‘দিদি’ আসছেন আজ।
তার ঠিক আগের দিনই, সোমবার তাঁর দূর সম্পর্কের ভাই দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহিষ্কার করল যুব তৃণমূল। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এ দিনই তাঁকে ছ’বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলায় গত বিধানসভা নির্বাচনে এক মাত্র সাগরদিঘি আসনটিই জিতেছিল তৃণমূল। অথচ এখন সবচেয়ে বেশি ঘরোয়া কোন্দল সেখানেই। রঘুনাথগঞ্জে সভা করবেন জানিয়ে শেষ মুহূর্তে দলনেত্রী মত বদল করে এখানে আসছেন।
সাগরদিঘিতে ইতিমধ্যে ‘নির্দল’ প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন সামসুল হোদা। তাঁর হয়ে নিয়মিত প্রচারে যাচ্ছিলেন দেবাশিস। রাজ্য যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সৌমিক হোসেন বলেন, “দলের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
সামসুলকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে তৃণমূল। সেই সঙ্গে, আর এক বিক্ষুব্ধ, সমশেরগঞ্জে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়া রেজাউল হক ওরফে মন্টু বিশ্বাসকেও বলা হয়েছে প্রার্থিপদ তুলে নিতে। জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, ‘‘দু’জনকেই ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রার্থিপদ তুলে না নিলে বহিষ্কার করা হবে।” যা শুনে মন্টু এবং সামসুল দু’জনেই জানান, দিন দশেক আগেই তাঁরা দল ছেড়েছেন। কাজেই এই বহিষ্কার ‘অর্থহীন’ ও ‘হাস্যকর’।
বস্তুত, মুর্শিদাবাদের এই এলাকায় গোষ্ঠী কোন্দল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে তৃণমূল। সাগরদিঘির তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত সাহা প্রকাশ্যে বিক্ষুব্ধদের কোনও গুরুত্ব দিতে রাজি হননি। তবে দলেরই একটি সূত্রের খবর, জেলা তৃণমূলের একটা বড় অংশের মদত রয়েছে সাগরদিঘির বিক্ষুব্ধদের দিকে। এমনকী, সামসুল মনোনয়ন দাখিলের পর জেলার এক তৃণমূল নেতাকেই প্রথম ফোন করে খবরটি দেন।
সোমবার রাতে চণ্ডীগ্রামে সভা করছিলেন সামসুল। তিনি বলেন, “দলনেত্রীর কোনও বার্তা বা হুঁশিয়ারি, কোনওটাই আর আমাদের ক্ষেত্রে খাটে না। কারণ আমরা তৃণমূল থেকে ইস্তফা দিয়েই ভোটে লড়ছি। গত চার বছর ধরে জেলা ও রাজ্য নেতাদের কাছে বারবার দরবার করেও তো কিছু হয়নি। কারও আশ্বাসে আর পিছিয়ে আসার জায়গায় নেই আমরা।”
তৃণমূল শিবিরের খবর, এই জেলায় অন্তত ন’টি আসনকে গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল। সুতি, সাগরদিঘি, হরিহরপাড়া, ডোমকল, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর ছাড়াও কান্দি, বড়ঞা এবং ভরতপুর। কান্দিতে মনোনয়ন পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত, কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলার শান্তনু সেন। বীরভূম লাগোয়া বড়ঞা ও ভরতপুরে অনুব্রত মণ্ডলের ভাল প্রভাব, ওই দুই কেন্দ্রের পর্যবেক্ষকও অনুব্রত নিজেই।
তৃণমূলের নজরে থাকা ওই ন’টি আসনের প্রায় কোনওটিতে জোট না হওয়ায় তারা সুবিধে পাবে বলেও মনে করছেন দলের নেতারা। আর তাই দলনেত্রীকে দিয়ে এর মধ্যে যতগুলিতে হয়, সভা করাতে চাইছে জেলা তৃণমূল। ইতিমধ্যেই সুতি ও লালবাগ এক দফা ঘুরে গিয়েছেন মমতা। মঙ্গালবার রঘুনাথগঞ্জ, বড়ঞা ও হরিহরপাড়ায় সভা হওয়ার কথা ছিল। তা বাতিল হয়ে সাগরদিঘি, ডোমকল, হরিহরপাড়ায় সভা করছেন তিনি। আগামী সপ্তাহে তাঁর আসার কথা জঙ্গিপুর, কান্দি ও বড়ঞায়।
তৃণমূল জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, ‘‘সাগরদিঘি বরাবরই তৃণমূলের এলাকা হিসেবে দলের কাছে চিহ্নিত। জেলায় নির্বাচনে জিতে বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতি এবং এক মাত্র জেলা পরিষদ আসন এসেছে সর্বপ্রথম সাগরদিঘি থেকেই। তাই দলনেত্রী আবার আসছেন।”
তবে সাগরদিঘিতে মুখ্যমন্ত্রীর ফের প্রচারে আসার ঘটনাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি সিপিএমের প্রার্থী রজব আলি মল্লিক। তাঁর কথায়, “হারার আতঙ্কেই তৃণমূল নেত্রীর এই ঘনঘন যাতায়াত। তা অবশ্য কোনও প্রভাব ফেলবে না।’’ তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘‘তৃণমূল সভায় যত লোক হবে, মঙ্গলবারই তার চেয়ে বেশি লোক নিয়ে আমাদের মহামিছিল বেরোবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy