প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিশোরীর শ্লীলতাহানির মতো গুরুতর অভিযোগ পাওয়ার পর দু’দিন কেটে গেলেও কোনও ব্যবস্থাই নিল না সাগরদিঘি থানার পুলিশ। এমনকি অভিযুক্ত নিজে বুধবার থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে দেখা করে কাজ সেরে বেরিয়ে গেলেও তাঁকে গ্রেফতার করা তো দূর, উল্টে ঘটনাটি আপোষে মিটিয়ে নিতে ওই কিশোরীর পরিবারকে বৃহস্পতিবার সকালে থানায় ডেকে পাঠায় সাগরদিঘি থানার পুলিশ।
ছাত্রীর বাবার দাবি, পুলিশ চাইছে থানায় ডেকে ঘটনার মীমাংসা করতে। তিনি বলেন, ‘‘কোনও আপোষ নয়, আমি চাই ঘটনার তদন্ত করে অভিযুক্তের শাস্তির ব্যবস্থা করুক পুলিশ।’’ মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘সাগরদিঘির মানসিংহপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বছর এগারোর ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশকে মামলা দায়ের করতে বলা হয়েছে। অভিযোগটি গুরুতর।’’ তা হলে পুলিশের বিরুদ্ধেই মীমাংসা অভিযোগ তুলছেন কেন নিগৃহীতা কিশোরীর বাবা? পুলিশ সুপারের জবাব, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখছি কোন পুলিশ অফিসার, কেন এই মীমাংসার কথা বলেছেন।’’ অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জিটিয়া হাঁসদা বুধবার থানায় আসা সত্বেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি কেন সে প্রশ্নও তুলেছেন স্বয়ং পুলিশ সুপার।
সাগরদিঘির গোবর্ধণডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের চিলাডাঙা গ্রামে মানসিংহপুর আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬৬ জন ছাত্রছাত্রী ও চার জন শিক্ষক রয়েছেন। এই স্কুলের বছর এগারোর এক ছাত্রী সোমবার বাড়ি ফিরে বাবাকে জানায় ওই স্কুলে আর পড়তে যাবে না সে। মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে বাবা প্রথমে বকাঝকা করেন। এরপরে বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই ওই কিশোরী মায়ের কাছে কান্নায় ভেঙে পড়ে। জানায়, প্রধান শিক্ষক কিছু দিন ধরেই তার সঙ্গে নোংরা আচরণ করছে। কিশোরীর মা বলেন, ‘‘মেয়ের মুখে সব ঘটনা শুনে আমি তো হতবাক। প্রতিবেশীদের সামনেও সব ঘটনা খুলে বলে মেয়ে।’’
মেয়েটি পুলিশকে জানিয়েছে, প্রধান শিক্ষক ছুটির পরে বেশ কিছু দিন ধরেই তার সঙ্গে অভব্য আচরণ করছে। সোমবার তা মাত্রা ছাড়ায়। পর দিন ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনা গোটা গ্রামে চাউর হয়ে যায়। গ্রামের লোকজন মঙ্গলবার দুপুরে স্কুলে গিয়ে দেখেন তাঁদের ক্ষোভ আঁচ করে স্কুল বন্ধ করে শিক্ষকেরা গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এরপরেই দু’একজন গ্রামবাসী ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তার বাবা যান সাগরদিঘি থানায়। জমা দেন লিখিত অভিযোগও। পুলিশ কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। কিশোরীর বাবার অভিযোগ, ‘‘মঙ্গলবার দুপুরে অভিযোগ জমা দেওয়ার পরে বুধবার ফের থানায় ডেকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। বেলা দেড়টা নাগাদ আমাদের সামনেই বাইকে করে এসে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জিটিয়া হাঁসদা ওসির ঘরে ঢোকেন। কিছুক্ষণ পরে বেরিয়েও যান।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবার ফের থানায় যেতে বলা হয়েছে। সে দিন প্রধান শিক্ষককে ডেকে ঘটনার মীমাংসা করিয়ে দেওয়া হবে। পুলিশের ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। কিন্তু আমি চাই ঘটনার তদন্ত করুক পুলিশ। শাস্তি পাক অভিযুক্ত।’’
অনেকেরই প্রশ্ন, এই ঘটনা প্রশ্রয় পেলে গ্রামবাসীরা মেয়েদের স্কুলে পাঠাবে কোন ভরসায়? গ্রামবাসীর একাংশ বলছেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অভিযোগ উঠেছে। গ্রামে সালিশি বসেছে। থানা-পুলিশও হয়েছে। ওই স্কুলের শিক্ষক মুরাদ শেখ বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় আমরাও লজ্জিত।’’ কী বলছেন অভিযুক্ত শিক্ষক? শ্লীলতাহানির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy