Advertisement
E-Paper

ট্যাঙ্কার উল্টে বিপত্তি,অরন্ধন গ্রামে

পকেটে বারবার হাত চলে যাচ্ছে। বলা ভাল, হাতটা এক রকম নিশপিশ করছে। কিন্তু না, উপায় নেই।মাথায় একটু ধোঁয়া দিতে যে এ তল্লাট ছেড়ে পালাবেন, সে পথও নেই। উল্টে তাঁর উপরেই কি না দায়িত্ব বর্তেছে, ছেলেছোকরাদের নিয়ে মাইক হাতে বেরোতে হবে। ঘরে ঘরে জানাতে হবে তো— এ বেলাটা আর উঁনুন ধরাবেন না।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩০
এ ভাবেই চুঁইয়ে বেরোচ্ছে গ্যাস। — সুদীপ ভট্টাচার্য

এ ভাবেই চুঁইয়ে বেরোচ্ছে গ্যাস। — সুদীপ ভট্টাচার্য

পকেটে বারবার হাত চলে যাচ্ছে। বলা ভাল, হাতটা এক রকম নিশপিশ করছে। কিন্তু না, উপায় নেই।

মাথায় একটু ধোঁয়া দিতে যে এ তল্লাট ছেড়ে পালাবেন, সে পথও নেই। উল্টে তাঁর উপরেই কি না দায়িত্ব বর্তেছে, ছেলেছোকরাদের নিয়ে মাইক হাতে বেরোতে হবে। ঘরে ঘরে জানাতে হবে তো— এ বেলাটা আর উঁনুন ধরাবেন না।

এমন ওজর-আপত্তির যথেষ্ট কারণ আছে। হলদিয়া থেকে শিলিগুড়ির রানিনগর যাচ্ছিল রান্নার গ্যাস বোঝাই একটি ১৭ টনের ট্যাঙ্কার। বৃহস্পতিবার ভোর চারটে নাগাদ কৃষ্ণনগরের নৃসিংহপুরে কৃষ্ণনগর-নবদ্বীপ রাস্তায় একটা বিপজ্জনক বাঁকের মাথায় হঠাৎই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় সেটি। আর সঙ্গে সঙ্গেই ট্যাঙ্কার ফুটো হয়ে গ্যাস বেরোতে থাকে।

রান্নার গ্যাসের গন্ধ পেয়ে এলাকার লোকজনই কোতোয়ালি থানায় খবর দেন। খবর যায় দমকলেও। এর পর পুলিশই মাইক হাতে প্রচার শুরু করে। রাস্তায় নেমে পড়ে স্থানীয় লোকজনও। কারণ সামান্য অসতর্ক হলেই বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে প্রচার করা হয়— ‘‘গ্যাস ট্যাঙ্কার না তোলা পর্যন্ত আপনারা রান্না করবেন না। আগুন জ্বালালেই বিপদ। বিশেষ করে ছেলেরা, ভুলেও বিড়ি-সিগারেট ধরাবেন না যেন।’’ বাড়ি বাড়ি গিয়েও জানাতে থাকেন পুলিশকর্মীরা। তা ছাড়াও স্থানীয় লোকজনও পুলিশের পরামর্শ মতো এলাকায় মাইকিং করতে থাকেন।

দরজায় পুলিশ, দিকে দিকে মাইকে প্রচার, নিমেষে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কৃষ্ণনগর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নৃসিংহপুরে। আশপাশের চুর্ণিপোতা, মোদকপাড়া, দেপাড়াতেও একই ছবি। ঘরে ঘরে হাঁড়ি চাপেনি। অনেকে আবার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন। কেউ কেউ সপরিবার হোটেলে। এমনকী নৃসিংহদেবের মন্দিরেও ভোগ রান্না হয়নি এ দিন।

বাড়িতে ‘অরন্ধন’ হলেও চলে, কিন্তু যাদেরদিন আনি দিন খাই? দিনভর ঝাঁপবন্ধ ছিল নৃসিংহপুর বাজারের চায়ের দোকানটায়। মিষ্টির দোকানেও গ্যাস জ্বলেনি।

বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচলও। শুধুমাত্র মোটরবাইক ও কিছু ছোট গাড়িকে অনুমতি দেওয়া হয়। তা-ও স্টার্ট বন্ধ করে দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার ঠেলে গাড়ি পারাপার করতে হয়েছে।

খবর পেয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে চলে আসে। দিনভর গ্যাস ট্যাঙ্কারটিতে জল দিয়ে ঠান্ডা রেখেছে দমকলবাহিনী। পাশেই একটা বড় জলাশয় থাকায় জল পেতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়নি দমকলকে। এ দিকে এ দিন দুপুরে আইওসির সুরক্ষা দফতরের লোকজন কল্যাণী থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তাঁরা কত দূর পর্যন্ত গ্যাস ছড়িয়েছে, তা পরীক্ষা করে দেখেন। হুগলির মগরা এলাকা থেকে তিনটি বড় ব্রেক ডাউন ভ্যান(হাইড্রা) ডাকা হয়। এ দিন সন্ধ্যা নাগাদ গাড়ি তোলার কাজ শুরু হয়। এ দিকে খবর পেয়ে এ দিন দেপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অঞ্জনা দাস, কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের বিডিও স্বাতী দত্ত মুখোপাধ্যায় ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন।

নৃসিংহপুরের বাসিন্দা সাগর ঘোষ বলেন, “পুলিশ বাড়িতে এসে রান্না করতে নিষেধ করেছে। শুধু রান্না নয়, আগুন জ্বালানোই চলবে না। ভয়ে বাড়িতে রান্না করিনি। দুই নাতি-সহ বাড়ির সকলেই আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। শুধু আমি রয়েছি।’’ বৃদ্ধা রসবালা ঘোষ অবশ্য জানালেন, বাড়িতেই গুড়-চিড়ে খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন। নৃসিংহপুর বাজারের এক মিষ্টি ব্যবসায়ী আনন্দ মোদকের কথায়, “প্রতি দিন ৫০ লিটারের উপর দুধ দিয়ে নানা ধরনের মিষ্টি তৈরি হয় দোকানে। কিন্তু এ দিন আর উনুন ধরাতে পারিনি। কী আর করব বলুন!’’

Tanker Dweller
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy