Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বিজ্ঞপ্তি জারি করল রাজ্য

রানাঘাটে সিবিআই কবে থেকে, সংশয়

টানাপড়েন চলছিল গত চার দিন ধরে। নবান্নের তরফে দাবি করা হচ্ছিল, রাজ্যের আর্জিতে সাড়া দিয়ে সিবিআই রানাঘাট-কাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছে। এই মর্মে তারা চিঠিও পাঠিয়েছে। কিন্তু সিবিআই প্রথম থেকেই বলে আসছিল, নীতিগত ভাবে তদন্তভার হাতে নিতে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি জারি করে ওই আর্জি জানাতে হবে রাজ্যকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৮
Share: Save:

টানাপড়েন চলছিল গত চার দিন ধরে। নবান্নের তরফে দাবি করা হচ্ছিল, রাজ্যের আর্জিতে সাড়া দিয়ে সিবিআই রানাঘাট-কাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছে। এই মর্মে তারা চিঠিও পাঠিয়েছে। কিন্তু সিবিআই প্রথম থেকেই বলে আসছিল, নীতিগত ভাবে তদন্তভার হাতে নিতে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি জারি করে ওই আর্জি জানাতে হবে রাজ্যকে। শেষ পর্যন্ত সোমবার দিল্লি স্পেশ্যাল পুলিশ অ্যাক্টের ৬ নম্বর ধারায় বিজ্ঞপ্তি জারি করল রাজ্য সরকার। সেই বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি-সহ এই মামলা সংক্রান্ত বিবিধ তথ্য ও নথি দুপুরেই পৌঁছে গিয়েছে সিবিআইয়ের হাতে।

নিয়মমাফিক রাজ্যের ওই বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে ওই আইনের ৫ নম্বর ধারায় পাল্টা বিজ্ঞপ্তি জারি করার কথা কেন্দ্রের কর্মিবর্গ দফতরের। তবেই সিবিআই আনুষ্ঠানিক ভাবে তদন্ত ভার হাতে নিতে পারে। যদিও সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা কেন্দ্রের ওই বিজ্ঞপ্তি হাতে পায়নি। ফলে আজ, মঙ্গলবারও সিবিআইয়ের দল রাজ্যে আসবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। ফলে তারা কবে থেকে এই মামলার তদন্ত শুরু করবে, তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে রাজ্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অবশ্য সিবিআইয়ের চাহিদা মেনে তাদের জন্য গাড়ি, টেলিফোন, ফ্যাক্স ও কম্পিউটার-সহ পরিকাঠামোগত বিভিন্ন বন্দোবস্ত করে রেখেছে। সিবিআই নদিয়া ও কলকাতায় অস্থায়ী অফিসঘর চেয়েছে। তারও ব্যবস্থা রাজ্য করে রেখেছে।

সিবিআই সূত্রের খবর, সারদা-সহ অন্যান্য অর্থলগ্নি সংস্থার তদন্তে তাদের কলকাতা অফিসের বেশির ভাগ অফিসারই ব্যস্ত। ফলে এই মুহূর্তে রানাঘাটের তদন্ত ঠিক মতো চালাতে গেলে অন্য কোনও রাজ্য থেকে অফিসার নিয়ে আসার ভাবনাও রয়েছে। সিবিআই সূত্রের মতে, সন্ন্যাসিনী ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করতে দেরির পিছনে এটাও একটা কারণ।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, কোনও রাজ্য চিঠি লিখলেই সিবিআই তদন্ত শুরু করে দিতে পারে না। সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানোর প্রশ্নে রাজ্য সরকারের আবেদনের সঙ্গে অন্য যে বিষয়গুলি জানাতে হয় সেগুলি হল কেস ডাইরি, প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট এবং কেন রাজ্য সরকার সিবিআইকে দিয়ে ওই তদন্ত করাতে চাইছে। সিবিআই দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইন অনুযায়ী চলে। ওই আইনে সিবিআই নিজে থেকে কোনও রাজ্যে গিয়ে তদন্ত করতে পারে না। ওই আইন মেনে রাজ্য সরকারকে সিবিআইকে সেই অধিকার দিতে হয়। নবান্ন থেকে দিল্লি স্পেশ্যাল পুলিশ অ্যাক্টের ৬ নম্বর ধারায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে সেই অধিকার দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আমলাদের বক্তব্য, রাজ্যের নথি হাতে পাওয়ার পর সেগুলি এখন খতিয়ে দেখা চলছে। এর পরেই তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

সরকারি সূত্রের খবর, সিবিআইকে রানাঘাট তদন্তের ভার দেওয়ার বিষয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব দোলাচলে রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, ঘটনার পর দশ দিন কেটে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই এই ঘটনার তদন্তভার সিআইডি-র হাতে দিলেও তারা চূড়ান্ত ব্যর্থ। সিসিটিভির ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও দুষ্কৃতীদের এক জনকেও ধরতে পারেনি তারা। উল্লেখযোগ্য কোনও সূত্রেও বের করতে পারেনি। সিআইডি-র একাংশের দাবি, অপরাধীরা সকলেই বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারে। এই অবস্থায় এই মামলার তদন্তভার হাতে নেওয়ার আগে একাধিক বিষয় ভাবাচ্ছে সিবিআইকে। রাজ্য পুলিশের মতো এই সব এলাকায় তেমন যোগাযোগ বা ‘সোর্স নেটওয়ার্ক’ নেই তাদের। এ জন্য সিবিআইকে ভরসা করতে হবে অন্যান্য সংস্থার উপরে। কাজেই তদন্তে নামলেই যে সিবিআই সফল হবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই বলে জানাচ্ছেন কেন্দ্রের কর্তারাই।

একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, রানাঘাট-কাণ্ডে দশ দিন ধরে কিছু করতে না পেরে জনরোষের মুখে মামলাটি কেন্দ্রের ঘাড়ে ঠেলে দিয়ে বাঁচতে চাইছে রাজ্য। এর পর সিবিআই ব্যর্থ হলে কেন্দ্রের দিকে আঙুল উঠবে। বিষয়টি যে হেতু স্পর্শকাতর, তাই সব দিক ভেবেচিন্তেই পদক্ষেপ করতে চাইছে মোদী সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE