রাস্তাঘাট, বাজার সব ফাঁকা থাকলেও মুরগির মাংসের দোকানে ছিল ভিড়। রবিবার কৃষ্ণনগর পাত্রবাজারে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
গত কয়েক দিনের মুরগীর মাংসে করোনার গুজব আর রসনার ভীতি কাটিয়ে বাঙালি ফের ফিরেছে রবিবার দুপুরের মাংস-ভাতে। রবিবার জনতা কার্ফুর দিনে এলাকার বেশ কিছু জায়গায় ভাল পরিমাণে গোটা মুরগি ও কাটা মুরগির মাংস বিক্রি হল।
বিশ্ব তথা দেশ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর বেশ কিছু দিন আগে থেকে মুরগির মাংস খাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল সাধারণ মানুষ। গুজবের জেরে কোথাও কোথাও পোলট্রি মালিক এবং মুরগির মাংস বিক্রেতাদের ব্যবসা প্রায় লাটে উঠতে বসেছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যে অকারণ আতঙ্ক গেঁথে বসেছিল— মুরগির মাংস খেলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে! যে কারণে বাজারে গিয়ে ক্রেতারা কম দামের পোলট্রির মাংস কেনা বাদ দিয়ে এক রকম বাধ্য হয়েই বেশি দামের খাসির মাংস কেনার দিকে ঝুঁকছিল। এতে আরও বেশি করে দামের পারদ চড়েছিল খাসির মাংসের। অন্য দিকে মুরগির মাংসের চাহিদা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। যে মুরগির মাংস ১৪০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি হত, যত দিন এগিয়েছে, তার দাম কমে দাঁড়িয়েছে ঠেকেছে কিলো প্রতি ১২০ টাকা, ৮০ টাকা, ৫০ টাকায়!
স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিস্থিতিতে চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়েন মাংস বিক্রেতারা। সরকারি ভাবে ও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়, মুরগির মাংস থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা নেই। তবুও কাজের কাজ হচ্ছিল না। কিন্তু জনতা কার্ফুর দিন আচমকাই দেখা গেল, মুরগির মাংসের দোকানে লম্বা লাইন পড়েছে।
এলাকার পোলট্রি-ব্যবসায়ী ও মাংসবিক্রেতারা জানাচ্ছেন, রবিবার মানুষ লাইন দিয়ে মাংস কিনেছেন। এক মুরগির মাংসের বিক্রেতা বলেন, ‘‘আমাদের কারও কারও কাছে যে মুরগি ছিল, তা নিয়ে ভীষণ সমস্যার মধ্যে পড়েছিলাম। হঠাৎ করে কেন জানি না জনতা কার্ফুর দিনে সে সব বিক্রি হয়ে গেল। কিছু মানুষ সকাল হতেই লাইন দিয়ে গোটা মুরগি, কাটা মুরগির মাংস নিয়ে গেলেন।’’ তিনি আরও জানান, এ দিন তেহট্টে গোটা মুরগি ৪৫ টাকা কিলোগ্রাম দরে এবং কাটা মুরগি ৭০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি করা হয়েছে।
এলাকার বাসিন্দারাও স্বীকার করে নিচ্ছেন জনতা কার্ফুর দিনে মুরগির মাংস কেনার ধুম পড়ার বিষয়টি। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘বাজারঘাট থেকে গোটা এলাকা নিস্তব্ধ থাকার কারণে আমরা গোটা পরিবার বাড়িতেই ছিলাম। কথাপ্রসঙ্গে মুরগির মাংস কেনার কথা ওঠে। আমার মতো অনেকেই এ দিন করোনা-গুজব উড়িয়ে দিয়ে মুরগির মাংস কিনেছেন।’’
তাঁর আরও যুক্তি, এলাকায় রাজনৈতিক দল বন্ধ ডাকলে তখনও বেশির ভাগ মানুষ পরিবারের সঙ্গে বাড়িতে মাংস খেয়েদেয়ে সময় কাটান। এ দিনও সে ভাবেই কাটিয়েছেন তাঁরা। তবে মন থেকে একেবারে ভয়ও কাটেনি মুরগি আর করোনা-সংক্রমণ সংক্রান্ত গুজব নিয়ে, সে কথাও জানাতে ভোলেননি।
তবে কি জনতা কার্ফুর জেরে দোকান-বাজার, শপিংমল, প্রেক্ষাগৃহ, পার্ক, রেস্তরাঁ-হোটেলের মতো সব বিনোদনের আয়োজন বন্ধ থাকাতেই মানুষ ফের মাংস-ভাতের দিকে ঝুঁকেছেন? সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy