Advertisement
E-Paper

ইদের টানেই ঘরে ফেরার গান

সীমান্তের হাওয়ায় ভাসছে ঘরে ফেরার গান।কেউ ট্রেনে ফিরেছেন বাদুরঝোলা হয়ে। তৎকাল টিকিট না পেয়ে পাক্কা বারো ঘণ্টা বাসে এসেছেন কেউ। কারও আবার এ সব ঝক্কি না পসন্দ! কেরল থেকে কলকাতা—সোজা আকাশপথে। তারপর গাড়ি ভাড়া করে কুপিলা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৩
উৎসবে ঘরে ফেরার পালা। বাহাদুরপুরে।

উৎসবে ঘরে ফেরার পালা। বাহাদুরপুরে।

সীমান্তের হাওয়ায় ভাসছে ঘরে ফেরার গান।

কেউ ট্রেনে ফিরেছেন বাদুরঝোলা হয়ে। তৎকাল টিকিট না পেয়ে পাক্কা বারো ঘণ্টা বাসে এসেছেন কেউ। কারও আবার এ সব ঝক্কি না পসন্দ! কেরল থেকে কলকাতা—সোজা আকাশপথে। তারপর গাড়ি ভাড়া করে কুপিলা।

মুর্শিদাবাদের মাসাদুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, মিজানুর শেখেরা সমস্বরে বলছেন, ‘‘গত দু’বছরে ইদে বাড়ি ফিরতে পারিনি। ইদ-উল-ফিতরে ট্রেনের টিকিটই পেলাম না। তাই এ বার সাহস করে সটান প্লেনের টিকিট কেটে ফেলেছিলাম।’’

কিন্তু, সকলেই কি ফিরতে পেরেছেন? সাদাকালো সীমান্ত তাঁদের পথ চেয়ে থাকে। ঘর তাঁদের অপেক্ষায় থাকে। কচি গলায় ফোনের এ প্রান্ত থেকে মেয়েটা আবদার করে বসে, ‘‘আব্বু, এ বার আমি কিন্তু চুড়িদার নেবই।’’ কাশির দমক থামলে বৃদ্ধ বাবা বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, ইদে বাড়ি এলে তোর সঙ্গে ডাক্তার দেখাতে যাব। তোর মায়ের শরীরটাও ভাল যাচ্ছে না রে।’’

কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও ফিরতে পারেননি অনেকেই। কারও ছুটি মেলেনি। কেউ আসতে চান আরও কিছু টাকা জমিয়ে। পাটিগণিতের জটিল আঁকের কাছে মাথা নুইয়েছে ঘরে ফেরার আকুতি।

হোলগবেড়িয়ার পিঙ্কি খাতুন স্কুল থেকে ফেরার পথে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকত লাল রঙের ফ্রকটার দিকে। কী সুন্দর কাজ করা! সাহস করে দোকানিকে একবার বলেও ফেলেছিল, ‘‘ওটা কিন্তু বেচবে না। বাবা এলেই আমি নেব।’’ সোমবার বিকেলে বাবার সঙ্গে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরেছে পিঙ্কি। হাতের প্যাকেটে সেই লাল ফ্রক।

খুদের হাতে ইদের মেহেন্দি। কৃষ্ণনগরে চলছে বিকিকিনি।

করিমপুর থেকে কল্যাণী, জলঙ্গি থেকে জঙ্গিপুর—ট্রেন, বাস, গাড়িতে ঠাঁই নেই রব। কেউ দীর্ঘ পথ দাঁড়িয়ে এসেছেন, কেউ নিরুপায় হয়ে উঠে পড়েছেন বাসের ছাদে। কিন্তু কারও মুখে কোনও ক্লান্তির ছাপ নেই। বিরক্তি নেই। বরং গল্প আছে। গান আছে। আর আছে ঘরে ফেরার টান।

সোমবার রাত ন’টা। দু’চোখের পাতা এক করতে পারছিলেন না জলঙ্গির লতিফা বেওয়া। রাস্তায় কোনও গাড়ির আওয়াজ শুনলেই তাঁর মনে হচ্ছিল—এই বুঝি সইফ এল। কিন্তু কোথায় সইফ? ও তো পাশের বাড়ির আক্রম।

লালগোলার চারানগরে ফকরুন বেওয়া এ বারেও ইদের সকালে বানাবেন হালুয়া-সেমুই। ‘আসছি’ বলে সীমান্তের গাঁ থেকে বেরিয়ে পড়েছিল দুই ভাই। বছর দশেক পরেও তাঁরা ঘরে ফেরেনি। ফি বছর ইদে ছেলেদের প্রিয় পদ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন ফকরুন। যদি তারা ফিরে আসে!

আচমকাই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। নিভুনিভু লন্ঠনের সলতেটা ফের জেগে ওঠে। ভ্রম নয়, স্পষ্ট সইফের গলা, ‘‘ও আম্মা, দরজা খোলো।’’

eid celebration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy