Advertisement
E-Paper

রহমতকে সুস্থ করতে মরিয়া অমিত, রণজিৎ

এমনই সব এলোমেলো ভাবনায় ট্রেনের ভোঁ শুনতে পাননি তিনি। ট্রেনটা বেরিয়ে যেতেই দেখা যায়, যুবকটি রেললাইনের পাশে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। মাস দু’য়েক আগের সেই দৃশ্য দেখে পাশ কাটিয়ে যাননি রানাঘাটের অমিত ভাস্কর ও রণজিৎ সাহা।

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭ ১৩:২০
আশ্রয়ে:রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের মেঝেতে সুস্থ হয়ে ওঠা রহমত আলি। নিজস্ব চিত্র

আশ্রয়ে:রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের মেঝেতে সুস্থ হয়ে ওঠা রহমত আলি। নিজস্ব চিত্র

রেল লাইন ধরে হাঁটছিলেন যুবকটি।

ভিন্‌রাজ্যে এসে মাথায় পাক খাচ্ছিল নানা চিন্তা। একটা কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। মাথার উপরে এক টুকরো ছাদ...

এমনই সব এলোমেলো ভাবনায় ট্রেনের ভোঁ শুনতে পাননি তিনি। ট্রেনটা বেরিয়ে যেতেই দেখা যায়, যুবকটি রেললাইনের পাশে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। মাস দু’য়েক আগের সেই দৃশ্য দেখে পাশ কাটিয়ে যাননি রানাঘাটের অমিত ভাস্কর ও রণজিৎ সাহা।

‘পুলিশে ছুঁলে কী হবে’ না ভেবে পাঁজাকোলা করে ওই যুবককে টোটোয় তুলে সটান তাঁরা নিয়ে যান রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানান, ওই যুবকের ডান পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে। অমিত ও রণজিৎ চিকিৎসককে জানিয়ে দেন, তাঁরাই ওই যুবকের দেখাশোনা করবেন।

হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ওই যুবক জানান, তাঁর নাম রহমত আলি। বাড়ি বিহারের বাজিতপুরে। বাবা-মা নেই। বাড়িতে রয়েছেন দাদা, বৌদি ও ভাইপো। তিনি সেখানে একটা লোহার দোকানে কাজ করতেন। কিন্তু তেমন আয় হচ্ছিল না। সেই কারণেই একটু বেশি রোজগারের আশায় তিনি ঘর ছেড়ে শিয়ালদহের ট্রেন ধরেন। সেখান থেকে রানাঘাটে নেমেই এমন কাণ্ড।

রহমত জানান, শিয়ালদহে নামার পরে তাঁকে কয়েক জন পরামর্শ দেন, গ্রামের দিকে ভাল কাজের সুযোগ আছে। রানাঘাটের কথাও তাঁদের মুখ থেকেই শুনেই তিনি উঠে পড়েন কৃষ্ণনগর লোকালে। তাঁর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে এসে কাজ পাওয়ার আগেই আমি দু’জন আত্মীয় পেয়ে গেলাম। ওঁরা আমার জন্য যা করলেন তা জীবনে ভুলব না।’’ যা শুনে লাজুক হাসছেন রানাঘাটের মিষ্টি ব্যবসায়ী অমিত ভাস্কর ও টোটো চালক রণজিৎ সাহা। তাঁরা বলছেন, ‘‘এ আর এমন কী! যে কেউই এটা করতেন।’’ কিন্তু দিন কয়েক আগে পায়রাডাঙা স্টেশনের ঘটনা কিন্তু তেমনটা বলছে না। রানাঘাটের বাণীনগরের মানিক মধু নামে যুবক ট্রেনের ধাক্কায় লুটিয়ে পড়েন আপ প্ল্যাটফর্মে।

অভিযোগ, যন্ত্রণায় ছটফট করছেন দেখেও কেউ সাহায্যের হাত বাড়াননি। রেল পুলিশও আসতে অনেক দেরি করে। ঘণ্টাখানেক ওই ভাবেই পড়ে থাকার পরে পুলিশ যখন আসে তত ক্ষণে নিথর হয়ে গিয়েছে মানিকের দেহ। এমন অভিযোগের কথা পুলিশ মানতে না চাইলেও মানিকের এক পড়শি সঞ্জয় সরকারের অভিযোগ, একটা তরতাজা ছেলে ট্রেনের ধাক্কায় প্ল্যাটফর্মে পড়ে কাতরাচ্ছে। সেটা দেখে কেউ তো এগিয়ে আসেননি। ছেলেটার দেহের উপর দিয়েই ট্রেন থেকে যাত্রীরা ওঠানামা করেছেন।

তবে বহু যাত্রীরই অভিযোগ, ট্রেনে কোনও দুর্ঘটনা হলে সাহায্যের হাত বাড়াতে গিয়ে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। সবথেকে বেশি সমস্যায় ফেলে রেল পুলিশ। যা শুনে রানাঘাট জিরআরপি-র আইসি দেবকুমার রায় বলছেন, ‘‘এটা একেবারেই ভুল ধারণা। বিপদে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে। সেটাই তো স্বাভাবিক। পুলিশ কেন সমস্যায় ফেলবে?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এই তো মাস দু’য়েক আগে বিহারের এক আহত যুবককে রেললাইন থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো থেকে যাবতীয় দায়িত্ব সামলেছেন রানাঘাটের দুই যুবক। কই, তাঁদের তো কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি!’’

সম্প্রতি রহমতকে রানাঘাট থেকে নিয়ে আসা হয়েছে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে। সেখানেই তাঁর পায়ের অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। অমিত ও রণজিৎ বলছেন, ‘‘আমরা যতটা পারছি, করছি। বিষয়টি রানাঘাটের মহকুমাশাসককেও জানিয়েছি। এখন ঘরের ছেলে ভালই ভালই ঘরে ফিরতে পারলেই আমরা খুশি।’’

মহকুমাশাসক প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। রহমতের বাড়ির লোকজনের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বিপদের সময় ওই দুই যুবক যে ভাবে রহমতের পাশে দাঁড়িয়েছেন সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়।’’

Communal Harmony Hindu Muslim রহমত আলি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy