Advertisement
E-Paper

স্কুলের গণ্ডি না পেরিয়েই  পা কলেজে

এ দিন শ’দুয়েক পড়ুয়াদের নিয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করেন করিমপুর পান্নাদেবী কলেজ কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়ারা এসেছিল করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয়, করিমপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, যমশেরপুর বিএন হাইস্কুল থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০৭

বাড়ির কাছে কলেজ। কেউ দিদির সঙ্গে এসেছে নবীনবরণ বা সোশ্যালে। কেউ পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে কলেজ-মাঠে চার-ছয় হাঁকায়। কিন্তু কলেজে ‘ক্লাস’?

কথাটা শোনার পর একটু ‘নার্ভাস’ লাগছিল কান্ত দত্ত, বীরেশ্বর মণ্ডল, মৌমিতা সরকার, কুহেলি মণ্ডলদের। ওরা সকলেই দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। মঙ্গলবার দুপুরে দুরুদুরু বুকে ওরা ঢুকেছিল কলেজের ক্লাসরুমে। বিরাট বড় ঘর। ঢাউস ব্ল্যাকবোর্ড, প্রজেক্টর। রয়েছে সাউন্স সিস্টেম।

কেউ ফিসফিস করে বলল, ‘‘বাপ রে, এ যে দেখছি এলাহি ব্যাপার!’’ কারও গলায় রীতিমতো দুশ্চিন্তা, ‘‘হ্যাঁ রে, স্যারেরা পড়াটড়া ধরবে না তো?’’

পাশের জনকে কনুইয়ের আলতো ঠেলা দিয়ে কারও মন্তব্য, ‘‘আমি ভাই কিছু বলতে পারব না। এমনিতেই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।’’

আড়ষ্টতা কাটিয়ে দেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কৌস্তভ ভট্টাচার্য। হাসতে হাসতেই তিনি বললেন, ‘‘আগামী বছরেই তোমরা স্কুলের গণ্ডী পেরিয়ে কলেজে পা রাখবে। আগাম কিছু জানিয়ে দিতেই তোমাদের ডাকা হয়েছে। বুঝতে অসুবিধা হলে নির্ভয়ে প্রশ্ন করবে।’’ গোটা ক্লাসরুম যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এ দিন শ’দুয়েক পড়ুয়াদের নিয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করেন করিমপুর পান্নাদেবী কলেজ কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়ারা এসেছিল করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয়, করিমপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, যমশেরপুর বিএন হাইস্কুল থেকে।

কর্মশালার মূল বিষয় ছিল সিবিসিএস (চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম)। অর্থাৎ, পড়ুয়ারা নিজের ইচ্ছেমতো বিষয় পড়তে পারবে। থাকছে ‘কোর’, ‘ইলেকটিভ’ ও ‘ফাউন্ডেশন’-এর মতো কোর্স। সারা দেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পড়াশোনায় সমতা আনাই এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় এই ব্যবস্থা চালু করছে।

শিক্ষকদের বক্তব্যের পরে এ দিন শুরু হল প্রশ্নোত্তর পর্ব। করিমপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দিশা প্রামাণিক জানতে চায়, ‘‘প্রতি বছরের শেষে কি একটি করে পরীক্ষা দিতে হবে?’’ কলেজের ভূগোলের শিক্ষক প্রসেনজিৎ সাহা জানান, এখন থেকে কলেজে ছ’মাস অন্তর বার্ষিক পরীক্ষা অর্থাৎ বছরে দু’টো সেমিস্টার হবে। যমশেরপুর বিএন হাইস্কুলের দ্বৈপায়ন সরকারের প্রশ্ন, ‘‘আমি এমন এক বিষয় নিলাম সেটা কলেজে নেই। তা হলে কী হবে?’’ পদার্থবিদ্যার শিক্ষক রাহুল চৌধুরী বলেন, ‘‘গোটা ব্যবস্থাটা বাঁধা থাকবে একটা সুতোতেই। তোমার কলেজে সেই বিষয়টি না থাকলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তুমি অন্য কলেজ থেকেই গোটা বিষয়টি জানতে ও শিখতে পারবে।’’ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কৌস্তভ ভট্টাচার্য জানান, সম্প্রতি এক বৈঠকে কল্যাণীর উপাচার্য এ ব্যাপারে কলেজগুলোকে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেন। তাঁর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৩৭টি কলেজের মধ্যে করিমপুর প্রথম এমন কর্মশালার আয়োজন করল। আগামী দিনে আরও বেশি স্কুলকে ডাকা হবে।

খুব শীঘ্রই এমনতর কর্মশালার আয়োজন করতে চলেছে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া হাজি এ কে খান কলেজ। সেখানকার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চন্দ্রাণী পাল বলছেন, ‘‘এটা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। নতুন শিক্ষাবর্ষের আগেই আমরা স্থানীয় স্কুলগুলো নিয়ে এমন কর্মশালা করব।’’ করিমপুর কলেজ থেকে বেরিয়ে উচ্ছ্বসিত পারমিতা মণ্ডল, বর্ণালী প্রামাণিক, সৌরভ বিশ্বাস বলছে, ‘‘বিষয়গুলো আগাম জানতে পেরে ভালই হল। পরে হোঁচট খেতে হবে না। এ বার উচ্চশিক্ষা নিয়ে আগে থেকেই নিজের মতো করে পরিকল্পনা করে নিতে পারব।’’

Workshop College School Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy