Advertisement
০৪ মে ২০২৪
জামিন অযোগ্য ধারা পুলিশের

শাসন করায় জেল হাজতে প্রধান শিক্ষক

গুরুতর অভিযোগেও তদন্তের নামে সাধারণ মানুষ যে পুলিশের গয়ংগচ্ছ ভাব দেখতেই অভ্যস্থ, সেই রানাঘাট থানার পুলিশ এক অভিযোগেই একেবারে ৩০৮ ধারায় মামলা করে বসল! প্রশ্ন তুলেছেন ওই স্কুলের শিক্ষকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ১১:২০
Share: Save:

দিন সাতেক কামাই করে স্কুলের প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় সটান হাজির হওয়ায় প্রধান শিক্ষক চেয়েছিলেন নিতান্তই একটা ডাক্তারি সার্টিফিকেট। বলেছিলেন, ‘‘স্কুলের একটা নিয়ম কানুন আছে তো বাবা!’’

সার্টিফিকেটের বদলে অভিভাবক? না তা-ও আনতে পারবে না, দশম শ্রেণির ছাত্রটি। মুখের উপর জবাব দিয়েছিল সে। কিঞ্চিৎ রেগেই ছাত্রটির কান টেনে ধরেছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভাস্কর বিশ্বাস।

সেই ‘দোষে’ যে রানাঘাট নাসরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবীণ ওই শিক্ষকের হাজতবাস হবে, তা কে জানত! স্কুলের অভিভাবক থেকে ছাত্র— সকলেই তাই, ওই ঘটনায় বিস্মিত।

ছাত্রটির বাবার করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ভাস্করবাবুর বিরুদ্ধে ৩০৮ ধারায় মামলা রুজু করে। যার জেরে রানাঘাট আদলত বুধবার তাঁকে ১৪ দিনের হাজতবাসে পাঠিয়েছে।

গুরুতর অভিযোগেও তদন্তের নামে সাধারণ মানুষ যে পুলিশের গয়ংগচ্ছ ভাব দেখতেই অভ্যস্থ, সেই রানাঘাট থানার পুলিশ এক অভিযোগেই একেবারে ৩০৮ ধারায় মামলা করে বসল! প্রশ্ন তুলেছেন ওই স্কুলের শিক্ষকেরা।

কী এমন মারধর, যার জন্য মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ভেবে পুলিশ এমন ধারা প্রয়োগ করল? দশম শ্রেণির ওই ছাত্রটি অবশ্য হাসপাতালে চিকিৎসার পরেই চলে গিয়েছে ‘আত্মীয়ের বাড়ি’। তার বাড়ির লোক জানিয়েছেন, পরীক্ষা দেওয়ার তার আর তেমন আগ্রহ নেই। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রটির বাড়ি কুপার্স ক্যাম্প এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে।

ওই স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, টানা তিন দিনের বেশি কামাই হলে পড়ুয়াদের চিকিৎসকের সার্টিফিকেট বা নিদেন পক্ষে অভিভাবককে স্কুলে নিয়ে আসাটাই নিয়ম। ছাত্রটি সে সবরে কোনও ধার ধারেনি। স্কুলের এক শিক্ষক বলেছেন, ‘‘ভাস্করবাবু ছাত্রটিকে বলেছিলেন, ‘বাড়ির কাউকে অন্তত নিয়ে এস বাবা!’ ছেলেটি সটান ‘না’ বলে দেয়। তাতেই রেগে গিয়ে কান মুলে দিয়েছিলেন উনি।’’

তার সহপাঠীরা জানিয়েছে, ওই ছেলেটি, কিছুক্ষণ পরে, ‘কান দিয়ে রক্ত পড়ছে’ বলে চিৎকার করে জুড়ে দেয়। খানিক পরে ফিরে যায় বাড়ি। আর তার পরেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রটির বাবা জয়ন্ত মণ্ডল। জয়ন্তবাবু বলেন, “আমার ছেলেটা শারীরিক ভাবে বড্ড দুর্বল। সেই জন্যেই সে মাঝে মাঝে স্কুলে যেতে পারে না। তা বলে শিক্ষক ওকে এ ভাবেবে মারধর করবে।’’

জখম প্রদীপকে প্রথমে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার সেখান থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ অবশ্য বুধবার রাতেই ভাস্করবাবুকে তাঁর বীরনগরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার তাঁকে রানাঘাট আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেয়। বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি প্রশান্ত সরকার বলেছেন, “ওই ছেলেটিকে নিছক শাসন করতে গিয়ে ভাস্করবাবু বিপদে পড়ে গেলেন।’’ এ দিন আদালত কক্ষে দাঁড়িয়ে ভাস্করবাবু বলেন, “আসলে আমি চাই পড়ুয়ারা নিয়মিত ভাবে স্কুলে আসুক। তাকেও সেটাই বোঝাতে গিয়ে কান ধরে টান দিয়েছিলাম মাত্র।”

বীরনগরের প্রাক্তন পুরপ্রধান পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ওর বিরুদ্ধে কখনও কোনও অভিযোগ শুনিনি। কী এমন হল যে পুলিশ এমন ধারা দিল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE