Advertisement
১১ মে ২০২৪

মাদ্রাসার ছায়া সেই মাধ্যমিকেও, পাশের হারে পিছিয়ে ছাত্রীরা

মা-বাবাই জানালেন, হাতে করে খাবার কিনে আনলেও ছেলে বিরক্ত হয়ে বলেছে, “এই টাকায় বরং কোনও রেফারেন্স বই কিনে আনতে পারতে।” 

নদিয়ার সৈকত সিংহরায়, মুর্শিদাবাদের আবীর রায় (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

নদিয়ার সৈকত সিংহরায়, মুর্শিদাবাদের আবীর রায় (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০১:৫৮
Share: Save:

পড়ার বইয়ের বাইরে আর কোনওকিছুই কোনও দিন ভাবতে পারেনি সে। স্কুল আর বাড়িতে মুখ গুঁজে পড়া—এটাই ছিল গত এক বছর কৃষ্ণনগর কলিজিয়েট স্কুলের ছাত্র সৈকত সিংহরায়ের জীবন। মা-বাবাই জানালেন, হাতে করে খাবার কিনে আনলেও ছেলে বিরক্ত হয়ে বলেছে, “এই টাকায় বরং কোনও রেফারেন্স বই কিনে আনতে পারতে।”

মোট ৬৮১ নম্বর পেয়ে এই সৈকত এ বছর মাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে নবম। নদিয়া জেলায় সে রয়েছে প্রথম স্থানে। নির্লিপ্ত ভাবেই বলল, “ঘুমোনোর সময় ছাড়া বাকি সময়টা বই নিয়েই কাটত। ভাল ফল করব বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আমি ডাক্তার হতে চাই।”

মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের শিক্ষক দম্পতির একমাত্র সন্তান আবীর রায় হতে চায় ইঞ্জিনিয়ার। জিয়াগঞ্জ রাজা বিজয় সিংহ বিদ্যামন্দিরের ছাত্র আবীর এ বছর মাধ্যমিকে মুর্শিদাবাদের সম্ভাব্য প্রথম। সাতটি বিষয়ে লেটার পেয়েছে। মোট নম্বর ৬৭৬। বাবা রণজিৎ রায় ও মা পাপিয়া রায় দু’জনেই শিক্ষক।

তাঁরা জানালেন, পরীক্ষার আগের দু’মাস প্রতি দিন ৮-৯ ঘন্টা পড়াশোনা করেছে আবীর। তার শখ হল রান্না করা। পড়াশোনার একঘেয়েমি কাটাতে রান্না করতে শুরু করত। মাংস-ফ্রায়েড রাইস-বিরিয়ানি রান্না করে ফেলত ঝটাপট। এ ছাড়া টিভিতে কার্টুন দেখতেও খুব ভালবাসে সে। মুর্শিদাবাদে মেয়েদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রথম নিশাত তানসিম। লালগোলা শৈলজা মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী নিশাত সাতটি বিষয়ে লেটার পেয়েছে।

সদ্য প্রকাশিত মাদ্রাসারর পরীক্ষার ফলের মতোই মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও নদিয়া-মুর্শিদাবাদের মেয়েরা পাশের হারে ছেলেদের থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। তবে পরীক্ষায় বসার সংখ্যায় ও পাশের মোট সংখ্যায় ছেলেদের পিছনে ফেলেছে মেয়েরা। মুর্শিদাবাদে মাধ্যমিকে সার্বিক পাশের হার ৮০.৪৭ শতাংশ, সেখানে নদিয়ার সার্বিক পাশের হার ৮৩.৫০ শতাংশ। মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালন কমিটির মুর্শিদাবাদের আহ্বায়ক শেখ মহম্মদ ফুরকান বলেন, “পাশের হারে মেয়েদের যতটুকু ঘাটতি রয়েছে সেটাও আগামীতে মিটে যাবে বলে আমরা আশাবাদী। মেয়েরা ঠিক লড়ে নেবে।’’

এ বছর মুর্শিদাবাদে মাধ্যমিকে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৮৬৩৩৩ জন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১১ হাজার বেশি। ৩৩১৩৭ জন ছাত্র এবং ৫৩১৯৬ জন ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছিল। তার মধ্যে ২৯৪৫৯ জন ছাত্র এবং ৪০,০১৯ জন ছাত্রী পাশ করেছে। জেলায় ছেলেদের থেকে ১০৫৬০ জন মেয়ে বেশি পাশ করেছে। মুর্শিদাবাদে ছাত্রদের পাশের হার ৮৮.৯০ শতাংশ এবং ছাত্রীদের ৭৫.২৩ শতাংশ।

নদিয়া জেলায় মোট ৭২১৯০ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। ৩০৪৭৭ জন ছাত্রের মধ্যে ২৭২৯৬ জন এবং ৩৪২৩২ জন ছাত্রীর মধ্যে ২৮১৩৮ জন পাশ করেছে। ছেলেদের পাশের হার ৮৯.৪৩ শতাংশ, আর মেয়েদের ৮২.১৭ শতাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE