Advertisement
E-Paper

কোথাও বৃষ্টিভাসি কোথাও খটখটে, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

কোথাও শিলাবৃষ্টির দাপটে নাজেহাল ফসল তো কোথাও ঝড়ের তাণ্ডবে বোঁটা খসা আম। কিংবা শুয়ে পড়া কলাবাগান দেখে মাথায় হাত চাষির।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৩১
আম-ছুট। ঝড়ে পড়া আম কুড়োনোর ধুম। বৃহস্পতিবার লালবাগে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

আম-ছুট। ঝড়ে পড়া আম কুড়োনোর ধুম। বৃহস্পতিবার লালবাগে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

কোথাও শিলাবৃষ্টির দাপটে নাজেহাল ফসল তো কোথাও ঝড়ের তাণ্ডবে বোঁটা খসা আম। কিংবা শুয়ে পড়া কলাবাগান দেখে মাথায় হাত চাষির।

কোথাও আবার প্রবল বৃষ্টির দাপটে পাকার মুখে ভেসে গিয়েছে হেক্টরের পর হেক্টর বোরো ধান। আবার কোথাও বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে এসেও বৃষ্টির অপেক্ষায় পাটচাষিরা। জলের অভাবে বোঁটা শুকিয়ে খসে পড়ছে আম। আবহাওয়ার এ হেন ছক ভাঙা খেলায় বিপর্যস্ত ধান-পাট-আম-লিচুর মরসুম।

এরই মধ্যে কিছুটা স্বস্তিতে মুর্শিদাবাদের চাষিরা। চৈত্রের শেষ থেকে এ পর্যন্ত বার তিনেক প্রবল শিলাবৃষ্টি ও একজোড়া ঝড় হয়েছে এ জেলায়। তবে বুধবার রাতের ঝড়বৃষ্টি ছিল সব চেয়ে জোরালো। বিশেষ করে কান্দি, ডোমকল, লালগোলা, সুতি, ঔরঙ্গাবাদ, বহরমপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার কোথাও প্রবল ঝড়, শিলাবৃষ্টি আবার কোথাও শুধুই বৃষ্টি।

বৃষ্টির দাপটে সব চেয়ে ক্ষতি হয়েছে কান্দি মহকুমার বোরো ধানের। শুধু বড়ঞা ব্লকেই কমবেশি বাইশ হেক্টর জমির তিরিশ শতাংশ পাকা ধান মাঠেই শুয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও বৃষ্টির প্রভাব কমবেশি পড়েছে সুতি, খড়গ্রাম, ভরতপুরেও। কান্দির মহকুমা কৃষি আধিকারিক মৃদুল ভক্ত বলেন, “বৃষ্টিতে বোরো ধানের কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, মাঠে মাঠে ঘুরে তার হিসেব নেওয়া হচ্ছে।” এলাকার চাষি কৃষ্ণ বাগদি বলেন, “বৃষ্টি নয়, আমাদের ভয় শিলাকে। যদি শিলা ছাড়া বৃষ্টি হয় অন্যান্য মরশুমি ফসলের যেমন পটল, ঝিঙে, চালকুমড়োর খুব উপকার হবে।” তবে বেশি বৃষ্টিতে তিল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিল চাষিরা। তাঁদের কথায়, ‘‘এখন জমিতে তিলের চারা ইঞ্চি পাঁচেক হয়েছে। এই অবস্থায় জমিতে জল জমলে চারা বাঁচবে না।’’

মুর্শিদাবাদ জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা তাপস মণ্ডল বলেন, “এই বৃষ্টিতে ধানছাড়া সব ধরনের চাষেরই ভাল হবে। বিশেষ করে পাটের।” ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে মুর্শিদাবাদের আমের ফলন। চলতি মরশুম ছিল আমের ‘অন সিজন’। প্রচুর ফলনের আশায় ছিলেন চাষিরা। গাছ ঝেঁপে মুকুল এসেও ছিল। কিন্তু গোটা দুয়েক ঝড়ে সেই আশা মাটিতে মিশে গিয়েছে।

তবে নদিয়ায় ছবিটা তত সুবিধার নয়। মুর্শিদাবাদ লাগোয়া তেহট্ট, করিমপুর ছাড়া বাকি নদিয়ায় এখনও তেমন ভাবে ঝড় বা বৃষ্টি কোনওটাই হয়নি। উল্টে শেষ কবে বৃষ্টি হয়েছে কর গুনে বলতে গিয়ে নিজেই চমকে উঠছেন নদিয়ার চাষিরা। গোটা শীতে তেমন বৃষ্টি হয়নি। মাস দুয়েক আগে একবার মাঝারি মাপের এক দফা বৃষ্টিই শেষ পাওনা। তার পর থেকে এই সব অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ শূন্য। যার ফলে চাষাবাদের সামগ্রিক ছবিটাই বদলে গিয়েছে এ বার।

গোটা চৈত্র পার করে বোশেখের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত একবারও উঁকি মারেনি ঝড়। ঘোলাটে আকাশের নীচে জলের অভাবে খটখটে মাঠে নেতিয়ে পড়া শাকসব্জি, রোদ ঝলসানো বোরোধান বা পাটের চেহারা দেখে প্রমাদ গুনছেন মানুষ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি শেষবার বৃষ্টি হয়েছে নদিয়া ও সংলগ্ন বর্ধমানে।

ব্যতিক্রম করিমপুর, তেহট্ট। বুধবার রাতে প্রবল বৃষ্টিতে করিমপুর ১ এবং ২ নম্বর এলাকার চাষিরা খুব খুশি। পাট চাষে সুরাহা মিলবে। অন্য দিকে ঝড়ে চরম ক্ষতি হয়েছে তেহট্ট, বেতাই অঞ্চলের কলা এবং পেঁপে চাষের। বেতাই সাধুবাজারের কলাচাষি সাধন প্রামাণিক বলেন, “আমার তিন বিঘা কলাবাগানের বারোশো গাছের মধ্যে প্রায় সাতশো গাছ কালকের ঝড়ে শেষ হয়ে গিয়েছে।” একই
ছবি তেহট্টের আনন্দ হালদারের বাগানেও। তিনি জানিয়েছেন পেঁপে এবং কলা দু’টোই শেষ করে দিয়েছে বুধবারের ঝড়।

এ অবস্থায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিই একমাত্র রক্ষা করতে পারে চাষিদের, বলছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

Farmers Weather
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy