Advertisement
০৭ মে ২০২৪

কফিনে দীপক ফিরলেন গ্রামে

পাচারকারীদের আটকাতে গিয়ে তাদের গাড়ির চাকায় পিষে যাওয়া শরীরটা নিশ্চুপ কফিনে। গ্রামবাসীদের দাবি, এক বার খুলে দেওয়া হোক কফিনের ঢাকা, গ্রামের ছেলেকে এক বার দেখতে চান তাঁরা।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাঁসখালি শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:৫০
Share: Save:

গুমরে মরা আকাশ থমথমে গ্রাম।

টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যেই খান আটেক গাড়ি ধূসর কফিন নিয়ে গ্রামে ঢুকতেই ফুঁপিয়ে উঠল গ্রামটা— সে এসেছে গো! সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমানডান্ট দীপক মন্ডলের (৪৫) গ্রাম তারকনগর। আশপাশের আর পাঁচটা গ্রামেরও বিড় ভেঙেছে মাঠে, স্কুল বাড়ির ছাদে, সরু গ্রামীণ রাস্তায়। এক বার মানুষটাকে দেতে চান তাঁরা।

পাচারকারীদের আটকাতে গিয়ে তাদের গাড়ির চাকায় পিষে যাওয়া শরীরটা নিশ্চুপ কফিনে। গ্রামবাসীদের দাবি, এক বার খুলে দেওয়া হোক কফিনের ঢাকা, গ্রামের ছেলেকে এক বার দেখতে চান তাঁরা।

বাংলাদেশ সীমান্ত ছোঁয়া হাঁসখালির তারকনগর। রাত নামলে অন্ধকারে এই গ্রামের রাস্তা দিয়ে গাড়ি বোঝাই গরু পাচার হতে দেখেছে এলাকার মানুষ। দেখেছে তাদের জঙ্গি-দাপট। পাশের গ্রাম, রামনগর। মাস কয়েক আগে রাতের অন্ধকারে গরু পাচার রুখতে গিয়ে পাচারকারীদের হাঁসুয়ার আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছিলেন এক জওয়ান। রামনগরের রবীন বিশ্বাস বলছেন, “চোখের সামনে কত বার যে দেখেছি বিএসএফকে তাড়া করছে ওরা!’’ছবিটা প্রায় একইরকম নদিয়া-মুর্শিদাবাদের দীর্ঘ সীমান্ত ছোঁয়া এলাকায়। কখনও নদিয়া কখনও বা পড়শি মুর্শিদাবাদ— পাচারকারীদের হাতে সীমান্ত প্রহরীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় এখন আর অবাক হন না আটপৌরে গ্রামবাসীরা। গড় গড় করে তাঁরা হিসেব দেন— ২০০৫ সালে তেহট্টের ইলশেমারী সীমান্তে নিহত হয়েছিলেন দুই জওয়ান। চাপড়ার হাটখোলাতেও একই ভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন ব্যাটেলিয়নের সেকেন্ড ইন কমান্ডান্ট। তাঁদের আস্তিনে রয়েছে, মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি, রানিনগর সীমান্তের একের পর এক পাচারকারী দৌরাত্ম্যের গল্প। শীতের কুয়াশা আর বর্ষার পাট, পাচারকারীদের বড় হাতিয়ার। কুয়াশা আর পাট খেতের আড়াল থেকেই তাই হামলা ছুটে আসে বিএসএপের উপর।

এ সব এত দিন দাদার কাছে শুনেছেন দীপকের ভাই-বোনেরা। তাঁদেরই এক জন বলছেন, ‘‘দাদার কাছে শুনতাম, কী করে ওরা নিশ্চুপে ঝাঁপিয়ে পড়ে সীমান্তের জওয়ানদের উপর। কিন্তু দাদা তো কমান্ডান্ট তাঁকেও এ বাবে শিকার হতে হল!’’ ছোট বেলা থেকেই ডানপিটে দীপক। বিএসএফে তাঁর প্রথম কাজ কল্যাণী সেক্টরে। সেখান থেকে ত্রিপুরার মনারচক।

সেখানেই কর্তব্যরত অবস্থায় গোরু পাচারকারীদের আটকাতে গেলে তাকে ধরে বেধড়ক মারধর করা হয়। জনা পাঁচিশেক পাচারকারী তাকে লাঠি, ইট ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপায়। পাচারকারীদের একটি গাড়ি তাকে পিষে দিয়ে পালায়। উদ্ধার করে আগরতলার হাসপাতাল তার পর, কলকাতায় নিয়ে এসে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার সেখানেই মারা যান দীপক মণ্ডল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE