Advertisement
১৮ মে ২০২৪

রথের বাঁশিতে পথ খুঁজে পায় নবদ্বীপ

পলিথিন জাতীয় নরম কিছু দিয়ে ছাঁচের ফাঁপা পুতুলের ভিতরে প্যারিস দিয়ে ভরাট করা পুতুলেই এখন মেলা ভরে গিয়েছে। ভাঙে না, জলে নষ্ট হয় না বলে দেদার বিকোচ্ছে। দাম শুরু পাঁচ টাকা থেকে।

মাটির পুতুলের চাহিদা নেই। —ফাইল চিত্র।

মাটির পুতুলের চাহিদা নেই। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ১২:৩৫
Share: Save:

অসীমের বাপ-ঠাকুর্দা মাটির পুতুলের কারিগর। কাদামাটি নিয়েই বেড়ে ওঠা ক্লাস থ্রি-র অসীমও এখন দিব্যি ‘বর-বউ’ পুতুলে রং করতে পারে। তার পুতুল বিক্রিও হয়। কিন্তু এ বার রথের মেলায় সে নিজের তৈরি করা জগন্নাথ নিয়ে বাবার পাশেই বসেছিল। স্কুলের বন্ধুদের অনেকে মেলায় এলেও রাস্তার ধারে প্লাস্টিক বিছানো তাদের দোকানে আসেনি। যে দু’জন এসেছিল তাদের মা-বাবা অসীমের সামনেই বলেছেন, ‘‘ও সব মাটির ঢেলা আবার কেউ কেনে! চল ভাল জগন্নাথ কিনে দেব।” তারপর থেকে অসীমের মনখারাপ। তার গোঁ, ‘‘উল্টো রথের মেলায় যাব না।’’

অসীমরা তিন পুরুষ ধরে পুতুল তৈরি করে। তাঁর বাবা গোপাল দত্তও চান না, ছেলে পুতুলের কাজ শিখুক। উল্টো রথের প্রস্ততিতে ব্যস্ত গোপালবাবু বলছেন, ‘‘লোকজনের পছন্দ এখন বদলে গিয়েছে। মাটির পুতুলের চাহিদা নেই। সস্তার চিনে পুতুলেই সবাই খুশি। এই করে আর সংসার চলছে না।”

পলিথিন জাতীয় নরম কিছু দিয়ে ছাঁচের ফাঁপা পুতুলের ভিতরে প্যারিস দিয়ে ভরাট করা পুতুলেই এখন মেলা ভরে গিয়েছে। ভাঙে না, জলে নষ্ট হয় না বলে দেদার বিকোচ্ছে। দাম শুরু পাঁচ টাকা থেকে। রথের মেলায় দামী পুতুল নিয়ে বসেন তপন পাল। তাঁর দোকানে সাড়ে তিন হাজার টাকার পুতুলও মেলে। তিনি জানান, দশ-বিশ টাকায় এখন পুতুল হয় না। পুতুল এখন ছোটরা নয়, বড়রা কেনেন শো-পিস হিসেবে।

প্রতিবার নবদ্বীপে রথের মেলায় ঘুরে ঘুরে বাঁশি বাজায় শঙ্কর মাল। মাঝবয়সী বাঁশিওয়ালার মিষ্টি সুরে মন্ত্রমুগ্ধ ভিড়। চেনা সুরের জমাট বুনন থেকে অবলীলায় চলে যান শাস্ত্রীয় রাগে। পোড়ামাতলার রাস্তায় তাঁর বাঁশি বিকেলের ‘পূরবীতে’ আলপনা আঁকতে আঁকতে হঠাৎ থেমে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে থাকা ভিড়টা বাঁশি কিনতে লাফিয়ে পড়ল। এ ভাবেই ক্রেতাকে নিজের আয়ত্তে এনে বাঁশি বিক্রি করেন শঙ্কর।

তাঁর কথায়, ‘‘বাঁশি তৈরি এবং সুর দুই-ই শিখেছি বাড়িতে। কিছু দিন অবশ্য ওস্তাদের কাছেও যাতায়াত করেছি। ইচ্ছে ছিল শিল্পী হওয়ার। যাত্রা, বাউল গানের সঙ্গে বাজিয়েছি আবার একক অনুষ্ঠানও করেছি। কিন্তু কেমন করে বাঁশির কারিগর হয়ে গেলাম। তাঁর বাঁশি শুধু রথের মেলায় নয়, বৃন্দাবন, মথুরা থেকে সুইৎজারল্যান্ড পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছে। তাঁর কথায়, “সারা বছরই বাঁশি বিক্রি হয়। তবে রথের মেলায় ঘুরে ঘুরে বাঁশি বাজিয়ে যে আনন্দ পাই সেটা অন্য কোথাও মেলে না।”

পঞ্চাশ কেজি ময়দা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন সত্তর ছুঁইছুঁই প্রদীপ মোদক। বেলা তখন চারটে। পথে রথ নামেনি। কিন্তু জিলিপির দোকানে ভিড়ের কমতি নেই। তিনি বলছেন, ‘‘যাই বলুন, রথের মেলায় পাঁপড় ভাজার জায়গাটা এখন জিলিপির দখলে। রথের মেলায় পাঁপড়ভাজা এক সময় খুব বিক্রি হত। কিন্তু এখন জিলিপির বিক্রিই বেশি।’’ কেন? তাঁর জবাব, “স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ অনেক সময় তেলের কারণে রাস্তায় ভাজা পাঁপড় খেতে চান না। বাড়িতেই পাঁপড় ভেজে খান। কিন্তু জিলিপি বাড়িতে করা বেশ কঠিন কাজ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE