Advertisement
০৭ মে ২০২৪

বই আছে কর্মী নেই, গ্রন্থাগারে তালা

গ্রন্থাগার রয়ে‌ছে। থরে থরে বইও সাজানো রয়েছে। কিন্তু পাঠকদের জন্য সে গ্রন্থাগার নিয়মিত খোলে না। কারণ, জেলার বেশির ভাগ গ্রন্থাগারই কর্মী সঙ্কটে ভুগছে। কোথাও খোদ গ্রন্থাগারিক নেই।

ঝুলছে তালা। — নিজস্ব চিত্র

ঝুলছে তালা। — নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৯
Share: Save:

গ্রন্থাগার রয়ে‌ছে। থরে থরে বইও সাজানো রয়েছে। কিন্তু পাঠকদের জন্য সে গ্রন্থাগার নিয়মিত খোলে না। কারণ, জেলার বেশির ভাগ গ্রন্থাগারই কর্মী সঙ্কটে ভুগছে। কোথাও খোদ গ্রন্থাগারিক নেই। কোথাও আবার ঘর খোলা বা ঘর পরিষ্কারের জন্য চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নেই। ফলে লোকজন বইয়ের খোঁজে গ্রন্থাগারে গিয়েও ফিরে আসছেন খালি হাতে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মী সঙ্কটের কারণে রীতিমতো ধুঁকছে জেলার বহু গ্রন্থাগার। ১৫৯টি গ্রন্থাগারে থাকার কথা ৩৪৮ জন কর্মী। সেখানে‌ আছেন মাত্র ১৬৯ জন। ফলে মুর্শিদাবাদ জেলায় তালা ঝুলছে বহু গ্রন্থাগারেই। প্রায় অর্ধেক গ্রন্থাগার চলছে পিয়ন ও নৈশ প্রহরী দিয়ে। নাহলে সপ্তাহে একদিন বা দু’দিন অন্য গ্রন্থাগারের কর্মী পাঠিয়ে কোনও রকমে কাজ চালাতে হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে একজন কর্মীও নিয়োগ না হওয়ায় এমন সঙ্কট। সেই কারণে বহু গ্রন্থাগারেই কমছে সদস্য ও পাঠকের সংখ্যা।

জেলায় এই মুহূর্তে গ্রন্থাগারের সংখ্যা ১৫৯। পরিস্থিতি ও আইনি জটিলতায় বন্ধ ১২টি। আর অন্যগুলি খাতায়-কলমে চলছে দেখানো হলেও সেগুলিতেও তালা ঝুলছে। যেমন ধুলিয়ান শহর গ্রন্থাগার। একে একে কর্মীরা অবসর নেওয়ায় ধুলিয়ান শহরের একমাত্র সরকারি শহর গ্রন্থাগার তালা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে এক বছর থেকে। গ্রন্থাগারিক বন্দনা সেনগুপ্ত অবসর নিয়েছেন ২০১৩ সালের অগস্ট মাসে। তারপর গ্রন্থাগারের ঝাঁপ খুলে রেখেছিলেন নৈশপ্রহরী সত্যরঞ্জন দাস। তিনিও অবসর নিয়েছেন গত বছর অক্টোবরে। সেই থেকে তালা ঝুলছে পুরনো এই গ্রন্থাগারে। গ্রন্থাগারের সম্পাদক রজত রায় বলছেন, ‘‘গ্রন্থাগারে গড়ে ৪০ জন করে পাঠক আসতেন রোজ। প্রায় ১৪ হাজার বই রয়েছে। এর মধ্যে বহু বই-ই দুষ্প্রাপ্য। বহুবার গ্রন্থাগার দফতরকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।’’ লালগোলার এক গ্রন্থাগারিকের সেখানে একদিনের জন্য আসার কথা। কিন্তু তাঁরও দেখা মেলে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। বংশবাটিতে গ্রন্থাগার খোলেন ‘জুনিয়র লাইব্রেরি অ্যাটেন্ড্যান্ট’। সপ্তাহে দু’দিন সেখানে যান আহিরণের গ্রন্থাগারিক। আহিরণের জুনিয়র লাইব্রেরি অ্যাটেন্ড্যান্টকে পাঠানো হয় দু’দিনের জন্য ধুলিয়ানে পদ্মা পাড়ের গ্রাম দেওনাপুর গ্রন্থাগারে। বাকি চার দিন বন্ধ দেওনাপুরে। রঘুনাথগঞ্জ মহকুমা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক দু’দিন যান মির্জাপুর গ্রন্থাগারে। বাকি চার দিন বন্ধ মির্জাপুর গ্রন্থাগার। সাগরদিঘির দোহাল, গো-গ্রাম, শেখপাড়া এলাকার গ্রন্থাগারগুলির অবস্থাও তথৈবচ। ফলে পাঠকের পাশাপাশি কমছে সদস্যের সংখ্যাও। রঘুনাথগঞ্জ মহকুমা গ্রন্থাগারের কর্মী অলিপ দাস বলেন, ‘‘আগে মহকুমা গ্রন্থাগারে গড়ে ৪৯ জন পাঠক আসতেন। এখন তা নেমে এসেছে ২৩ জনে।’’ আগে জেলা গ্রন্থাগার বিভাগে একটি মাত্র কর্মী ইউনিয়ন ছিল। মূলত তা নিয়ন্ত্রণ করত বামেরাই। এখন সেই বাম ইউনিয়ন ভেঙে গজিয়ে উঠেছে তৃণমূলের সংগঠন। বাম সমর্থক গ্রন্থাগার কর্মী সংগঠনের জেলা সম্পাদক মতিউর রহমান বলছেন, ‘‘ কর্মীর ঘাটতিতে বহু গ্রন্থাগারেই অচলাবস্থা চলছে। গ্রন্থাগারে এমন নির্দিষ্ট কিছু খবরের কাগজ নেওয়া হয় যা পাঠকেরা পছন্দ করেন না। তাঁরা খাতায় নানা মন্তব্য লিখছেন। কিন্তু তাতে কারও কোনও হেলদোল নেই।’’

তৃণমূলের গ্রন্থাগার কর্মী সংগঠনের জেলা সভাপতি ফারুক শেখের দাবি, ‘‘জেলায় ১২টি গ্রন্থাগার বন্ধ বিশেষ পরিস্থিতির কারণে। কিছু গ্রন্থাগারে কর্মী না থাকায় সেখানে কোনও রকম ব্যবস্থা করে চালানো হচ্ছে। এই সমস্যা শীঘ্রই মিটে যাবে। ১৩টি গ্রামীণ গ্রন্থাগারকে কম্পিউটর দেওয়া হয়েছে। সমস্ত গ্রন্থাগারের নিজস্ব পাকা ভবন রয়েছে। গ্রন্থাগারগুলির উন্নয়নে আরও তিন কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে।’’

উন্নয়নের দাবি উড়িয়ে আহিরণের গ্রন্থাগারিক আশিসতরু ঘোষ বলছেন, ‘‘সুতির বংশবাটিতে একটি দেবোত্তর সম্পত্তির জায়গায় চলা মাটির ক্লাব ঘরে গ্রন্থাগার। সেখানে আলো বাতাস ঢোকে না। আহিরণে গ্রন্থাগার চলছে একটি ক্লাবের দোতলায় ভাঙা ঘরে। ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গ্রন্থাগার ভবন গড়তে স্থানীয় সাংসদের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।’’ জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক সুবোধ মাহাতো নিজে দুই জেলার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘২০১০ সালের পর থেকে কোনও নিয়োগ নেই। যত দিন যাচ্ছে কর্মীরা অবসর নিচ্ছেন। নিয়োগ না হলে সমস্যা মিটবে কী করে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

locked library No Staff Books
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE