Advertisement
E-Paper

খেলনার মতো তুবড়ে গেল গাড়িটা

জাতীয় সড়ক ধরে নিয়ম ভাঙার খেলাটা নতুন নয়। ভিড় এড়াতে কিংবা অন্যদের পিছনে পেলে এগিয়ে যাওয়ার নেশায় লেন ভেঙে উল্টোমুখে ঢুকে পড়ার নজির কম নেই। আর তার খেসারতও গুনতে হয় অহরহ। সেই তালিকার শেষ সংযোজন বল্লারপুরের কাছে লরি ও পুরলকারের সংঘর্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০১:৩৪
দুর্ঘটনাস্থলে পুলিশ বাহিনী। ডান দিকে, তালগোল পাকিয়ে যাওয়া পুলকার।

দুর্ঘটনাস্থলে পুলিশ বাহিনী। ডান দিকে, তালগোল পাকিয়ে যাওয়া পুলকার।

জাতীয় সড়ক ধরে নিয়ম ভাঙার খেলাটা নতুন নয়। ভিড় এড়াতে কিংবা অন্যদের পিছনে পেলে এগিয়ে যাওয়ার নেশায় লেন ভেঙে উল্টোমুখে ঢুকে পড়ার নজির কম নেই। আর তার খেসারতও গুনতে হয় অহরহ। সেই তালিকার শেষ সংযোজন বল্লারপুরের কাছে লরি ও পুরলকারের সংঘর্ষ। বৃহস্পতিবার সকালে ওই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছে তিন পড়ুয়া।

মাস কয়েক আগে এই লেন-ভাঙারই খেসারত গুনেছিল পশ্চিম দিনাজপুরের চাকুলিয়া। উল্টো দিক থেকে এসে পড়া লরির ধাক্কায় নিমেষে গুমড়ে-মচড়ে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল পড়ুয়া বোঝাই পুলকার’টা। মারা গিয়েছিল দশ জন।

জাতীয় সড়কে লেন ভেঙে গাড়ি চালানোর বলির তালিকায় সম্প্রতি তেলেঙ্গানার ঘটনাতেও মারা গিয়েছিল ১৭ জন স্কুল পড়ুয়া। এ বার ফরাক্কার কাছে বল্লারপুর।

স্কুল শুরু সকাল ৬.৪০ মিনিটে। ঘড়িতে তখনই সাড়ে ছ’টা। পথও কম নয়। তাই যানজট এড়াতে নিয়ম ভেঙে অন্য লেনে ঢুকে গিয়েছিল পুলকারটি। উল্টো দিন থেকে আসা লরিটির মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিল প্রায় নিমেষে। সদ্য সদলাকে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি কেউই।

পুলিশ জানাচ্ছে, ফরাক্কার ওই দুর্ঘটনায় পুলকারটিতে ছিল ৯ ছাত্রছাত্রী। দুর্ঘটনা প্রায় টিনের বাক্সের মতো তেবড়ে-তুবড়ে যাওয়া গাড়িটি থেকে চালক ও ওই ছাচ্রদের উদ্ধার করেন স্থানীয় গ্রামবাসীরাই। ধুলিয়ানের তারাপুর কেন্দ্রীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যায় ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্র বিজয়দীপ সরকার( ১২), অঙ্কুর সরকার (১১) এবং অষ্টম শ্রেণির সৌম্যক জৈন (১৪)। গুরুতর আহত আরও তিন ছাত্রছাত্রী স্বর্ণদীপা সরকার, কুন্দন সরকার ও রাজশ্রী সাহা-সহ পুলকারের চালক ভোতন দাসকে বহরমপুরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছে। বাকিদের অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সকলেরই বাড়ি সুতি থানার অরঙ্গাবাদে। দুর্ঘটনার পরেই বল্লালপুরে পথ অবরোধ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ, বেগতিক দেখে তখনকার মতো সরে পড়ে পুলিশও। এমনকী আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেনি তারা। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

হাসপাতালে ভর্তি নবম শ্রেণির ছাত্রী রাজশ্রী সাহা। সে বলে, “এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাই খুব দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছিল কাকু। হঠাৎ দেখি সামনে লরি।’’

প্রতি দিনই বল্লালপুরে বেইলি সেতু দিয়ে ফরাক্কায় যায় ওই গাড়িটি। এ দিন বল্লালপুর ঢোকার আগে ফোর লেনের লেনের রাস্তায় যানজট ছিল। সে জন্য পুলকারটি অন্য লেনে গিয়ে সেতুতে ওঠার চেষ্টা করে। তখনই সামনে এসে পড়ে লরিটি। পুলকারটির মালিক সুতি থানার মানিকপুরের বিদ্যুৎ দাস। তিনি জানান, স্কুল ছাত্র নিয়ে যেতে গাড়িটি ভাড়া খাটে। ১০ জন ছাত্র যাতায়াত করে। এমন টা যে হবে কে জানত।’’

চালক ভোতন, “বল্লালপুরে আগে আমাদের লেনের সামনে বিরাট যানজট ছিল। স্কুলে দেরি হয়ে যাচ্ছিল বলে ওই লেনে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু কি যে হয়ে গেল!’’

ফরাক্কার ওই বেসরকারি হাইস্কুলের অধ্যক্ষ কৃষ্ণকিশোর জয়সওয়াল অভিযোগ করেন, ‘‘একে রাস্তায় রাস্তায় যানজট, তার উপরে পুলকারের চালকেরা যে ভাবে গাড়ি চালায়, বলার নয়!’’ ফরাক্কার ওই বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, স্কুলেও দুরের ছাত্রদের যাতায়াতের দায়িত্ব তাদের নিজেদেরই করে নিতে হয়। এ ব্যাপারে গাড়ি ঠিক করেন অভিবাবকেরা। স্কুলের নিজস্ব বাস না থাকায় নিরুপায় অভিভাবকেরা তাই কখনও পুলকার কখনও ছোট তিন চাকার ভ্যান এমনকী লছিমনেরও উপরেই ভরসা করেন। জাতীয় সড়ক ধরে ভোর বেলায় নিরাপত্তাহীন অবস্থাতেই এক ঝাঁক কচি-কাঁচা নিয়ে স্কুলের দিকে পড়ি কী মরি করে ছুটতে থাকে ওই গাড়িগুলি। এক অভিভাবক কবুল করছেন, “বহু বেসরকারি স্কুলে ছাত্রদের যাতায়াতের জন্য লছিমন, ম্যাজিক ইত্যাদি গাড়িও ব্যবহার করা হয়। এই স্কুলেও তার ব্যতিক্রম নয়।’’ উদ্বিগ্ন মুখে তিনি জানাচ্ছেন, এ ছাড়া আর উপায় কী!

তবে এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকদের অনেকেই। তাঁদের কথায়, ‘‘ওই এলাকায় পুলিশ লরি আটকে যে ভাবে তোলা আদায় করে যে বেশিরভাগ লরিই দ্রুত জাযগাটা পেরিয়ে যেতে চায়। তার ফলেও অনেক সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে।’’ মুর্শিদাবাদ পুলিশ সুপার সি সুধাকর অবশ্য দাবি করেছেন, ওই এলাকায় সব সময়েই ট্রাফিক পুলিশ সজাগ থাকে। তা সত্ত্বেও লেন ভেঙে পুলকার কিংবা গাড়ি ঢোকে কী করে? তিনি বলেন, ‘‘বল্লারপুরে যানজট ছাড়াতেই পুলিশ সব সময় ব্যস্ত থাকে। কেউ ঢুকে পড়লে আর কী করা যাবে!’’

কিন্তু এ দিন দুর্ঘটনার পরে পুলিশ পালিয়ে গেল কেন? পুলিশ সুপার অবশ্য সে কথা মানতে চাননি। তাঁর দাবি, পুলিশ পালায়নি। বরং বাড়তি পুলিশ বাহিনী ছুটে গিয়েছিল ঘটনাস্থলে।’’— অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

Murshidabad Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy