হাসপাতাল রক্ত-শূন্য, তাই মোটরবাইক ছুটিয়ে রক্তের খোঁজে বহরমপুর যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন এক যুবক। আর তার জেরেই ক্ষোভটা জাঁপিয়ে পড়েছিল জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপারের ঘরে।
মারমুখী তৃণমুল কর্মীদের হাতে প্রায় ঘণ্টা তিনেক ধরে হেনস্থাই শুধু নয়, সুপার শাশ্বত মণ্ডলকে সুনতে হল— ‘‘সিপিএমের দাদাল, আপনি সরকারের বদনাম করতে চাইছেন!’’
ওই ঘটনার পরে, অপমানিত সুপার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে চিঠি লিখে দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘যা হয়েছে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানিয়েছি।’’ প্রসঙ্গত, নিগৃহীত ওই সুপারও তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠনেরই সদস্য। যা শুনে জেলা কংগ্রেসের চিমটি, ‘‘এমন একটা সংগঠন করেন উনি যারা দলের সভ্য-সমর্থকদেরও অপমান করতে ছাড়ে না।’’
এ দিন তৃণমূল কর্মীদের হাতে হেনস্থা হয়েছেন হাসপাতালের শিশু কেয়ার ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক সুব্রত মাঝিও।
কি হয়েছিল?
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার হাসপাতালে চড়াও হয়ে ওই তৃণমূল কর্মী, সমর্থকরা একদফা ভাঙচুর চালায়। রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশকে জানানো হয়। বুধবার যুব তৃণমূলের রঘুনাথগঞ্জ-২ ব্লকের সভাপতি আমিরুল শেখের নেতৃত্বে ফের একদল তৃণমূল কর্মী অফিসে আসেন স্মারকলিপি দিতে। টানা তিন ঘন্টা ধরে অশ্রাব্য গালিগালাজ দেয় তারা সুপারকে। সবটাই নীরবে দেখেছেন উপস্থিত পুলিশকর্মীরা।
শাশ্বত বলেন, ‘‘আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। তাই পদ থেকে এ দিনই অব্যাহতি চেয়েছি।’’
ওই হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার কিট না থাকায় মোটরবাইকে চড়ে বহরমপুরে রক্ত আনতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু হয়। তিনি রঘুনাথগঞ্জ থানার সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন। তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর চালায় এক দল তৃণমূল কর্মী। বুধবার দুপুরেও দলের লোকজন নানা অব্যবস্থা নিয়ে ফের স্মারকলিপি দিতে আসে হাসপাতাল সুপারের কাছে। সেখানে ডেকে পাঠানো হয় চিকিৎসক সুব্রত মাঝিকেও।
আমিরুলের পাল্টা অভিযোগ, “সরকারকে হেয় করার জন্য হাসপাতালে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। রক্ত পরীক্ষার কিট, ব্যাগ ফুরিয়ে গেলেও তা আনা হচ্ছে না।তাই আমরা বিক্ষোভ দেখিয়েছি।’’
আমিরুলের অভিযোগ, “কিট থাকলে রক্ত আনতে ওই যুবককে বহরমপুরে যেতে হত না। দুর্ঘটনাও ঘটত না।’’ তাহলে দুর্ঘটনাও আগাম নিশ্চিত করা যায়? আমিরুল তার উত্তর দিতে পারেননি। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন।
তৃণমূল নেতাদের দাবিতে এ দিন রোগীদের খাবারের মানও ‘পরীক্ষা’ করানো হয় সুপারকে দিয়ে। শাসক দলের কর্মীরা নিজেরাই খাবারের থালা নিয়ে আসন সুপারের ঘরে। ঝোল-ঢাল সমেত খাবারের প্লেট রেখে দেওয়া হয় সুপারের টেবিলে।
দাবি, খাবারে দুর্গন্ধ। সেই খাবার খেতে হবে সুপারকে। অবিলম্বে শো কজ করতে হবে ঠিকাদারকে। তাদের দাবি মেনে শো কজ করা হয় তাপস ঘোষ নামের ওই ঠিকাদারকে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা বলেন, ‘‘সুপারকে হেনস্থার ঘটনা শুনেছি। মানসিক ভাবে তিনি যে বিপর্যস্ত, এটা আমাকে জানিয়েছেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে বলেছি।’’