নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে বোমা। — নিজস্ব চিত্র।
জমির মালিকানা কার, তা নিয়ে তৃণমূলের দু’গোষ্ঠীর সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল শনিবার। চলছিল বোমাবাজিও। পুলিশি টহল শুরু হতেই সে দিনের মতো দাঁড়ি পড়ে বোমাবাজিতে। রবিবার সকাল থেকেই ফের দু’গোষ্ঠীর বোমাবাজি শুরু হয় মুর্শিদাবাদের সুতিতে। অভিযোগ, পুলিশ ঢুকতেই বোমা ছুঁড়তে ছুঁড়তে গ্রাম ছাড়ে দুষ্কৃতীরা। এ দিন স্থানীয় তৃণমূল নেতা মোর্তুজ আলি ও তাঁর ছেলে সেকেন্দার আলির বাড়ি থেকে মোট ৫০টি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর জানান, জমির মালিকানা নিয়ে দু’টি গোষ্ঠীর বিবাদ থেকেই এই সংঘর্ষ। ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফের পুলিশি টহল শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রাতে পুলিশি টহল বন্ধ হতেই ফের সংঘর্ষে জড়ায় এলাকায় সুতির মধুপুর এলাকার তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত সানাউল হক ও মোর্তুজ আলির গোষ্ঠীর অনুগামীরা। ঘণ্টা খানেক চলে সংঘর্ষ। সে খবর পেয়ে পুলিশ গ্রামে ঢুকতেই বোমা ছুঁড়তে ছুঁড়তে গ্রাম ছাড়ে দুষ্কৃতীরা। এ দিন সকালে বোমাবাজির মধ্যে পড়ে আহত হন বছর পঞ্চাশের সাত্তার শেখ। তিনি মহেশাইল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। সাত্তার বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে দোকানে যাচ্ছিলাম।
তখন বোমা পড়তে শুরু করে। পালাতে গিয়ে বোমার টুকরো এসে গায়ে লাগে।’’
এ দিন সকালে বোমাবাজি ফের শুরু হতেই মধুপুরের বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। অন্তত ২০টি বোমা ফাটে বাহারুল শেখের বাড়ির সামনে। বাহারুলের স্ত্রী জাহেরা বিবি বলেন, ‘‘গ্রামের সকলেই আতঙ্কে।’’ এলাকার অনেকেরই অভিযোগ, দু’পক্ষই তৃণমূল করে বলে পুলিশ এখনও সক্রিয় হয়নি। সশস্ত্র পুলিশ টহল দিলেও এখনও পর্যন্ত গ্রেফতারও হয়নি কেউ।
কিন্তু, কী থেকে গোলমাল?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রাস্তার ধারের ১৪ কাঠা জমি নিয়ে বিবাদ দীর্ঘ দিনের। স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা সানাউল হক ও মোর্তুজ আলির মধ্যে শনিবার দুপুর থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও বোমাবাজি চলছে। শনিবার দু’ঘণ্টার সংঘর্ষে দু’শোরও বেশি বোমা ফাটে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, দু’পক্ষই বহিরাগত দুষ্কৃতীদের নিয়ে প্রস্তুত হয়েই পরস্পরের উপরে হামলা চালিয়েছে। সানাউলের স্ত্রী সিপিএম থেকে নির্বাচিত মধুপুরের গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যা। মাস চারেক আগে তাঁরা যোগ দেন তৃণমূলে। মোর্তুজ আলি জগতাইয়ের পূর্বতন কংগ্রেস প্রধান। তিনি তৃণমূলে যোগ দেন বছর খানেক আগে। পুলিশ জানায়, ১৪ কাঠা ওই সম্পত্তির মালিক ছিলেন এক বৃদ্ধা। তৃণমূলের দু’গোষ্ঠীরই দাবি ওই মালিকানা এখন তাঁদের। দু’পক্ষই অন্তত বার চারেক জমিটি দখল করেছে।
অভিযোগ, পুলিশের সাহায্যে জমিটি কিছু দিন আগে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে নেন মোর্তুজ আলি । শনিবার সানাউল দলবল নিয়ে সেই বাঁশের বেড়া ভেঙে দুপুর আড়াইটে নাগাদ জমিটির দখল নিতে আসে । খবর পেয়ে বাধা দেয় মোর্তুজের দলবল। তারপরই থেকেই চলছে সংঘর্ষ ও বোমাবাজি। দুটি গাড়ি নিয়ে পুলিশ গেলেও বোমাবাজির দাপটে শনিবার দীর্ঘক্ষণ গ্রামে ঢুকতে পারেনি তারা। আতঙ্কে দৌড়তে থাকেন গ্রামবাসী। কেউ কেউ ভয়ে বাড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। কেন দেরিতে পুলিশ এল, তা নিয়ে ক্ষোভও জানান কিছু গ্রামবাসী। রবিবার সকাল থেকে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গ্রাম। ঘণ্টা খানেকে একশোরও বেশি বোমা পড়ে। এরপরেই পুলিশ হানা দেয় মোর্তুজা ও তাঁর ছেলের বাড়িতে।
গ্রামবাসীদের অনেকেরই বক্তব্য দুই গোষ্ঠীর দুই নেতাকে না ধরতে পারলে বোমাবাজি বন্ধ হবে না। তৃণমূলের সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস সংঘর্ষ ও বোমাবাজিতে দলের দুই গোষ্ঠীর নেতারা জড়িত, তা মেনেছেন। তাঁর সাফ কথা, ‘‘পুলিশের কাজ পুলিশ করবে। এ ব্যাপারে দলের কেউ কোনও হস্তক্ষেপ করবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy