‘ও স্যার, বলটা এ বার বড়বাবুকে পাস করুন...’
বল পায়ে দৌড়তে দৌড়তে একবার আড়চোখে মাঠের বাইরের বক্তাকে দেখে নিলেন ইসলামপুর থানার ওসি। ওসির চোখে চোখ পড়তেই চুপসে গিয়েছিলেন ইসলামপুরের মাঠে খেলা দেখতে আসা এক দর্শক। খেলা শেষ হওয়ার পরে অবশ্য ওসি ওই দর্শককে বলেছেন, “আমাদের থানাকেই সমর্থন করছেন তো?” হাসতে হাসতে ওই দর্শকের জবাব ছিল, “কি যে বলেন স্যার।”
বিকেল হলেই ডোমকলের বিভিন্ন খেলার মাঠে উপচে পড়ছে ভিড়। পুলিশের খেলা বলে কথা! গত রবিবার থেকে ডোমকল মহকুমায় শুরু হয়েছে আন্তঃথানা পুলিশ ফুটবল প্রতিযোগিতা। ওই প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে মহকুমার চারটে থানা। রবিবার বিকেলে ডোমকল বি টি হাই স্কুল মাঠে ছিল প্রথম খেলা। ওই খেলায় রানিনগর থানা ২-১ গোলে ডোমকল থানাকে পরাজিত করে। সোমবার জলঙ্গির সাদিখাঁরদেয়াড় মাঠে ইসলামপুর থানা ২-১ গোলে জলঙ্গি থানাকে হারায়। মঙ্গলবার ইসলামপুর নসিপুর ফুটবল মাঠে রানিনগর ২-০ গোলে হারায় ইসলামপুর থানাকে। এই খেলার জন্য তৈরি করা হয়েছে রেজিস্ট্রেসন কার্ড। সেই কার্ডে রয়েছে খেলোয়াড়দের ছবি। সেই কার্ড দেখিয়ে নামতে হচ্ছে মাঠে। হঠাত্ ফুটবল নিয়ে মাতামাতি কেন? ডোমকলের এসডিপিও অরিজিত্ সিংহ বলছেন, “ডোমকলে ফুটবল নিয়ে এমন মাতামাতি এর আগে আমি কোথাও দেখিনি। ফলে এই এলাকায় জনসংযোগ বাড়াতে ফুটবলের থেকে আর কোনও ভাল জিনিস আছে নাকি!”
পুলিশ ফুটবলের পাশাপাশি ডোমকলে চলছে লিগের খেলাও। জুনের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়েছিল ডোমকল লিগের বি ডিভিসনের খেলা। মোট ৬ টি দল নিয়ে ৯ অগস্ট পর্যন্ত ১৫ টি খেলা হয়েছে। বি ডিভিসন থেকে এই মরসুমে ডোমকল ভোরের আলো ও ডোমকল সেবা সঙ্ঘ আগামী বছর এ ডিভিসনে খএলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। ১০ টি দল নিয়ে লিগের এ ডিভিসনের খেলা শুরু হয়েছে ১২ অগস্ট থেকে। তবে জেলায় রাষ্ট্রপতি সফরের কারণে ওই খেলা কিছুদিন বন্ধ ছিল। ইতিমধ্যে ১৭ টি খেলা হয়ে গিয়েছে। ওই ১০ টি দলের মধ্যে থেকে ৬ টি দলকে বেছে নিয়ে শুরু হবে সুপার সিক্স। এখনও পর্যন্ত সুপার সিক্সের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে ডোমকল আজাদ ক্লাব, ডোমকল স্পোটিং ক্লাব ও বসন্তপুর ইয়ং ক্লাব, ডোমকল মহামেডান, শিবনগর সাবাকরিম ফ্যান ক্লাব, বৃন্দাবনপুর ইয়ুথ ক্লাব ও মানিকনগর পল্লি সেবক সমিতি। ডোমকল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ধীমান দাস বলেন, “আশা করছি নির্ধিষ্ট সময়ের মধেই আমরা লিগের খেলা শেষ করতে পারব।”
লালগোলায় সঞ্জীবনের উদ্যোগে লালগোলা চ্যালেঞ্জ কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠল চাটাইডুবি নবীন সঙ্ঘ। সোমবার গত দু’বারের বিজয়ী চামাপাড়া টাইগার ক্লাবকে ৩-২ গোলে হারায় তারা। মঙ্গলবার নলডহরি মিলন সঙ্ঘ কৃষ্ণপুর যুব সঙ্ঘকে পরাজিত করে ফাইনালে উঠেছে। এ বছর দশম বর্ষে পড়ল এই প্রতিযোগিতা। স্থানীয় ৮ টি দল নিয়ে লালগোলার এম এন অ্যাকাডেমি মাঠে এই প্রতিযোগিতা চলছে। লালগোলায় সোমবার ও মঙ্গলবার সেমিফাইনালের এই দু’দিনই মাঠে দর্শকদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। এই প্রতিযোগিতা কমিটির সম্পাদক উত্তমকুমার জৈন বলেন, “স্থানীয় দুই বিশিষ্ট ফুটবলার প্রয়াত সব্যসাচী মিত্র ও অজিত কুমার রায়ের স্মরণে এই খেলার আয়োজন। তাঁদের নামেই বিজয়ী ও রানার্স দলকে স্মারক প্রদান করা হয় প্রতি বছরই।” ৫ সেপ্টেম্বর হবে ফাইনাল খেলা।
করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার পরিচালনায় ১৭ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে জুনিয়র ফুটবল লিগ। এলাকার ১৬ টি জুনিয়র দলের মধ্যে মুক্তদহ বিবাদী ক্লাব, পুঁটিমারি নিউ চাঁদ তারা স্পোর্টিং ক্লাব, শিশা নেতাজি ক্লাব, দিঘলকান্দি কিশোর সঙ্ঘ, পূর্ব দোগাছি নবজাতক সঙ্ঘ, যমশেরপুর ক্রিকেট ক্লাব, বিনয় বাদল দীনেশ ক্লাব ও কুচাইডাঙা তকিপুর নব জাগরণী ক্লাব কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। ওই ৮টি দলকে নিয়ে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর শিশা মাঠে জুনিয়র লিগের ফাইনাল খেলা হবে। ২০ টি দলকে পাঁচটি গ্রুপে ভাগ করে ২১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে শুরু হয় সিনিয়র দ্বিতীয় ডিভিসনের খেলা। জুনিয়র লিগের খেলা শেষ না হলেও গত ২৭ অগস্ট সিনিয়র দ্বিতীয় ডিভিসনের খেলা শেষ হয়েছে। সিনিয়র দ্বিতীয় ডিভিশন লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ধোড়াদহ সেবা সঙ্ঘ। রানার্স হয়েছে টোপলা নতুনপাড়া তরুণ সঙ্ঘ। সিনিয়র দ্বিতীয় ডিভিসনের হরেকৃষ্ণপুর মিলন সঙ্ঘ ও কুমরি নেতাজী সঙ্ঘ ও পাঠাগার আগামী বছর প্রথম ডিভিশনে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে সিনিয়র প্রথম ডিভিসনের খেলা। মোট ৮টি দল এই খেলায় যোগ দিচ্ছে।
সদ্য শেষ হয়ে গেল ইন্টার স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট। করিমপুর চক্রের মোট ১৪টি স্কুল ওই প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল। চারটি স্কুল ছিল অনূর্ধ্ব ১৪ দলে এবং দশটি স্কুল ছিল অনূর্ধ্ব ১৯ দলে। দুটি খেলারই ফাইনাল হয় ২৮ অগস্ট করিমপুর রেগুলেটেড মার্কেট মাঠে। অনূর্ধ্ব ১৪ দল থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বালিয়াডাঙা উচ্চ বিদ্যালয় ও রানার্স হয়েছে হোগলবেড়িয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতন। অন্য দিকে অনূধ্বর্র্ ১৯ দল থেকে যমশেরপুর বিএন উচ্চ বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মহিষবাথান মনোজমোহন বিদ্যামন্দির রানার্স হয়েছে। পাশাপাশি চলছে একদিনের নকআউট ফুটবল প্রতিযোগিতাও। গত ২৩ অগস্ট গোয়াশ অনির্বাণ ক্লাব আয়োজনে একদিনের ফুটবল প্রতিযোগিতায় ১৬ টি দল যোগ দিয়েছিল। ওই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুসাবাড়িয়া যুব সঙ্ঘ পাঠাগার। রানার্স হয়েছে বিনোদনগর নিউ আজাদ সঙ্ঘ। ২৯ অগস্ট খানপুর টাইগার ক্লাবের উদ্যোগে মুরুটিয়ার খানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে একদিনের আট দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে পণ্ডিতপুর মিলন সঙ্ঘ পরাজিত করে ডাঙ্গাপাড়া সবুজ সঙ্ঘকে। ৩১ অগস্ট রামকৃষ্ণপুর ছাত্র সঙ্ঘ পরিচালিত একদিনের আট দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় মুরুটিয়া ইয়ং স্টার ক্লাব। রানার্স হয়েছে পূর্ব দোগাছি নবজাতক সঙ্ঘ।
করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক সুজিত বিশ্বাস বলেন, “প্রতিটি খেলার মাঠে উপচে পড়ছে ভিড়। এবারেও লিগের খেলায় অনেক নতুন খেলোয়াড় উঠে আসছে।”