Advertisement
০৭ মে ২০২৪
বিয়ে হবে না, ভয়ে বাদ সেধেছিলেন বাবা

সাইকেলেই আঁধার পেরিয়ে দিল্লিতে নাজিরা

মেয়ে দারুণ সাইকেল চালায়। কিন্তু বাবার মুখ ভার। রাজ্যস্তর পেরিয়ে দিল্লিতে লড়তে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে মেয়ে। কিন্তু বাবা যেতে দিতে নারাজ— সাত দিন বাড়ির বাইরে রাত কাটালে যে বিয়েই হবে না ওর!

সাফল্য: দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামের ভেলোড্রোমে ট্রায়াল এলিজিবিলিটি টেস্টে সফল হয়েছে নাজিরা (বাঁ দিকে)। তার প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে ন্যাশনাল সাইক্লিং অ্যাকাডেমি। সেখানেই প্রশিক্ষণের ফঁাকে। নিজস্ব চিত্র

সাফল্য: দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামের ভেলোড্রোমে ট্রায়াল এলিজিবিলিটি টেস্টে সফল হয়েছে নাজিরা (বাঁ দিকে)। তার প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে ন্যাশনাল সাইক্লিং অ্যাকাডেমি। সেখানেই প্রশিক্ষণের ফঁাকে। নিজস্ব চিত্র

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ০২:১৫
Share: Save:

মেয়ে দারুণ সাইকেল চালায়। কিন্তু বাবার মুখ ভার।

রাজ্যস্তর পেরিয়ে দিল্লিতে লড়তে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে মেয়ে। কিন্তু বাবা যেতে দিতে নারাজ— সাত দিন বাড়ির বাইরে রাত কাটালে যে বিয়েই হবে না ওর!

জেদাজেদি, কান্নাকাটি। শেষমেশ মেয়েকে ছাড়লেন তিনি। এবং মেয়েটি ঢুকে পড়ল গোটা দেশে হাতে গোনা সেই আট জনের মধ্যে যারা দিল্লিতে জাতীয় স্তরের প্রশিক্ষণ পাবে। তৈরি হবে সর্বোচ্চ স্তরের প্রতিযোগিতায় নামার জন্য। বুধবার রাতে বাড়ি ফিরে সেই মেয়ে নাজিরা খাতুন বলল, ‘‘খুব ভাল লাগছে, আমি পেরেছি।’’

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা দেবকুন্ডু এসকেএআরএম গালর্স হাই মাদ্রাসায় কিছু দিন ধরেই সাইকেল প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। অতীতে জাতীয় স্তরে কবাডি ও সাইকেলে চালানোর অভিজ্ঞতা আছে প্রশিক্ষক মিলনতারা খাতুনের। তাঁরই উৎসাহে প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন জাতীয় স্তরে অনূর্ধ্ব ১৬ সাইকেল প্রতিযোগিতায় ছাত্রীদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এক বছর অন্তর ওই ‘মিট’ হয়। এ বার তাঁরা পাঁচ ছাত্রীর নাম পাঠিয়েছিলেন। গত ২২ এপ্রিল কলকাতার রেড রোডে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় দু’জন নির্বাচিত হয়। নাজিরা খাতুন আর হাসিনা খাতুন, দু’জনেই নবম শ্রেণির ছাত্রী। আর দু’জনেরই বাড়ি জানকীনগর গ্রামে। চলো দিল্লি!

আরও পড়ুন: নকশালবাড়ির জের, রাজারহাট ও চেতলা নিয়ে সতর্ক বিজেপি

কিন্তু বেঁকে বসেন নাজিরার বাবা হাফিজুল শেখ। সাইকেলে কাপড় ফেরি করে সংসার চালান তিনি। একটা হাত নেই, অন্য হাতে হ্যান্ডেল ধরে সাইকেল চালান। তাঁর সোজা কথা, ‘‘ সাত দিন দিল্লি থাকবে। সে কথা গ্রামে চাউর হলে তো ওর আর বিয়েই হবে না!’’

২৮ তারিখ সকাল ৮টায় হাওড়া থেকে ট্রেন। তার ঠিক আগের দিন নাজিরার কাছে এ খবর শুনে বাড়িতে ছুটে আসেন মুর্শিদা খাতুন। হাতে-পায়ে ধরে বোঝাতে থাকেন। নাজিরা তখন কাঁদছে, কেঁদে ফেলেন প্রধান শিক্ষিকাও। তিনি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন পরিচালন সমিতির সভাপতি মোজারুল হক আর স্থানীয় বিধায়ক সফিউজ্জামানকে। তাঁরাও মরিয়া হয়ে বোঝাতে থাকেন। চাপে পড়ে রাজি হয়ে যান হাফিজুল।

পশ্চিমবঙ্গ সাইক্লিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বাণী ঘোষ বলেন, ‘‘দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামের ভেলোড্রোমে ট্রায়াল এলিজিবিলিটি টেস্টে সফল হয়েছে নাজিরা। ওর সব দায়িত্ব নেবে ন্যাশনাল সাইক্লিং অ্যাকাডেমি। ওকে দিল্লিতে বছরভর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’’ নাজিরার পড়াশোনার ব্যবস্থা তারাই করবে বলে মাদ্রাসাকে জানিয়ে দিয়েছে অ্যাকাডেমি।

বৃহস্পতিবার মেয়ে বাড়ি ফেরার পরে গ্রামে খুশির হাওয়া। মফিজুল বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, মেয়ের সর্বনাশ হবে। এ বার নিশ্চিন্ত হলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bicycle Competition Girls
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE