Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Coronavirus

গাড়ির খরচ দিয়ে শ্রমিক নিভৃতবাসে ৮ শ্রমিক

ছ’দিন আগে বিহারের গয়া থেকে হেঁটেই রওনা দিয়েছিলেন পলাশির সর্দারপাড়ার আট নির্মাণ শ্রমিক। বুধবার সকালে পলাশি পৌঁছে তাঁরা মীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সন্দীপ পাল
কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ০২:৫৬
Share: Save:

ক’দিন আগেই ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের বাড়িতে নিভৃতবাসে (কোয়রান্টিন) রাখতে হিমশিম খাচ্ছিল জেলা প্রশাসন। অথচ ভিন্ রাজ্য থেকে এসে নিজেরাই নিভৃতবাসে যেতে চাওয়া শ্রমিকদের কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বটুকু নিল না জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

ছ’দিন আগে বিহারের গয়া থেকে হেঁটেই রওনা দিয়েছিলেন পলাশির সর্দারপাড়ার আট নির্মাণ শ্রমিক। বুধবার সকালে পলাশি পৌঁছে তাঁরা মীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। তাঁদের আবেদন, বাড়িতে একটিই ঘর। সেখানে ফিরলে তাঁরা পরিবারের অন্যদের বিপদে ফেলতে পারেন। তাই তাঁরা নিভৃতবাস কেন্দ্রের মেয়াদ কাটিয়ে তবেই বাড়ি ফিরতে চান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কালীগঞ্জ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দাবি করেন, তাঁর এলাকায় ওই শ্রমিকদের রাখার ব্যবস্থা নেই। চাইলে তাঁরা কৃষ্ণনগরে রুইপুকুর কর্মতীর্থে যেতে পারেন। কিন্তু সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা তিনি করেননি। নিজেদের টাকায় গাড়ি ভাড়া করেই নিভৃতবাস কেন্দ্রে পৌঁছেছেন কাজহারা ওই শ্রমিকেরা।

ওই নির্মাণ শ্রমিকেরা জানান, কিছুটা হেঁটে কিছুটা ছোট গাড়ির পিছনে চেপে তাঁরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এসে পৌঁছেছিলেন মুর্শিদাবাদের রামনগর ঘাটে। নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় রাতটা সেখানেই কাটান। পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্যে নৌকার ব্যবস্থা করে বুধবার সকালে তাঁরা পলাশি পৌঁছন। বিশাল সর্দার নামে এক শ্রমিক বলেন, “খুব কষ্ট করে, নানা জায়গায় ঘোরাঘুরি করে এসে পৌঁছেছি। পুলিশ অনেক সময়ে সাহায্য করেছে, তবে অনেক সময়ে কোনও খাবারই পাইনি।“

বাকি সঙ্গীদের হয়ে বিশাল বলেন, “আমাদের সকলের বাড়িতে একটা করে ঘর। নিজেকে আলাদা রাখার উপায় নেই। তাই আমরা চাই, পরীক্ষা করে সুস্থ হয়ে বাড়ি যেতে। তাই আমরা কোয়রান্টিন সেন্টারে আশ্রয় চেয়েছিলাম।“ ঘটনা হল, কালীগঞ্জেই পানিঘাটা কর্মতীর্থে নিভৃতবাস কেন্দ্র করার কথা তালিকা দিয়ে জানিয়েছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। যদিও আজও সেই কর্মতীর্থ তালাবন্ধই পড়ে আছে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, কালীগঞ্জ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) তিমিরকান্তি ভদ্র তাঁদের নিভৃতবাসের ব্যবস্থা না করে উল্টে কৃষ্ণনগর চলে যেতে বলেন। তাঁদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতেও তিনি রাজি হননি। বিশাল বলেন, “বাধ্য হয়ে আট জন মিলে আড়াইশো টাকা করে দিয়ে দু’হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে আমরা কৃষ্ণনগরে কোয়রান্টিন সেন্টারে এসেছি।“

বিএমওএইচ-এর দাবি, “কিছু দিন হল, পানিঘাটার কর্মতীর্থকে কোয়রান্টিন সেণ্টার থেকে আইসোলেশন সেণ্টারে রূপান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।“ যদিও সেই উচ্চতর স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু হওয়া দূরে থাক, সেই কেন্দ্র সামলানোর জন্য ডাক্তার, নার্স, খাবার-দাবারের ব্যবস্থা কিছুই এখনও পর্যন্ত হয়নি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এমনকি বিষয়টি ঠিক মতো মনেও করতে পারেননি। সন্ধ্যায় তিনি শুধু বলেন, “কী জানি, খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। ওঁদের কেন ওখানে রাখা গেল না, বিএমওএইচ-এর কাছে জানতে চাইব।“

যদি নিভৃতবাসের পরিকাঠামো প্রস্তুত না-ও থাকে, কাজহারা শ্রমিকদের কৃষ্ণনগরে পাঠানোর দায়িত্ব নিল না কেন স্বাস্থ্য দফতর? বিএমওএইচ-এর যুক্তি, “মীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য কোনো আ্যাম্বুল্যান্স নেই। তা ছাড়া আইসোলেশেন সেন্টারে পাঠানোর জন্য গাড়ি দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও কোয়রান্টিন সেণ্টারে গাড়ি করে পাঠানোর কোনও নির্দেশ নেই।“ রাতে জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, “ঠিক কী ঘটেছে জানতে আমাদের কর্মীরা রুইপুকুর কোয়রান্টিন সেন্টারে গিয়ে ওই শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।“

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Palashi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE