সদ্য মা হয়েছেন। নবজাতকের দেখভাল করতে সম্বল সেই মা-মাসিদের উপদেশ। কিন্তু, চিকিৎসকরা বলছেন, পরিচর্যার সেকেলে পদ্ধতি অনেক সময় শিশুর পক্ষে ক্ষতিকর। বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে শিশুর পরিচর্যা করলে ভবিষ্যতে অনেক বড় রোগ এড়ানো যায়। এ বার হাসপাতালে মায়েরা শিশু পরিচর্যার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের দেখভালের অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে পারবেন।
স্বাস্থ্য ভবন রাজ্যের ৯৫টি হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে দু’টি করে বড় এলইডি টিভি বসাচ্ছে। সেই টিভিতে দিনভর শিশু এবং মায়েদের পরিচর্যার নানা খুঁটিনাটি বিষয় দেখানো হবে। তার জন্য মোট দু’ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতাল পাবে তিন লক্ষ টাকা করে। আগামী এক মাসের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে নতুন এই ব্যবস্থা।
সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এই নির্দেশ জারি করেছে। কলকাতার এসএসকেএম-সহ রাজ্যের সব কটি মেডিক্যাল কলেজ, জেলা সদর হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল এবং স্টেট জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে দুটি করে এলইডি টিভি বসানো হবে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং মেডিক্যাল কলেজগুলির মেডিক্যাল সুপারদের কাছে সেই নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে।
নির্দেশে বলা হয়েছে, টিভিগুলি হবে ৫২ ইঞ্চি মাপের। নির্দিষ্ট দরপত্র দিয়েই টিভিগুলি কিনতে হবে। সেগুলি যেন দিনভর চলতে সক্ষম হয়। অন্তত সারা দিনে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ১৮ ঘণ্টা চলতে পারে। সেগুলিকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী সর্বোচ্চ রেটিংয়ের হতে হবে। টিভিগুলিতে ইনবিল্ট ডিভিডি প্লেয়ার এবং ইউএসবি ড্রাইভ থাকতে হবে। টিভিতে চার জিবি মেমোরি থাকতে হবে। যাতে সেখানে যে কোনও ধরণের ডেটা রাখা যায়। দু’টি টিভি সেট বসানোর জন্য প্রতিটি হাসপাতাল তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারবে। যদি এই খরচের মধ্যে তার এর থেকে বড় মাপের টিভি কেনা সম্ভব হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজ বা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তা করতে পারে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন কার্যক্রমে এই প্রকল্প হবে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ সাহায্যেই এই প্রকল্প হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সাধারণ পরিবারের অধিকাংশ মায়েরা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে শিশুদের পরিচর্যার বিষয়ে বিশেষ অবহিত নন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মহিলারা বহু পুরনো পদ্ধতি অবলম্বন করেন, যা চিকিৎসকেরা বর্তমানে এড়িয়ে চলতে বলেন। যেমন ছ’মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খাওয়াতে নিষেধ করেন। নবজাতককে তেল মাখাতে বারণ করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে শিশুর টিকাকরণ হলে অনেক রোগ এড়ানো যায়। চিকিৎসকেরা মায়েদের অনেক সময় এ কথা বললেও আখেরে ফল হয় না। তার ফলে গ্রামাঞ্চলের বহু শিশু টিকাকরণের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, শব্দ ও দৃশ্যের মাধ্যমে যে কোনও বিষয় বোঝানো অনেক সহজ হয়। সেই জন্যই স্বাস্থ্য দফতর পরিকল্পনা করেছে, বিভিন্ন ঘটনা ও নানা তথ্য চিত্রের মাধ্যমে মায়েদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করা সম্ভব হবে। সদ্য মা হওয়া মহিলাদের মধ্যে নবজাতককে নিয়ে আগ্রহ বেশি থাকে। ফলে যে সময়টুকু তাঁকে হাসপাতালে কাটাতে হবে, সেই সময়ে টিভির নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা বোঝানো সম্ভব হবে।