Advertisement
E-Paper

বিভাগীয় গ্রন্থাগার তোলায় বিতর্ক চলছেই কল্যাণীতে

বই কেন থাকবে কেবল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে? বিভাগীয় গ্রন্থাগারকে কেন বাতিল করা হবে? এই বিতর্ক ক্রমশ জোরালো হচ্ছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। গত বছরের গোড়ার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫টি বিভাগের প্রতিটি থেকেই বিভাগীয় গ্রন্থাগার তুলে দেওয়া হয়েছে।

পিনাকী গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:১০

বই কেন থাকবে কেবল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে? বিভাগীয় গ্রন্থাগারকে কেন বাতিল করা হবে? এই বিতর্ক ক্রমশ জোরালো হচ্ছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে।

গত বছরের গোড়ার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫টি বিভাগের প্রতিটি থেকেই বিভাগীয় গ্রন্থাগার তুলে দেওয়া হয়েছে। তখনই এই বিতর্কের শুরু। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যুক্তি, শিক্ষক-পড়ুয়াদের কথা ভেবেই বিভাগীয় গ্রন্থাগার তুলে সেই সব বই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে রাখা হয়েছে। শিক্ষক ও পড়ুয়াদের অনেকের দাবি, এই সিদ্ধান্তে তাঁদের কোনও সুবিধে হয়নি। বিভাগীয় গ্রন্থাগার থেকে কম ঝক্কিতে বই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যেত, ফটোকপির সুবিধে মিলত। তাই দাবি উঠছে বিভিন্ন বিভাগের নিজস্ব গ্রন্থাগার ফিরিয়ে আনার।

শিক্ষকদের একাংশ বলছেন, ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডেশন কাউন্সিল বা ‘ন্যাক’-এর শেষ বারের পরিদর্শনে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় গ্রন্থাগারের প্রশংসা করা হয়েছিল বলে খবর। তা হলে এমন সিদ্ধান্ত কেন? জনান্তিকে এক শিক্ষক জানালেন, বিষয়টি পুরোপুরি উপাচার্য রতনলাল হাংলুর মস্তিস্কপ্রসূত। তাই অসুবিধা সত্ত্বেও শিক্ষকরা কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলে বিরাগভাজন হতে চাইছেন না। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি উপাচার্য। কিন্তু দেড় বছর এই বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না কল্যাণীর। এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘বাধ্য হয়েই উপাচার্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ তাঁর কথায়, কিছুদিন আগে বিভাগীয় গ্রন্থাগারের বইগুলির হাল খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়। তখনই নজরে আসে অধিকাংশ বইয়েরই কোনও হদিশ নেই। বহু বই নষ্টের মুখে। একটি বিভাগে তো বাথরুমের সামনে ডাঁই করে বই রাখা হয়েছিল, জানালেন তিনি। উধাও হওয়া বহু বই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষকের ও পড়ুয়ার কাছে রয়ে গিয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। কিন্তু বই চুরি রুখতে লাইব্রেরিই তুলে দেওয়া কেমন কথা? কঠোর ভাবে রেজিস্টারের হিসেব রাখলেই তো হত? বর্ধমান বা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রমরমিয়ে চলছে বিভাগীয় গ্রন্থাগার। সেখানে বই দেওয়া-নেওয়াতেও তেমন কোনও সমস্যা নেই বলে জানালেন পড়ুয়ারা। তা হলে কল্যাণী সে পথ নিল না কেন?

উত্তরে যথেষ্ট কর্মী না থাকার যুক্তি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে কর্মীরা গিয়ে বিভাগীয় গ্রন্থাগারগুলি দেখভাল করতেন। কিন্তু, কর্মী সঙ্কটে তা নিয়মিত করা যাচ্ছিল না। এক আধিকারিকের কথায়, বিভাগীয় গ্রন্থাগার তুলে দিয়ে সে সমস্যা যেমন এড়ানো গেল, তেমনি বইচুরির অভিযোগেও রাশ টানা গেল। এমন যুক্তিকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক শিক্ষক। তাঁর টিপ্পনি, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠলে আমরা কি গোটা পুলিশ বিভাগটা তুলে দেব?’’

বিভাগীয় গ্রন্থাগার তুলে দেওয়ায় পড়ুয়াদের গ্রন্থাগার ব্যবহারের অভ্যাস ব্যাহত হবে, এই যুক্তিও মানতে রাজি নন কর্তৃপক্ষ। গ্রন্থাগারে পাঠের অভ্যাস গড়ে তুলতে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নিয়েছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কেমন? এক, সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। আগে সকাল এগারোটা থেকে ছ’টা পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা থাকলেও এখন তা বাড়িয়ে সকাল দশটা থেকে রাত আটটা করা হয়েছে। দুই, লাইব্রেরিতে এসে বই পড়ায় আগ্রহ বাড়াতে ‘রিডিং রুম’ শীততপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। তিন, বই বাছাইয়ের ঝক্কি এড়াতে চালু করা হয়েছে ‘ওপেন অ্যাকসেস’ ব্যবস্থা। এই সব সুবিধার কথা স্বীকার করে নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পড়ুয়াদের প্রশ্ন, বিভাগীয় গ্রন্থাগার রেখেও কি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে এই সব সুবিধে তৈরি করা যেত না?

Controversy library issue Kalyani teacher kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy