Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তথ্যচিত্র দেখিয়ে শাসক দলকে বিঁধছে বিজেপি

ভোট-প্রচারে গান ও তথ্যচিত্র ব্যবহার করছে বিজেপি। গানে-ছবিতে তৃণমূল জমানার ‘কালো’ অধ্যায়কে তুলে ধরবে বিজেপি। জেলা বিজেপির এক কর্তা জানাচ্ছেন, ছবির মাধ্যমে শাকদলের বিরুদ্ধে প্রচার করলে তা মানুষের মনে প্রভাব ফেলবে। তাই এই পরিকল্পনা।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৪
Share: Save:

ভোট-প্রচারে গান ও তথ্যচিত্র ব্যবহার করছে বিজেপি। গানে-ছবিতে তৃণমূল জমানার ‘কালো’ অধ্যায়কে তুলে ধরবে বিজেপি। জেলা বিজেপির এক কর্তা জানাচ্ছেন, ছবির মাধ্যমে শাকদলের বিরুদ্ধে প্রচার করলে তা মানুষের মনে প্রভাব ফেলবে। তাই এই পরিকল্পনা। ভোটে বাজারে গান বা নাটকের ব্যবহার নতুন কিছু নয়। গত লোকসভা ভোটেও বিজেপির তরফে গান বাঁধা হয়েছিল। কংগ্রেসের নানা ‘অন্ধকার’ দিকের কথা উল্লেখ ছিল সেখানে।

এ বার রাজ্য বিজেপির তৈরি ওই গান ও তথ্যচিত্রে কী থাকছে? তৃণমূল নেতাদের ‘দাদাগিরি’, পুলিশকে হুমকি, সারদা ও নারদ কেলেঙ্কারির মতো বিষয়গুলি ওই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হবে। বছর দেড়েক আগে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাসংদ তাপস পালের মহিলাদের সম্পর্কে কুরুচিকর বক্তব্যের ফুটেজও দেখা যাবে ওই তথ্যচিত্রে। কেবল তথ্যচিত্রই নয়, গ্রাম বাংলার মেঠো সুরে বাঁধা গানের মাধ্যমেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার করবে বিজেপি।

কী ভাবে চলবে ওই প্রচার? জেলা বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে জেলায় ১০টি প্রদর্শনী ভ্যান এসেছে। সেগুলিতে বড় স্ক্রিন লাগানো থাকবে। ওই গাড়িগুলি জেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াবে। পাড়ার মোড়ে মোড়ে ওই গাড়িতে থাকা স্ক্রিনের মাধ্যমে দেখানো হবে নাতিদীর্ঘ ওই তথ্যচিত্র। জেলা বিজেপির মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদার বলেন, “এই সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। তৃণমূল আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে। এ সব বিষয়ই গান ও তথ্যচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হবে।’’

কেমন সেই গান? দুই বাউল শিল্পী গাইবেন, “মনের ভেতরে গুমরে কাঁদে শুধুই যন্ত্রনা গো, পরিবর্তন তো এলো না, চারিধারে পতন গো, কী আমরা বোকা গো।” তৃণমূল ক্ষমতায় এসে রাজ্যে কোনও সদর্থক পরিবর্তন আসেনি। সে কথাই গানে ফুটে উঠেছে— ‘‘চার দশকে কুশাসনে প্রাণ নিল লালে নীলে, ভরসা করে দিলাম ভোট, ধোঁকা দিল জোড়াফুলে।” তেমনি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ছবি আঁকাকে কটাক্ষ করে গান গাইছেন শিল্পী— “দিদির কাজ ছবি আঁকা, মুখের আওয়াজ সবই ফাঁকা।” সারদা ও নারদ কেলেঙ্কারিও উঠে এসেছে গানের লাইনে— “গল্প শুনি হাওয়াই চটির, চুরি হয়েছে কোটি কোটি, দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে নিচ্ছে তাঁরা টাকা গো, কি আমরা বোকা গো।” আবার পুলিশের ‘দলদাস’ প্রসঙ্গে গানের কলিতে ধরা পড়েছে- “গুন্ডাগিরি তোলাবাজি,ভয় পেয়েছে পুলিশগো,ফাইল দিয়ে মাথা ঢাকছে বাংলাগো।”

তেমনি তথ্যচিত্রে তৃণমূলের নেতামন্ত্রীদের কুকীর্তির ভিডিও ফুটেজ তুলে ধরা হয়েছে।তথ্যচিত্রের শুরুতেই বলা হয়েছে-দিদি যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন তাঁর একটাও তিনি রাখেননি।শিক্ষাকে দলতন্ত্র মুক্ত করতে পারেননি।বেকার যুবকরা চাকরি পাননি।কৃষক আত্মহত্যা করছেন।নারী নির্যাতন বাড়ছে।এসব তুলে ধরা হয়েছে ওই তথ্যচিত্রে। কৃষ্ণনগরের সাংসদ তথা অভিনেতা তাপস পাল বিরোধীদের বাড়িতে দলের ছেলে পাঠিয়ে দিয়ে ধর্ষণ করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

সেই ভিডিও ফুটেজ তুলে ধরে বলা হয়েছে-“দিদি আপনার দলের সাংসদ এভাবে ধর্ষণ করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।মহিলা হিসাবে আপনার খারাপ লাগেনা?”এরাজ্যে তৃণমূলের হামলায় পুলিশকে টেবিলের তলায় লুকাতে হয়েছিল সেই চিত্র যেমন তুলে ধরা হয়েছে,তেমনি বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের পুলিশ প্রশাসনের ওপরে বোমা মারার হুমকির ভিডিও ফুটেজ তুলে ধরা হয়েছে।

সারদার সম্মেলনে গিয়ে প্রাক্তনমন্ত্রী মদন মিত্র সারদা কর্তা ও তাঁর কোম্পানির প্রশংসা করেছিলেন।সেই ভিডিও ফুটেজও তুলে ধরা হয়েছে।আবার নারদা স্টিং অপারেশনের ফুটেজগুলি তুলে ধরা তৃণমূলের নেতামন্ত্রীরা যে প্রকাশ্যে ঘুষ নিচ্ছেন সেই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।সিন্ডিকেট রাজ কিংবা সিঙ্গুর থেকে শিল্প কারখানা অন্যত্র চলে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

অন্যদিকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়,দলের রাজ্যের নেতা রাহুল সিংহ,দিলীপ ঘোষ,রুপা গঙ্গোপাধ্যায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে সব বক্তব্য রেখেছেন সেই সব ফুটেজও তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়েছে।তথ্যচিত্রের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজগুলি তুলে ধরে রাজ্যে পরিবর্তনের ডাক দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE