Advertisement
E-Paper

সুনসান নদিয়া দেখে খুশি কংগ্রেস

কংগ্রেসের ডাকা বাংলা বন্‌ধে ব্যতিক্রমী ছবি দেখা গেল নদিয়ায়। জেলার প্রায় সর্বত্র বেসরকারি বাসের দেখা না মেলা, স্কুল-কলেজে নামমাত্র উপস্থিতির হার, দোকানপাঠ বন্ধ থাকার মতো একের পর ছবি দেখিয়ে জেলা কংগ্রেস নেতারা দাবি করেছেন বন্‌ধ সর্বাত্মক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৫ ০১:২৫
বন্‌ধে বন্ধ দোকানপাঠ। কৃষ্ণনগরে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

বন্‌ধে বন্ধ দোকানপাঠ। কৃষ্ণনগরে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

কংগ্রেসের ডাকা বাংলা বন্‌ধে ব্যতিক্রমী ছবি দেখা গেল নদিয়ায়। জেলার প্রায় সর্বত্র বেসরকারি বাসের দেখা না মেলা, স্কুল-কলেজে নামমাত্র উপস্থিতির হার, দোকানপাঠ বন্ধ থাকার মতো একের পর ছবি দেখিয়ে জেলা কংগ্রেস নেতারা দাবি করেছেন বন্‌ধ সর্বাত্মক। কিন্তু, জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের যা অবস্থা তাতে কোন সমীকরণে এই সাফল্য?

রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ বেশ কিছু টুকরো কারণ মিলে এটা সম্ভব হয়েছে। তাঁদের মত, ছাত্রখুনের প্রতিবাদে বন্‌ধ ডাকা হয়েছিল। সেটা কংগ্রেসের পক্ষে গিয়েছে। একই সঙ্গে ওই খুনের অভিযোগে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের নাম জড়িয়ে যাওয়া, কয়েক জন কর্মীর গ্রেফতার হওয়া বিপক্ষে থেকেছে শাসকদলের। ওয়াকিবহল মহলের মত, অন্য বারের মতো রাস্তায় নেমে বন্‌ধের বিরোধিতা করতেও দেখা যায়নি তৃণমূলকে।

জেলা কংগ্রেসের এক নেতার মত, পাশের জেলা মুর্শিদাবাদে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী নিজে যে ভাবে পথে নেমে সমর্থকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার রেশ এই জেলাতেও পৌঁছেছে। অধীরকে দেখে দেরিতে হলেও নীচু তলার কর্মীরা পথে নেমেছেন। একই সঙ্গে বন্‌ধ সফল করার দায় ছিল জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহার। তিনি ‘কুড়িয়ে-বাড়িয়ে’ কর্মী জোগার করে বন্‌ধের সমর্থনে পথে নেমেছিলেন। অনেকে আবার গোলমালের আশঙ্কায় পথে নামার ঝুঁকি নিতে চাননি। এ সবই কংগ্রেসের পক্ষে গিয়েছে। দীর্ঘ দিন পরে মঙ্গলবার রাস্তায় নেমে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন কংগ্রেস কর্মীরা।


স্ট্যান্ডেই দাঁড়িয়ে বাস। করিমপুরে কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।

এ দিনের বন্‌ধ আদৌ কতটা সফল হবে সে নিয়ে ধন্দে ছিলেন কংগ্রেসের জেলা নেতারাই। এক সময়ের দাপুটে নেতা নেতা শঙ্কর সিংহের সঙ্গে বর্তমানে প্রদেশ ও জেলা নেতৃত্বের একাংশের দূরত্ব এখনও রয়েছে। শঙ্করবাবু এখনও নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে! ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে জেলা নেতা— অনেকেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কোন ভাবেই ভাঙন ঠেকিয়ে রাখতে পারেননি জেলা নেতারা। অধীর চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব নেওয়ার পর একাধিকবার নদিয়ায় এসেছেন। তাতেও ভাঙনে বাঁধ দেওয়া যায়নি! কৃষ্ণগঞ্জ উপনির্বাচনেও প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছে। পুর-নির্বাচনে কংগ্রেস সব আসনে প্রার্থী প্রযন্ত দিতে পারেনি। সম্প্রতি পথ অবরোধ করায় জেলা সভাপতি-সহ একাধিক জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পুলিশ
জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাও করেছে পুলিশ।

এই অবস্থায় শাসকদলের নেতাদের অনেকেরই ধারণা হয়েছিল নদিয়ায় কংগ্রেস বুঝি সত্যিই সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে। জেলায় কংগ্রেসের বন্‌ধকে তাঁদের অনেকে আমলই দিতে চাননি। কিন্তু এ দিন অন্য ছবি দেখা গিয়েছে। জেলা সদর কৃষ্ণনগর-সহ নদিয়ার প্রায় সর্বত্রই বন্‌ধ এক প্রকার সফল হওয়ায় উচ্ছ্বসিত কংগ্রেস কর্মীরা। শেষ কবে কংগ্রেস কর্মীরা এ ভাবে রাস্তায় নেমেছিলেন তা মনে করতে পারছেন না জেলার অনেকেই।

এ দিন বেথুয়াডহরি, পলাশীতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন কংগ্রেস কর্মীরা। তাঁরা কার্যত পুলিশের চোখে চোখ রেখে গ্রেফতারের আশঙ্কাকে উপেক্ষা করে পথে নেমে অবরোধ চালিয়ে গিয়েছেন। সে কথা মেনেও নিয়েছেন জেলা সভাপতি অসীম সাহা। তিনি বলেন, ‘‘শেষ কবে কংগ্রেস এই ভাবে পথে নেমেছিল মনে পড়ছে না। ২০১১ এর পরে তো নয়ই। আজকের বন্‌ধের পরে কর্মীরা অনেকটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।’’ এ দিন সকালে বন্‌ধের সমর্থনে কৃষ্ণনগর শহরে মিছিল বের করেন কংগ্রেস কর্মীরা। বিভিন্ন জায়গায় পিকেটিং করেন। বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ তাঁরা আবারও মিছিল বের করে পোস্ট অফিস মোড় থেকে জেলা প্রশাসনিক ভবনের দিকে যান।

মঙ্গলবার জেলায় কোনও বেসরকারি বাস চলেনি। জাতীয় সড়ক দিয়ে শুধু কিছু দূরপাল্লার সরকারি বাস চলতে দেখা গিয়েছে। কৃষ্ণনগর-শিয়ালদহ রুটে লোকাল ট্রেন স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করলেও যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। শহরের দোকানপাট ছিল বন্ধ। বন্ধ ছিল আদালত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও ছাত্রছাত্রী না আসায় বেশির ভাগ স্কুলে এ দিন পঠনপাঠন ছিল বন্ধ। বেলার দিকে তৃণমূলের বাইকবাহিনী চাপড়ার কিছু স্কুলে গিয়ে বিকেল পর্যন্ত স্কুল খোলা রাখার জন্য হুমকি দিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ। এ দিন সরকারি অফিসে কর্মীদের উপস্থিতির হার ছিল স্বাভাবিক।

বন্‌ধের সমর্থনে এ দিন সকাল থেকেই করিমপুরে রাস্তায় নেমেছিল কংগ্রেস নেতৃত্ব। এলাকার বেশিরভাগ দোকান বন্ধ ছিল। সামান্য কিছু ফল কিংবা চায়ের দোকান খোলা ছিল। সারাদিন ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকলেও দেরিতে খুলেছে স্কুল, ডাকঘর। কোনও স্কুলেই এ দিন পড়ুয়াদের দেখা মেলেনি। তবে হাজির হয়েছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সকাল থেকে কংগ্রেস সমর্থকেরা পতাকা নিয়ে বন্ধের সমর্থনে শ্লোগান দেন। শিক্ষকদের স্কুলে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ডাকঘরের কর্মীরা সময়ে উপস্থিত হলেও বেলা বারোটার পরে অফিস খুলেছেন। কংগ্রেস নেতা তারক সরখেলের দাবি, ‘‘বন্‌ধ একশো শতাংশ সফল।’’

Nadia Congress strike bus karimpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy