Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কান্দিতে ম্যাজিকের নাম ‘রায় দম্পতি’

কংগ্রেস ও তৃণমূল— দু’দলেরই দাবি, তাদের হাতে রয়েছে ‘ম্যাজিক সংখ্যা’। তলবি সভার ভোটাভুটিতে জিতে বোর্ড যে তারাই গড়বে—দাবিটা কংগ্রেসের সঙ্গে শাসক দল এক সুরে গেয়েও আসছে দিন কয়েক ধরে। তবে, আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত কান্দি কার—সে প্রশ্নের জট যে খুলছে না, আড়ালে, ঘনিষ্ঠদের কাছে সে কথা কবুল করছেন দু’দলের তাবড় নেতারা।

অপূর্ব সরকার এবং গৌতম রায়।—নিজস্ব চিত্র।

অপূর্ব সরকার এবং গৌতম রায়।—নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক সাহা
কান্দি শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৫৭
Share: Save:

কংগ্রেস ও তৃণমূল— দু’দলেরই দাবি, তাদের হাতে রয়েছে ‘ম্যাজিক সংখ্যা’। তলবি সভার ভোটাভুটিতে জিতে বোর্ড যে তারাই গড়বে—দাবিটা কংগ্রেসের সঙ্গে শাসক দল এক সুরে গেয়েও আসছে দিন কয়েক ধরে। তবে, আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত কান্দি কার—সে প্রশ্নের জট যে খুলছে না, আড়ালে, ঘনিষ্ঠদের কাছে সে কথা কবুল করছেন দু’দলের তাবড় নেতারা।

কারণ, ওই পুরসভার যাদুদণ্ড রয়ে গিয়েছে যাঁদের হাতে সেই ‘রায় দম্পতির’ কোনও খোঁজ নেই। ফোনে কথা বললেও তাঁরা জানাচ্ছেন না, রয়েছেন কোথায়, ভোটই বা দেবেন কোন পক্ষে। বাম সমর্থিত ওই দুই নির্দল কাউন্সিলরের দিকেই তাই তাকিয়ে কান্দির কংগ্রেস-তৃণমূল।

মাস আটেক আগে, পুর নির্বাচনে ১৮টি আসনের মধ্যে ১৩টি‌ জিতেছিল কংগ্রেস। তৃণমূল ও বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা জেতেন যথাক্রমে তিনটি ও দু’টি আসন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বোর্ড গঠনের পর থেকেই অবশ্য কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছিল কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা। গত বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌতম রায়কে উপপ্রধান করা নিয়েই য়ে মন কষাকষির শুরু তারই পরিণতি গৌতমবাবুর দলত্যাগ। গৌতমকে সরিয়ে চেয়ারম্য়ান হয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব সরকার। ‘দু’হাতে দুর্নীতি করতে পারবে বলেই আমাকে সরিয়েছিল’— তোপ দেগে গৌতম শুধু দলই ছাড়েননি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর আনুগামী চার কাউন্সিলরকেও।

ফলে দু’পক্ষের আসন সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছিল আট। এবং বোর্ড দখলের প্রশ্নে সেই ম্যাজিক সংখ্যা হয়ে উঠেছিলেন ওই রায় দম্পতি, দেবজ্যোতি ও সান্ত্বনা।

অনাস্থা আনার পর থেকেই কান্দি পুরসভার রাজনীতিতে নাটকের শুরু। অনাস্থা প্রস্তাবের কয়েকটি সই জাল রয়েছে-এই দাবি তুলে অপূর্ববাবু হাইকোর্ট‌ের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট জানায়, নিয়ম অনুযায়ী অনাস্থা প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। তারই অঙ্গ হিসেবে আগামী কালের তলবি সভা। তৃণমূলের দাবি, কংগ্রেসের দলত্যাগী পাঁচ ও নির্দল দুই কাউন্সিলরের সমর্থন তাদের সঙ্গে রয়েছে। এ ছাড়াও তলে তলে আরও এক কংগ্রেস কাউন্সিলর অনাস্থা প্রস্তাবের সমর্থনে ভোট দেওয়ার লিখিত অঙ্গীকার করেছেন। ফলে, ১১ জনের সমর্থনে তারা বোর্ড গড়বে। বেশ কয়েকদিন ধরে করে আসা তৃণমূলের এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে মঙ্গলবার জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস জানান, বাম সমর্থিত নির্দল কাউন্সিলর সান্ত্বনা রায়কে উপ-পুরপ্রধান করা হবে। তাঁকে কংগ্রেস সমর্থন দেবে। অবশ্য দিনকয়েক ধরে ওই নির্দল কাউন্সিলর‌ দম্পতির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগই করা যাচ্ছে না। বুধবার এক যুবক কনফারেন্সের মাধ্যমে মিনিট খানেকের জন্য দেবজ্যোতিবাবুর সঙ্গে সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন। তিনি এ দিন খোলসা করে কিছু জানাতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন “আমরা পুরপ্রধানের অপসারণ চেয়েছিলাম। তাই বলে তৃণমূলকে বোর্ড গড়তে সাহায্য করতে পারব না। তৃণমূলের তিন জন কাউন্সিলর রয়েছেন। আর আমরা দু’জন নির্দল কাউন্সিলর। তৃণমূল তিন জনকে নিয়ে পুরসভা দখলের কথা ভাবতে পারলে, আমরাই বা কেন পারব না? অধীর চৌধুরী ও অপূর্ব সরকাররা আমাদের যোগ্য সম্মান দিয়েছেন।” তবে এ দিন সান্ত্বনাদেবীর সঙ্গে কোনওভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি। ফলে তিনি কী করব‌েন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। সূত্রের খবর, সপ্তাহ খানেক আগে কংগ্রেসের এক কাউন্সিলর ওই তলবি সভায় তৃণমূলের সমর্থনে ভোট দেব‌েন—এই মর্মে অঙ্গীকারপত্রে সই করেছেন। মাস খানেক আগে ওই কংগ্রেস কাউন্সিলর দাবি করেন, সালারের ব্লক তৃণমূল সভাপতি তাঁর চালকল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ওই ইস্যুতে সরব হন জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস। এ দিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের দাবি, ‘‘ব্যবসা বাঁচাতে তিনি তৃণমূলের ডাকা অনাস্থা প্রস্তাবের সমর্থনে ভোট দেবেন।’’ এই অবস্থায় শেষ পর্যন্ত কে কার দিকে ঝুঁকবেন তা কেউই আগাম অনুমান করতে পারছেন না। গৌতমবাবু অবশ্য দাবি করছেন, “দুই নির্দল কাউন্সিলর আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। কংগ্রেস অহেতুক এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। নির্দলদের সমর্থনে আমরাই বোর্ড গড়ব।’’ আবার ক‌ংগ্রেসও পাল্টা দাবি করছেন, নির্দলরা তাদের দিকে রয়েছেন। কে কার দিকে রয়েছেন, তা জানতে আরও ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।

তবে প্রশ্ন থাকছে এর পরেও— কংগ্রেসেরই এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘আমাদের আট কাউন্সিলর ভোটটা আমাদেরই দেবেন তো?’’ কাল বিকেল পর্যন্ত সে অপেক্ষাতে থাকবেন কংগ্রেস নেতারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kaushik saha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE