Advertisement
০১ মে ২০২৪
চরের দাবি / ১
Khayramari River

খয়রামারির চরের ‘দখল’ নিয়ে গোলমাল বাড়ছে

হুগলির জিরাটের একটি চর নিয়ে গঙ্গার দুই পারের মানুষের মধ্যে টানাপড়েন তীব্র হয়েছে। অবশেষে নড়ে বসেছে প্রশাসন। কেন এই অবস্থা?

এ ভাবেই কাটা হয়েছে চরের মাটি।

এ ভাবেই কাটা হয়েছে চরের মাটি। ছবি: বিশ্বজিৎ মণ্ডল।

প্রকাশ পাল , অমিত মণ্ডল
কল্যাণী, বলাগড় শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫২
Share: Save:

গঙ্গা থেকে অবৈধ ভাবে মাটি কাটা এবং বালি তোলার অভিযোগ নিয়ে সরগরম হুগলির বলাগড় ব্লক। এ বার হইচই বেঁধেছে একটি চরকে ঘিরে। এর নেপথ্যেও মাটি!

জিরাট পঞ্চায়েতের চর খয়রামারিতে গঙ্গার ওই চর খাসজমি। সম্প্রতি খবর ছড়ায়, চরের ‘দখল’ নিতে আসবেন ও পারের নদিয়ার কল্যাণী ব্লকের গঙ্গাপারে লোকেরা। উত্তেজনা ছড়ায়। গত ১৪ জানুয়ারি বলাগড় থানার ওসি রাজকিরণ মুখোপাধ্যায়, সিআই শ্যামল চক্রবর্তী বাহিনী নিয়ে চরে যান।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, কল্যাণীর চাঁদুড়িয়া ২ পঞ্চায়েতের বাবুপাড়ায় শ’পাঁচেক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। ভুটভুটিও তৈরি ছিল। যদিও পুলিশ দেখে তাঁরা জিরাটে আসেননি। রাত পর্যন্ত পুলিশ চর পাহারা দেয়।

কেন এই পরিস্থিতি?

উত্তর লুকিয়ে চরেই। দেখা গেল, চরের জায়গায় জায়গায় গভীর করে মাটি কাটা। অভিযোগ, প্রায় দু’কিলোমিটার জুড়ে বেআইনি ভাবে চরের মাটি কাটা চলে। কল্যাণীর চাঁদুড়িয়া ২ পঞ্চায়েত এলাকার বহু গরিব মানুষ মাটি কাটার শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। অভিযোগ, পিছনে থেকে রাজনৈতিক কেষ্টবিষ্টুরা মুনাফা লোটেন। তাঁদের হাত ‘লম্বা’। চরে চাষ হয়। ফসল সমেত মাটি কেটে নেওয়া হয়। মাটির ট্রলার ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও দ্রুত ছাড়া পেয়ে যায় অভিযুক্তেরা। বহু বছর এমনই চলছে। চরের শিশু, আকাশমণি, জিলাপি, বাবলা গাছেও অবাধে কোপ পড়ে।

এলাকাবাসী জানান, গভীর রাতে ১০-১২টি ট্রলার ভেড়ে। এক-একটিতে ১০-১২ জন থাকে। মাটি, বালি বোঝাই করে নিয়ে যায়। অর্থাৎ একসঙ্গে একশো-দেড়শো লোক কাজ করে।

ওই বেআইনি কাজ নিয়ে মাসখানেক আগে পুলিশ-প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে চিঠি দেন জিরাটের পঞ্চায়েত প্রধান তপন দাস। এর পরেই প্রশাসনিক তৎপরতায় ওই কাজে লাগাম পরেছে। অনেকের ধারণা, তাতেই মরিয়া হয়ে চর দখলের পরিকল্পনা।

প্রায় আড়াই হাজার বিঘার চরে শ’তিনেক পরিবারের চাষ। এর বাইরেও বহু জমি পড়ে। নৃপেন রায় নামে এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘মাস তিনেক আগেই আমার পাটসমেত ১৫ কাঠা জমির মাটি কেটে নিয়ে গেল। হালে সর্ষের জমিও।’’ এক চাষির বক্তব্য, ‘‘ভয়ে প্রতিবাদ করি না। কিছু বললে হুমকি দেয়।’’ এলাকাবাসী জানান, বেশ কয়েক বছর আগে চর নিয়ে দু’পারের লোকজনের মারামারি হয়েছিল। গুলিও চলেছিল।

কল্যাণীর ওই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, তাঁদের দিকে গঙ্গার পার ভেঙে খয়রামারিতে চর গজিয়েছে। ফলে, তাঁরাই চরের দাবিদার। কিন্তু সেখানে চাষ করতে তাঁদের বাধা দেন স্থানীয়েরা। যুবক স্বপন বিশ্বাস বলেন, ‘‘চরের অনেকটা ভিতরে আমাদের অটলবিহারী বিদ্যাপীঠ ছিল। ছোটবেলায় ওই স্কুলেই পড়েছি।’’ ভাঙনে ওই স্কুল দু’বার সরে এখন চাঁদুড়িয়ার বিশ্বাসপাড়ায়। তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি সদানন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেই সমাধান চাইছি। তবে এত দিন সমাধান হয়নি।’’

১৪ জানুয়ারির ঘটনার পরে অবশ্য প্রশাসনের টনক নড়ে। গত বুধবার কল্যাণী ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা পুলিশ, কাঁচরাপাড়া, সরাটি ও চাঁদুড়িয়া ২ পঞ্চায়েতের প্রধান, স্থানীয় নেতৃত্ব এবং এলাকাবাসীকে নিয়ে বৈঠক করে। যাঁদের জমি ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে, এমন ১২ জনকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করতে বলা হয়। বৃহস্পতিবার ব্লক প্রশাসনের লোকজন এলাকায় যান।

কল্যাণীর এ তল্লাটের মানুষজন বলেন, চরের মাটি কাটতে যান তাঁরা বাধ্য হয়ে। না হলে পেট চলবে না। কেন? (চলবে)

তথ্য সহায়তা: বিশ্বজিৎ মণ্ডল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Balagarh Kalyani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE