Advertisement
০৭ মে ২০২৪

বড়দিনে ঝলমলে ঝিলিকেরা

এগরোল আসে। খুশি মনে খায় রাধে। কিন্তু কোনও দিন রাধে কিংবা ঝিলিককে নিয়ে কেউ বিরক্ত হন না। শীতে চলে আসে গরম জামা, ক্রিম। গরমে পাউডার। দু’জনেই কবে যেন হাসপাতালের শিশুবিভাগের সকলের পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছে।

যিশু-দিবসে: কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

যিশু-দিবসে: কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

টেবিলে রাখা কেকে ছুরিটা চালাতেই ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে হুইলচেয়ারে বসে থাকা বছর নয়েকের রাধে। সবটা বুঝে উঠতে না পেরে চোখ নাচিয়ে রাধে বলে, ‘‘অ্যাই সুপার, তোদের এত আনন্দ কেন রে? কেকটা আমায় দে। খাব।’’

রাধের পাশের শয্যায় সারাদিন শুয়ে থাকে ঝিলিক। সে-ও কেকের তাকিয়ে। প্রায় ন’বছর আগে জন্মের দু’-তিন দিন পরে মা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। বহু চেষ্টা করেও তার পরিবারের খোঁজ মেলেনি। সেই থেকে ঝিলিকও নার্সমাসিদের যত্নে বড় হচ্ছে।

সোমবার রাধে ও ঝিলিককে নিয়ে মেতে উঠেছিল সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বড়দিনে সবাই আনন্দ করবে, আর রাধে-ঝিলিক পড়ে থাকবে হাসপাতালের এক কোণে! এমনটা আবার হয় নাকি? তাই সাতসকালেই চলে আসে ঢাউস কেক। রংবেরঙের বেলুন দিয়ে সাজানো হয় শিশু বিভাগ। রাধে ও ঝিলিককে পরানো হয় নতুন পোশাক।

মাস ছয়েক ধরে জেলা সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগে রাধে স্থায়ী বাসিন্দা। তার মা তাকে ফেলে গিয়েছে শান্তিপুরে। চাইল্ড লাইনের হাত ধরে অসুস্থ রাধের ঠাঁই হয়েছে এখানে। ঝিলিক পুরোপুরি সুস্থ না হলেও রাধে অনেকটাই সুস্থ। একা বসে থাকতে পারে হুইল চেয়ারে। সেখানে বসেই কড়া নজর রাখে গোটা ওয়ার্ডে। বেচাল দেখলেই রাধের বকুনি থেকে রেহাই পান না হাসপাতালের কেউই। কখনও সুপারকে দেখলে হুকুম করে, ‘‘কোথায় যাচ্ছিস সুপার। একটা এগরোল এনে দে।”

এগরোল আসে। খুশি মনে খায় রাধে। কিন্তু কোনও দিন রাধে কিংবা ঝিলিককে নিয়ে কেউ বিরক্ত হন না। শীতে চলে আসে গরম জামা, ক্রিম। গরমে পাউডার। দু’জনেই কবে যেন হাসপাতালের শিশুবিভাগের সকলের পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছে।

দিন কয়েক আগে এই হাসপাতালে এক শিশুর অন্নপ্রাশনের আয়োজন করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ বার বড়দিন। সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘‘ওরা ফুলের মতো। ওরা হেসে উঠলে আমরা খুশি।” সোমবার শিশুবিভাগে ভর্তি থাকা ৩৬ শিশুর মায়েদের হাতে কেক দেওয়া হয়। হাততালি দিয়ে রাধে বলে, ‘‘অ্যাই অমিতা, সবাইকে কেক দে। আমাকেও দে।’’ হাসতে হাসতে নার্স ইনচার্জ অমিতা পাঁজা বলেন, ‘‘ওদের ভাল না বেসে থাকা যায়! ওদের হাসিতেই তো সার্থক হল আমাদের বড়দিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Christmas Hospital Child Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE