আলোহীন: জ্বলে না সৌরলণ্ঠন। নিজস্ব চিত্র
তিরতির করে বয়ে চলেছে ভাগীরথী। ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১২টা ছাড়িয়েছে। রোদে পুড়ছে চরাচর। নদীর পাশের গ্রামটি যেন ঘুমিয়ে রয়েছে। ঘরের বাইরে জনমনিষ্যির চিহ্ন নেই।
তারই মধ্যে নদীর ধারে গাছের ছায়ায় অল্পবয়েসিদের জটলা। সেখানেও আলোচনায় সেই তাপমাত্রা। তারই মধ্যে একজন বললেন, ‘‘গরম যতই বাড়ুক, আমাদের ভাগ্যে কি আর পাখার হাওয়া জুটবে? এখনও পর্যন্ত বিদ্যুৎই এল না গ্রামে!’’
জটলার জানা নেই ঠিক সেই সময় সেখান থেকে ৩০ কিমি দূরে কৃষ্ণনগরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে জেলা শাসক সুমিত গুপ্ত ঘোষণা করছেন, নদিয়ায় বিদ্যুৎহীন কোনও গ্রাম নেই। প্রকল্পের নাম ‘সবার ঘরে আলো।’
নাকাশিপাড়া ব্লকের ভাগীরথীর পাড়ের গ্রামটির নাম চরকুর্মিপাড়া। জেলা শাসকের ঘোষণার কথা জানাতেই ফুঁসে উঠলেন ওই যুবকেরা। জানালেন, বছর সাতেক আগে গ্রামে একবার বিদ্যুৎ আনার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে আর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
গ্রামে সাড়ে তিনশো আদিবাসি পরিবারের বাস। জনসংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, সাত বছর আগে গ্রামের বাইরে বেশ কিছু বিদ্যুতের খুঁটি পড়েছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত জমির উপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টানা হচ্ছিল বলে বাধা দেন জমির মালিকেরাই। বন্ধ হয়ে যায় কাজ। তার পরে বিকল্প কোনও উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন।
গত নভেম্বরে গ্রামে সৌরলন্ঠন দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু কিছু দিন চলার পর তা অকেজো হয়ে যায়। ফলে বর্তমানে আঁধার মুছতে ফের কেরোসিনের হ্যারিকেন-লণ্ঠনে ফিরে গিয়েছে গ্রাম। তবে যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে তাঁরা সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন। তার দৌলতেই পূর্বস্থলী এলাকা থেকে ভাগীরথী পেরিয়ে আসা কেবল লাইন কয়েকটা ঘরে ঢুকেছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চরকুর্মিপাড়ার পাশের গ্রাম উদয়চন্দ্রপুরের উপর দিয়ে বছর সাতেক আগে বিদ্যুতের খুঁটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত জমির ওপর দিয়ে ওই লাইন নিয়ে যেতে হবে। ব্যক্তিগত জমি, এবং বাগানের উপর দিয়ে লাইন টানা হচ্ছিল বলে উদয়চন্দ্রপুরের বাসিন্দারা বাধা দেন। চরকুর্মিপাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তার পরে প্রশাসন আর কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারেনি।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের মিনতি মাহাত বলছেন, “বিদ্যুতের জন্য সর্বত্রই ছুটেছি। কিন্তু গ্রামে বিদ্যুৎ এল না। অথচ শুনছি ঘোষণা হয়ে গিয়েছে, নদিয়ার সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে।”
নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, “একটি গ্রাম শতাংশের মধ্যে পড়ে না। যাতে দ্রুত ওই গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছয়, তা দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy