Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসকদের মুখেও ঘুরছে ‘জাদু কি ঝাপ্পি’

একের পর এক এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য কর্তারা বলছেন, ‘‘এটা মোটেই ভাল লক্ষণ নয়। উভয় পক্ষকেই বিষয়টি বুঝতে হবে।’’

সুস্মিত হালদার ও শুভাশিস সৈয়দ
শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৭ ০৮:১০
Share: Save:

ছুটছেন সকলেই। রোগী ও তাঁর আত্মীয়েরা ছুটছেন আরও ভাল চিকিৎসা পরিষেবার আশায়। চিকিৎসকেরাও ছুটছেন নিজেদের লক্ষ্যপূরণে।

চিকিৎসকেরা ব্যস্ত। প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না রোগীদের। সমস্যা বাড়ছে। বাড়ছে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ।

দিন কয়েক আগে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ। বিরাট বাহিনী নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় পুলিশকে। অভিযোগ, জুনিয়ার ডাক্তার ও মেডিক্যালের ছাত্ররা মারধর করে রোগীর আত্মীয়দের। রোগীর আত্মীয়েরাও পাল্টা মারধর করে। মঙ্গলবারে হাসপাতালের এক চক্ষু চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে।

একের পর এক এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য কর্তারা বলছেন, ‘‘এটা মোটেই ভাল লক্ষণ নয়। উভয় পক্ষকেই বিষয়টি বুঝতে হবে।’’ শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসক যেমন বলছেন, ‘‘রোগীর পরিজনেরা নানা হাসপাতাল ঘুরে হয়রান হয়ে এখানে আসছেন। তাঁরা রোগী নিয়ে এতটাই দুশ্চিন্তায় থাকেন যে, অনেক সময়েই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু আমরা তো ডাক্তারি পড়ার সময় থেকেই এগুলো জেনে এসেছি। তাহলে সেটা না সামলে কেন মেজাজ হারিয়ে ফেলছি?’’

শুধু কি ব্যবহার, শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে অভিযোগ উঠেছে, অকারণে বহু রোগীকে পাঠানো হচ্ছে স্থানীয় নার্সিংহোমে। মোটা টাকার বিনিময়ে সেখানে অস্ত্রোপচার করছেন এই হাসপাতালেরই কয়েক জন চিকিৎসক। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় তো স্পষ্ট বলছেন, “এই ঘটনা থেকেই কি প্রমাণিত হয় না, যে আসল কারণটা পরিকাঠামো নয়। অন্য কিছু।”

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, দৈনন্দিন রোগী ভর্তির যা চাপ, তাতে ভাল চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সব সময় সম্ভব হচ্ছে না। কোনও কারণে রোগী মৃত্যু ঘটলে রণক্ষেত্র হয়ে উঠছে হাসপাতাল চত্বর। ক্ষোভ সামাল দিতে ছুটতে হচ্ছে পুলিশকে।

এই হাসপাতালের তিন মাসে রোগী ভর্তি ছিলেন ৪২ হাজার ২৩ জন। বহির্বিভাগের সংখ্যাটা ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৪৪৫। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিকাঠামো অনুয়ায়ী মেডিসিন বিভাগে ১৪০ জন রোগী ভর্তি হতে পারেন। কিন্তু রোগী ভর্তি থাকছেন গড়ে তিনশো থেকে চারশো জন। মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক কৃষ্ণ সেন জানান, দু’-তিন দিনের জ্বরের রোগীকেও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হচ্ছে। তাতে ভিড় বাড়ছে। রোগীর যা চাপ তাতে ১৪ জনের জায়গায় ৪২ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। মেডিক্যাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ২০১২ সালের ১ অগস্ট ১০০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ চালু হয়। প্রথম বর্ষের ওই ১০০ জন ছাত্রছাত্রী ২০১৭ সালের শুরুতে পাশ করে বের হওয়ার পরে নিয়ম অনুযায়ী তাঁরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে এক বছর ‘ইনটার্ন’ হিসেবে ডিউটি করছেন। এক বছর ডিউটি করার পরে ‘হাউস স্টাফ’ হয়ে যাবেন। তখন চিকিৎসক সমস্যা মিটবে।

দীর্ঘ দিন গ্রামীণ হাসপাতালে কাজ করা এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘যাঁরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন, তাঁরা চান ডাক্তার যেন তাঁদের একটু ভাল করে দেখে, কথা বলে। পরিকাঠামোর সমস্যা কি আগে ছিল না? মুন্নাভাইয়ের মতো সবাইকে যাদু কি ঝাপ্পি দেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু হাসিমুখে রোগীর নাড়ি টিপে, বুকে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে ভাল করে কথাও কি বলা যায় না? ওষুধ না থাকলে রোগীই কিনে নেবেন। হাসপাতালের সমস্যাও তিনি বুঝবেন। সেটা তখনই সম্ভব যখন রোগী ডাক্তারকে বিশ্বাস করবেন। ভরসা করবেন।’’ ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘চেম্বার, নার্সিংহোম, ওষুধের কোম্পানির প্রতিনিধি, প্যথোলজি সেন্টারের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের থেকে তা বেশি জরুরি।’’

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

patient Hospital Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE