Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খুচরো পয়সা নয়, বিজ্ঞপ্তি জারি মন্দিরেও

নিরীহ সাদা বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি লেখা ‘পঞ্চাশ পয়সা, এক টাকা ও দু’ টাকার কয়েন মন্দিরে দেবেন না’।

মন্দিরের বাইরে সেই বিজ্ঞপ্তি। নিজস্ব চিত্র

মন্দিরের বাইরে সেই বিজ্ঞপ্তি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ১৩:০৪
Share: Save:

বিশাল মন্দিরে ভক্তবৃন্দ দলে দলে উপস্থিত। একপাশে দুপুরের পংক্তিভোজনের জন্য রান্নাবান্না চলছে। অন্যদিকে একটানা গেয়ে চলেছেন সংকীর্তনের দল। মন্দিরের সিঁড়িতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতে গিয়ে ডান দিকের নোটিস বোর্ডে চোখ যেতেই ‘ধাক্কা’ খেলেন জগদ্বন্ধু মণ্ডল। নিরীহ সাদা বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি লেখা ‘পঞ্চাশ পয়সা, এক টাকা ও দু’ টাকার কয়েন মন্দিরে দেবেন না’।

হাতে রাখার দু’টাকার কয়েনটা সোজা পকেটে চালান করে দিলেন জগদ্বন্ধু। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তি অবাক করেছে তাঁকে। এতদিন বাস, টোটো, অটোয় উঠে খুচরো পয়সা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হত তাঁকে। কিন্তু মন্দিরে প্রণামী বাক্সে খুচরো পয়সা দেওয়া যাবে না, এমন তিনি কস্মিনকালেও শোনেননি। বাস্তবিক, ওই বিজ্ঞপ্তি অবাক করেছে জগদ্বন্ধুর মতো আরও অনেককে। অনেকে বিষয়টি নিয়ে কিঞ্চিৎ ক্ষুব্ধও। বেলডাঙার প্রান্তিক গ্রাম বেতবেড়িয়া। উল্টোদিকে হরিহরপাড়ার ঘোড়ামারা মহিষমারা। মাঝখানে ভাণ্ডারদহ বিল লাগোয়া এলাকায় ওই মন্দিরটি রয়েছে। সেখানেই দোল উৎসব উপলক্ষে গোবিন্দ মন্দিরে পুজোপাঠ, গ্রামীণ মেলা, নাম-সংকীর্তন চলছে। গত সোমবার ছিল উৎসবের শেষ দিন। উৎসবের দিনগুলিতে কয়েক লক্ষ দর্শনার্থী সেখানে হাজির হয়েছিলেন। ওই বিজ্ঞপ্তি তাঁদের অনেকেরই চোখ এড়ায়নি। মন্দিরে আসা দর্শনার্থীদের অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘মন্দিরে যাঁরা আসেন সকলের আর্থিক সামর্থ্য এক নয়। প্রণামী বাক্সে নোটের পাশাপাশি এক টাকা দু’টাকার কয়েন দেওয়ার লোকও কম নেই। এমন বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েছেন।’’ দর্শনার্থীদের অনেকেই অবশ্য বিজ্ঞপ্তি অগ্রাহ্য করেই প্রাণামী বাক্সে এক-দু’টাকার কয়েন রেখে দিয়েছেন।

প্রতিমা মণ্ডল নামে এক গ্রামবাসী বললেন, ‘‘মন্দিরে এসে কে, কী প্রণামী দেবেন, তা দাতার ইচ্ছাধীন। সেখানে এই দেবেন না, সেই দেবেন না বলাটা ঠিক কাজ নয়।’’ দশরথ রায় নামে আরেকজন বলেন, ‘‘এখানে এসে দেখলাম, খুচরো পয়সা নেওয়া হচ্ছে না। এতো ভারী বিপত্তি।’’

মন্দির কমিটির সম্পাদক দেবানন্দ এ নিয়ে বলেন, ‘‘কয়েক বছর ধরে খুচরো নিয়ে ঝামেলার শেষ নেই। গতবার আমরা চার বস্তা ৫০ পয়সা, এক টাকা, দু’টাকা। তা নিয়ে মহা সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। সবদিক চিন্তা করেই এই বিজ্ঞপ্তি দিতে বাধ্য হয়েছি।’’

মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি অমিত রায়ের দাবি, ভাণ্ডারদহ বিলে পানা থাকায় আগের মতো নৌকো চলাচল করে না। উৎসবের সময় পারানির টাকা বাবদ মাঝিদের কয়েক হাজার টাকা দিতে হয়েছে। অনুষ্ঠান করতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয় তাঁদের। সবই অনুদানে হয়। সেই কারণেই খুচরো পয়সা দিতে বারণ করা হয়েছে।

তবে মন্দির কমিটির আরেক অংশের দাবি, দর্শনার্থীরা অনেক সময় কয়েন ছুড়লে গায়ে লাগে। তা বন্ধ করতে এই সিদ্ধান্ত। তবে কারণ যাই হোক, বিজ্ঞপ্তি আতান্তরে ফেলে দিয়েছে অনেককেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coin Demonetisation Retailers খুচরো
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE