Advertisement
০৪ মে ২০২৪
শংসাপত্র চাই, আবদার সদস্যের

বাপ-মা কে, আমিই নেতা

শান্তিপুর ব্লক অফিসে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের ওই আধিকারিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার, মুখে কালো কাপড় বেঁধে কাজ করলেন কর্মীরা।

প্রতিবাদ: মুখে কালো কাপড় বেঁধে কাজ করছেন এক কর্মী। নিজস্ব চিত্র

প্রতিবাদ: মুখে কালো কাপড় বেঁধে কাজ করছেন এক কর্মী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭ ১৩:০০
Share: Save:

শাসক দলের নেতা বলে কথা, তাঁর মাথায় আকাশ থাকতে পারে, অন্য কিছু নয়!

হাবেভাবে চালেচলনে সে কথাই এ যাবত বুঝিয়ে এসেছেন স্থানীয় আড়বান্দি পঞ্চায়েতের সদস্য কানাই দেবনাথ। তৃণমূলের নেতা হিসেবে এলাকায় তাঁর প্রতিপত্তি রয়েছে। সেই চেনা ঔদ্ধত্য নিয়েই বুধবার, শান্তিপুর ব্লক অফিসে এসেছিলেন তিনি।

এসেই আবদার, গ্রামের এক নাবালিকার জাতি শংসাপত্তি তুলে দিতে হবে তাঁর হাতে। সেই আবদার শুনে মৃদু আপত্তি জানিয়ে ছিলেন বর্ষীয়ান আধিকারিক প্রতুল প্রামাণিক। বলেছিলেন, ‘‘এটা হয় না, ওই নাবালকের বাবা বা মায়ের সই ছাড়া দেওয়া যাবে না স্যার।’’

অভিযোগ, প্রথমে বকাঝকা, তার পর গালমন্দ এবং শেষতক ‘তুই তোকারি’ করে কানাইবাবু প্রায় মারতে গিয়েছিলেন ওই আধিকারিককে। তবে, ব্লক অফিসের ওই আধিকারিক মেরুদন্ড সোজা রেখে জানিয়ে দেন, এ ভাবে শংসাপত্র দেওয়া যায় না। সেই লড়াইয়ে তিনি অবশ্য পাশে পেয়েছেন দলমত নির্বিশেষে দফতরের সহকর্মীদের।

শান্তিপুর ব্লক অফিসে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের ওই আধিকারিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার, মুখে কালো কাপড় বেঁধে কাজ করলেন কর্মীরা।

তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘কানাইবাবু এলাকার এক জনের সার্টিফিকেট নিতে এসেছিলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইনস্পেক্টর প্রতুলবাবু ওই ছাত্রীর বাবা-মা ছাড়া অন্য কারো হাতে সার্টিফিকেট দিতে অস্বীকার করেন। বিপত্তি বাধে তাতেই।’’

দফতরের এক কর্মী বলছেন, ‘‘কানাই দেবনাথ এসেই তড়পাতে থাকেন, ‘বাবা-মা’র দরকার হবে কেন, আমি তো এসেছি, আমায় চেনেন না!’’

এখানেই শেষ নয়, একপ্রস্ত চেঁচামেচির পরে প্রতুলবাবুকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তপন সরকারের চেম্বারে তলব করা হয়। সে ঘরে ঢুকে প্রতুলবাবু দেখেন সেখানেও হইচই বাধিয়েছেন কানাই। অভিযোগ, তপনবাবুর সামনেই ফের ওই সরকারি কর্মীকে গালমন্দ করা হয়।

খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই, বুধবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে প্রতিবাদের নিদ্ধান্ত নেন দফতরের অন্য কর্মীরা।

প্রতুলবাবু বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী আমি আবেদনকারী বা তার বাবা-মা ছাড়া কারও হাতে সার্টিফিকেট দিতে পারি না। তাও উপযুক্ত প্রমাণ দাখিল করা আবশ্যক। সেই কারণেই আমি ওই সদস্যকে সার্টিফিকেট দিতে অস্বীকার করি।” অভিযোগ অবশ্য মানছেন না কানাই। তিনি বলেন “সবটাই মিথ্যা। আমি শুধু জানতে চেয়েছিলাম, আমার কাছে রসিদ থাকা সত্বেও কেন সার্টিফিকেটটা দেওয়া হবে না।’’

তাহলে কি আইনের পথে থাকাটাই অপরাধ প্রতুলবাবুর? শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের তপন সরকার অবশ্য আড়াল করছেন কানাইকে, ‘‘আসলে ওই ছাত্রীটি অসুস্থ, আসতে পারছে না। তাই, পঞ্চায়েত সদস্য এসেছিলেন। না পেয়ে একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন।’’

তা হলে, নেতাদের উত্তেজিত হওয়ার ছাড়পত্র আছে?

বলাবাহুল্য, উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Leader Shantipur শান্তিপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE