Advertisement
১৬ মে ২০২৪

পুরনো নোটেই দাম চাষিদের

খেতে ফসল আছে। মহাজনের ঘরে দাম নেই। যা মিলছে তা-ও পুরনো টাকায়। চাষিরা পড়েছেন বড় ফাঁপড়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:০৩
Share: Save:

খেতে ফসল আছে। মহাজনের ঘরে দাম নেই। যা মিলছে তা-ও পুরনো টাকায়।

চাষিরা পড়েছেন বড় ফাঁপড়ে।

দাম না থাকলেও জমি থেকে তুলে ফেলতে হচ্ছে ফসল। সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে পুরনো নোটে কার্যত ‘অভাবী বিক্রি’ চলছে।

ডোমকলের চাষিরা জানান, লঙ্কা, মুলো, পালং, কপি চাষের খরচ উঠছে না। প্রতি দিন ৩০ থেকে ৪০ কেজি লঙ্কা উঠছে জমি থেকে। একটু বাড়তি লাভের আশায় তাঁরা সে সব নদিয়ার সুন্দলপুর হাটে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেখানে গিয়েও হতাশ হতে হচ্ছে। ৭-৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে লঙ্কা। জমি থেকে ওই লঙ্কা তুলতেই কেজিতে খরচ পড়ছে প্রায় ৫ টাকা।

কুপিলা এলাকার চাষি গোলাম কিবরিয়ার আক্ষেপ, ‘‘লাভ ‌দূরের কথা, ঘরের পয়সা দিয়ে চাষ করে জলের দরে সব্জি বিক্রি করতে হচ্ছে।’’ চাষিরা জানান, তাঁদের অনেকেই সুদে টাকা নিয়ে, সার ও কীটনাশকের দোকানে ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, ফসল বিক্রি করে ওই টাকা মিটিয়ে দেবেন। কিন্তু তা আর হওয়ার নয়। কুপিলারই চাষি নুরুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাজারে গিয়ে শুনছি, খুচরো বাজারে ভালই দাম পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু চাষি লাভ দূরের কথা, আসলটাও ঘরে তুলতে পারছে না। এ ভাবে চলতে থাকলে চাষিদের আত্মহত্যা করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।’’

নদিয়ার বারবাকপুরের মাইনুল হক সর্দার ওই এলাকার চাষিদের কাছ থেকে সব্জি কিনে খড়গুরে বিক্রি করেন। তাঁর কথায়, ‘‘একে দাম নেই। তার উপরে মহাজনেরা পুরনো নোট চালানোর চেষ্টা করছে। আমরা বলছি, দরকারে টাকা বাকি থাকুক, পুরনো নোট নেব না।’’ জলঙ্গির মহাজন কাশিম মালিথ্যা আবার পাল্টা বলেন, ‘‘আমাদের তো আর টাকার গাছ নেই, ব্যবসা করে পেট চালাই। আমরা যেমন টাকা পাচ্ছি তেমনই চাষি বা পাইকারি বিক্রেতাদের দিচ্ছি।’’

মহাজনদের একটা বড় অংশের দাবি, কেবল চাষিরা নয়, নোট-কাণ্ডে তাঁরাও মার খেয়েছেন। অন্য বারের তুলনায় এই মরসুমে অর্ধেক ব্যবসাও হচ্ছে না। ওই মহাজনদের বক্তব্য, তাঁরা মাল বিক্রি করে যেমন টাকা পাচ্ছি, তেমনই চাষিদের দিচ্ছি। পুরনো নোট চাষিরা নিচ্ছেন বলেই কিছুটা ব্যবসা চলছে, না হলে তাঁদেরও পথে বসতে হত।

কিন্তু কী ভাবে খেত থেকে পাঁচ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বেগুন খুচরো বাজারে ৪০ টাকা কেজিতে পৌঁছে যাচ্ছে, কোনও স্তরে কৃত্রিম অভাব তৈরি করা হচ্ছে কি না, তার উত্তর মিলছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE