Advertisement
০৭ মে ২০২৪

বাড়ি ৪৫০, ফর্ম পনেরো হাজার

বাড়ি বরাদ্দ মাত্র ৪৫০টি। আর তা পেতে গত ১৭ দিনে শুধু অরঙ্গাবাদেই আবেদনপত্র জমা পড়ল ১৫,২৬৫টি! গৃহহীন বিড়ি শ্রমিকদের বাড়ি তৈরির জন্য টাকার পরিমাণ ৪০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় লক্ষ করা হয়েছে।

ফর্ম জমা দিতে লম্বা লাইন। —নিজস্ব চিত্র

ফর্ম জমা দিতে লম্বা লাইন। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
অরঙ্গাবাদ শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৩
Share: Save:

বাড়ি বরাদ্দ মাত্র ৪৫০টি। আর তা পেতে গত ১৭ দিনে শুধু অরঙ্গাবাদেই আবেদনপত্র জমা পড়ল ১৫,২৬৫টি!

গৃহহীন বিড়ি শ্রমিকদের বাড়ি তৈরির জন্য টাকার পরিমাণ ৪০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় লক্ষ করা হয়েছে। পুজোর আগে আবেদনপত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয় কেন্দ্রীয় বিড়ি শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ। ৩১ অক্টোবর ছিল তা জমা দেওয়ার শেষ দিন। শেষ দিনে জমা পড়েছে প্রায় ২৮০০ আবেদনপত্র।

যদিও কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, ‘আগে এলে আগে পাবে’ এই নিয়মেই বাড়ি দেওয়া হবে। তবে বাড়ি পেতে গেলে ১২ দফা নয়া শর্ত পূরণ করতে হবে।

শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি পেতে গেলে ৬০ বর্গ মিটার নিজস্ব জমি থাকতে হবে। জমিটি যে পরিবারের কোনও ব্যক্তির এই মর্মে শংসাপত্র জমা নিতে হবে ব্লকের ভূমি ও ভুমি সংস্কার দফতরের কর্তাদের কাছ থেকে। পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়রের কাছ থেকে বাড়ি তৈরি প্ল্যান এস্টিমেটের অনুমোদন এবং আগামী ৫০ বছরের মধ্যে নির্মীয়মাণ বাড়িটি যে ভুমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এই মর্মে পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়রের থেকে শংসাপত্র জমা দিতে হবে আবেদনপত্রের সঙ্গে।

আর এই শর্ত পূরণ করতে গিয়ে বিড়ি শ্রমিকদের অনেকেই দালালদের খপ্পরে পড়েছেন। প্রকাশ্যে ছাপানো শংসাপত্র, প্ল্যান এস্টিমেট বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়। এমনকী আবেদন পত্র জমা দিতে দূরের গ্রাম থেকে আসা বিড়ি শ্রমিকদের ‘লাইন’ও কিনতে হয়েছে বিড়ি শ্রমিকদের আগে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার জন্য।

বিড়ি শ্রমিকদের ৯০ শতাংশই মহিলা। বরাদ্দের ৫০ শতাংশ যেহেতু দেওয়া হবে মহিলাদের, তাই বেশির ভাগ পরিবারই মহিলাদের নামে জমা পড়েছে আবেদনপত্র। চাচণ্ডের হাসেনুর বিবি, মিঞাপুরের দিলীপ মণ্ডল, ডিহিগ্রামের ম্যাকে বিবি বা আহিরণের রেখা মণ্ডলের অভিযোগ, বাড়ির টাকা আদৌ পাব কিনা ঠিক নেই, কিন্তু প্ল্যান এস্টিমেট থেকে পঞ্চায়েতের শংসাপত্র সব কিছুর জন্যই দালাল ধরতে হয়েছে তাঁদের। আবেদনপত্র পূরণ করে নিতে হয়েছে বাড়তি ১০০ টাকা গুনে।

শ্রম মন্ত্রকের নিমতিতা ডিসপেনসারিতে জমা নেওয়া হয়েছে আবেদনপত্রগুলি। এই ডিসপেনসারির চিকিৎসক হেফজুর রহমান বলেন, “বহু বিড়ি শ্রমিকের কোনও বাড়ি নেই। তাই এত দরখাস্ত জমা পড়েছে।’’

বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলি অবশ্য এইভাবে আবেদনপত্র জমা নেওয়ার আড়ালে বিড়ি শ্রমিকদের হয়রানি ও আর্থিক সমস্যার মধ্যে ফেলার অভিযোগ তুলেছেন।

সিটুর জেলা সভাপতি আবুল হাসনাত খান বলেন, “এর আগে ৪০ হাজার আবেদনপত্র একই ভাবে জমা নিয়ে তা খারিজ করে দেয় শ্রম মন্ত্রক। সেখানেও প্রতিটি শ্রমিককে মোটা টাকা গুনতে হয়েছিল। এ বারেও তারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে।” আইএনটিইউসি’র বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক বাদশার আলি বলেন, “শ্রম মন্ত্রকের কর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন প্ল্যান এস্টিমেট-সহ সব শংসাপত্র বিনা পয়সায় হাতে পাবেন শ্রমিকেরা। কিন্তু বাস্তবে প্রতিটি শ্রমিককেই এর জন্য দালালদের দিতে হয়েছে প্রায় হাজার টাকা করে।”

কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, আবেদনপত্রগুলি পরীক্ষা করতে একটি কমিটি গড়া হয়েছে। এ রাজ্য সব মিলিয়ে বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে ২৪০০। জমা পড়েছে লক্ষাধিক আবেদন পত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

House allotment Applications
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE