিত বিজেপির এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। সম্প্রতি বেলগড়িয়া ১ পঞ্চায়েত এলাকা থেকে নির্বাচিত এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য এবং এক পঞ্চায়েত সদস্যও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। রামনগর ২ পঞ্চায়েতের দুই সদস্যও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।

বোর্ড গঠনের এত দিন পার হয়ে যাওয়ার পরেও এই দলবদল?

বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকারের দাবি, “শাসক দলের চাপের কারণেই দলত্যাগের ঘটনা ঘটছে। অনুব্রত মণ্ডল আসার পরে তা গতি পেয়েছে।” তবে যাঁরা দল ছেড়েছেন তাঁরা কেউই এখনও পর্যন্ত চাপের কথা স্বীকার করেননি। তাঁদের সকলের একই দাবি, এলাকায় উন্নয়নের কাজ করার জন্যই এই দলবদল। সেই সঙ্গে বিজেপির জেলা নেতৃত্বের সাংগঠনিক দুর্বলতার দিকেও আঙুল তুলছেন কেউ-কেউ। দলত্যাগীদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ভোটের পরে দলের তরফে সে ভাবে যোগাযোগ রাখা হয়নি। হবিবপুরে সুবিধাজনক জায়গায় থেকেও বোর্ড গঠন করতে না পারায় দলের অন্দরেই জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকেই।

হবিবপুর পঞ্চায়েতে বিজেপির টিকিটে জয়ী হওয়া লক্ষ্মণ ঘোষের অভিযোগ, “আমি ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম। সেখানে অনেকগুলি সদস্য জিতিয়ে আনি। কিন্তু ভোটের পরে বোর্ড গঠনের সময়ে আর জেলা নেতৃত্ব পাশে থাকেননি। সহযোগিতা পাইনি। বরং তাঁরা অপদস্থ করেছেন। আমি সেই সময়ে দল না ছাড়লেও বোর্ড গঠনের সময়ে উপায় না দেখে তৃণমূলকেই সমর্থন করি।”

শান্তিপুর ব্লকের বেলগড়িয়া ১ পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের সময়ে তৃণমূলের দুই শিবিরের ভোটাভুটি হয়েছিল। বিজেপির তিন সদস্য তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর প্রার্থীকে সমর্থন করেন। সম্প্রতি পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্য এবং পঞ্চায়েতের এক সদস্য দল ছেড়েছেন। বিজেপিরই একাংশের মতে, শাসক দলের সঙ্গে ওই সদস্যদের ঘনিষ্ঠতা আগে থেকেই ছিল। বোর্ড গঠনের সময়ে তৃণমূলের কোন্দলের সুযোগ নিতে গিয়ে যে আখেরে তা বুমেরাং হয়ে গিয়েছে। জগন্নাথের কথায়, “অনেকেই তৃণমূল থেকে এসেছিলেন। তাঁদের টিকিট দেওয়া হয়েছিল। জেতার পরে কেউ-কেউ তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু ভোটারেরা যাননি।”

নদিয়া দক্ষিণে সে ভাবে বিজেপির তরফে বড়সড় আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হয়নি বলেও দলের একাংশের ক্ষোভ। এক নেতার আক্ষেপ, “দলের কর্মীদের চাঙ্গা রাখার জন্যই নানা আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া উচিত ছিল। তা আর হচ্ছে কোথায়!”

রানাঘাট লোকসভা আসনে বিপুল পরিমাণ মতুয়া ভোট দখলের লড়াইয়ে তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছে বিজেপি। বিভিন্ন এলাকায় মতুয়া সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে। মতুয়া সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত হলেও বিজেপি নেতাদের একাংশের তৎপরতা স্পষ্ট ছিল। তাঁদের মধ্যে জগন্নাথ বিরোধী শিবিরের লোকেদেরই সংখ্য়াধিক্য। প্রতি ক্ষেত্রেই যুক্তি দেওয়া হয়, এটা মতুয়াদের অনুষ্ঠান, দলের নয়। মতুয়া সংগঠনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁরাই থাকছেন। কিন্তু সম্প্রতি রানাঘাট ২ ব্লকের দত্তপুলিয়া ও হাঁসখালি ব্লকের বগুলায় আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প নিয়ে তৃণমূল বিরোধী প্রচারের কর্মসূচি নেয় বিজেপি। দলীয় ব্যানারে সেই কর্মসূচি নেওয়া হলেও সেখানেও গরহাজির জগন্নাথ। অথচ নদিয়া দক্ষিণের সহ-সভাপতি দিব্যেন্দু ভৌমিক, রানাঘাট ২ ব্লকের প্রাক্তন দলীয় সভাপতি অশোক বিশ্বাস, বগুলার প্রাক্তন পদাধিকারী মিল্টন বিশ্বাসেরা হাজির ছিলেন। এঁরা জগন্নাথ বিরোধী বলেই দলে পরিচিত।

অশোকেরা যদিও দাবি করছেন, দলের বিভিন্ন পদাধিকারীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। জগন্নাথের ব্যাখ্যা, “দলীয় অনুষ্ঠান ছিল। আমন্ত্রণও পেয়েছি। কিন্তু দু’দিন বিভিন্ন জায়গায় ঠাসা কর্মসূচি ছিল বলে আর ওখানে যাওয়া হয়নি।” সবাই একত্রে কাজ করছেন এবং রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলকে পরাজিত করার জন্য একযোগেই ঝাঁপাবেন বলেও তিনি দাবি করেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের কটাক্ষ, “ওরা প্রাণে যা চায় বলতে থাকুক। লোকসভা ভোটের পরে তো দলটাকেই দূরবিন দিয়ে খুঁজতে হবে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC Ayushman Bharat Yojana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE