ঠিকাদার এবং বিডিও- র মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে লালগোলার উন্নয়নমূলক কাজ থমকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাস্তা ঘাট তৈরি থেকে শুরু করে আরও নানা প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। এরজন্য দরপত্রও ডাকা হয়েছে। কিন্তু কোনও ঠিকাদার ওই দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেননি। ফলে ব্লকের উন্নয়ন থমকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ঠিকাদারদের দাবি, বকেয়া বিল না পেলে তাঁরা কোনও দরপত্রে অংশ নেবেন না। বিডিও ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে লিখিত ভাবে ৪৬ জন ঠিকাদার এ কথা জানিয়েছেন। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘর, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও রাস্তা নির্মাণ হয়ে গিয়েছে বছর খানেক আগে। কিন্তু সে কাজের বিল আজও মেলেনি। এমনটাই অভিযোগ ঠিকাদারদের।
বিল বকেয়া থাকার অভিযোগ মেনেও নিয়েছেন বিডিও স্বপ্নজিৎ সাহা। তিনি বলেন, ‘‘কোনও নির্মাণ কাজ শেষে হওয়ার পর সেই কাজের গুণমান পরীক্ষা করার পর ঠিকাদারের বিল মেটানো হয়। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর কোনও কোনও কাজ পরখ করে দেখা হয়নি। কিছু নির্মাণের মান খারাপ হয়েছে। ওই দু’টি কারণে বকেয়া টাকা মেটানো হয়নি।’’ লালগোলার ঠিকাদার সংগঠনের আহ্বায়ক রতন ঘোষ বলেন, ‘‘কাজের গুণগত মান খারাপের বিষয়ে বছর খানেকের মধ্যে একবারও কোনও ঠিকাদারকে বিডিও জানাননি। তা ছাড়া মান সঠিক আছে বলে সংশ্লিষ্ট বাস্তুকার কাজের বিল তৈরি করে বিডিওর কাছে পেশ করেছেন। সেই বিল বিডিও আটকে রাখায় ঠিকাদাররা টাকা পায়নি। তাঁর তুঘলকি আচরণের প্রতিবাদে ঠিকাদাররা টেন্ডার বয়কট করায় বিডিও এখন মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।’’
রতন ঘোষের দাবি, ওই কাজের বকেয়া টাকা ছাড়াও দেড় দু’বছর ধরে পড়ে আছে ‘সিকিউরিটি মানি’। সেই টাকাও মিলছে না। কিন্তু কেন টাকা মিলছে না, বিডিও সে ব্যাপারে কিছুই জানাননি। ঠিকাদার আইনুল হক লালগোলা পঞ্চায়েত ভবন লাগোয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়েছেন মাস আটেক আগে। আইনুল বলেন, ‘‘প্রকল্প ব্যয় ৮ লক্ষ ৯৭ হাজার ৩৯৫ টাকা। ওই টাকার একটি কানাকড়িও পাইনি। কয়েক বছর আগের অন্য ৩টি প্রকল্পের সিকিউরিটি মানি বাবদ মোট ২ লক্ষ ৫৮ হাজার বকেয়া পড়ে আছে। ১১ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। সুদে টাকা নিয়ে কাজ তুলেছিলাম। টাকা না পাওয়ায় এখন বিপাক পড়েছি।’’ ঠিকাদার প্রদীপ ভৌমিকের অবস্থা আরও সঙ্কটজনক। তিনি দেওয়ানসরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের বাথানপাড়ায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বাড়ি তৈরি সম্পূর্ণ করেন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে।
মাস তিনেক আগে ঘর নির্মাণের কাছ শেষ হয়েছে বলে গত বছরের ২৯ এপ্রিল বিডিওকে তিনি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। প্রদীপ ভৌমিক বলেন, ‘‘প্রকল্প ব্যয় ৬ লক্ষ ৫ হাজার টাকা। ওই টাকা চেয়ে এ পর্যন্ত মোট ৫ বার লিখিত ভাবে আর্জি জানিয়েছি। কিন্তু বিডিও নীরব। ফলে অর্থাভাবে বেহাল দশা। পাওনাদারদের তাগাদায় আমি জেরবার। অন্য কাজের সিকিউরটি মানিরও ৬৫ হাজার টাকাও বছর দু’য়েক থেকে ফেলে রেখেছেন বিডিও।’’ এ ছাড়াও অভিযোগ, কিছু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘর ও স্কুলের শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের টেন্ডার করলেও ঘর নির্মাণের জায়গাটাকুই নেই। বিডিও-র জবাব, ‘‘ঘর নির্মাণের জায়গা আছে, কি নেই তা না জেনেই কেন ঠিকাদাররা টেন্ডারে অংশ নিয়েছিলেন?’’ লালগোলার ঠিকাদারদের ই-টেন্ডার বয়কট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ওই ঠিকাদারদের বাদ দিয়েই টেন্ডার প্রক্রিয়া চলবে।’’
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীপশিখা হালদার বলেন, ‘‘ঠিকাদারদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান সূত্র বের করা হবে।’’ দীপশিখাদেবী বলেন, ‘‘বি়ডিও-র দীর্ঘসূত্রিতার জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকার কাজের দায়িত্ব বিডি-কে এড়িয়ে লালবাগের মহকুমা শাসককে দিয়েছেন জেলাশাসক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy