সামাল-সামাল: পর্যটকের ভিড়ে বোঝাই নৌকা। মঙ্গলবার নবদ্বীপের বড়ালঘাটে। ছবি: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
বিপদ আর বলে কাকে! সোমবার দুপুরের খাওয়া সেরে মায়াপুর যাবেন বলে সপরিবার বেরিয়েছিলেন নবদ্বীপের শান্তনু নন্দী। ভেবেছিলেন লঞ্চ ফাঁকা থাকবে। বড়ালঘাটে পৌঁছে টিকিট কাটতে গিয়ে তাঁর চোখ কপালে ওঠার জোগার। লঞ্চ অনেক দূরের কথা। জেটিতে থিকথিক করছে লোক। সময় নষ্ট না করে বাড়িতেই ফিরে আসেন তিনি। শনি-রবি বা ছুটির দিনে ভিড় চিরকালই হয়। কিন্তু তা বলে সোমবার কাজের দিনে এমন ভিড়! ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি শান্তনু।
নদিয়ার ভিড়ের ছবি যদি এমন হয়, তা হলে চোখ ফেরানো যাক মুর্শিদাবাদে। সুন্দরবন থেকে তিনটে গাড়ি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে লালবাগে বেড়াতে এসেছেন প্রহ্লাদ সরকার। বড়দিনের ছুটির এত আগে? তিনি বলেন, ‘‘লালবাগের হোটেলের ঘর বুক করার জন্য ফোন করে জানতে পারি, আগামী ২১ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ঘর খালি নেই। সে কথা জানতে পেরে কয়েক দিন আগেই এলাম। কিন্তু এসে দেখছি, ফাঁকা কোথায়? লোক গিজগিজ করছে।
দুই জেলার দুটি ঘটনা নেহাত বিচ্ছিন্ন নয়। বড়দিনের ঢের আগেই ভিড় বাড়তে শুরু করেছে দুই জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে। কাছাকাছি সময়ে এমন ভিড়ের কথা মনে করতে পারছেন না হোটেল মালিকরাও।
কেন এমন ভিড়? তার কিছুটা ব্যখ্যা মিলেছে ট্রাভেল এজেন্টদের কাছ থেকে। নদিয়ার ট্রাভেল এজেন্ট পিনাকি সরকার জানাচ্ছেন, গত বছর এই সময়ে তাঁর মাধ্যমে দার্জিলিং- গ্যাংটকে কমবেশি সত্তরটা বুকিং হয়েছিল। তার বেশি বুকিং নিতে পারেননি তিনি। কারণ, পাহাড় বা ডুয়ার্সে হোটেলের ঘর ফাঁকা পাননি। এবার ছবিটা বিলকুল উল্টো। পিনাকি বলেন, “এখনও দার্জিলিং নিয়ে কেউ খোঁজই নেননি। খান দশেক বুকিং হয়েছে গ্যাংটকে।” তাঁর মতে পাহাড়ের সেই ভিড়টা চারিয়ে যাচ্ছে সমতলে।
দুই জেলার হোটেল মালিকরা বলছেন, বড়দিনের জন্য দু’মাস আগে থেকেই ঘর বুক হয়ে গিয়েছে। পাহাড় পর্যটক না টানায় অনেকেই ওই সময় ঘর পাচ্ছেন না। তার ফলে অনেকে ছুটি নিয়ে আগে ঘুরে যাচ্ছেন। ফেডারেশন অফ বেঙ্গল হোটেলিয়ার্সের মায়াপুর শাখার সম্পাদক প্রদীপ দেবনাথ বলেন, “এই প্রথম দেখেছি প্রায় সারা ডিসেম্বরের শুরু থেকেই পর্যটকদের চাপ রয়েছে। সোম-মঙ্গলও বাদ যাচ্ছে না। আসলে বড়দিন বা নিউইয়ার্সে অস্বাভাবিক ভিড়ের চাপ এড়াতে অনেকে আগে ঘুরে যাচ্ছেন।”
পুলিশ প্রশাসনের হিসেবে গত বছর পয়লা জানুয়ারি প্রায় সওয়া লক্ষ মানুষ এসেছিলেন মায়াপুরে। ঘাট পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরে বহিরাগত পর্যটকরা গিজগিজ করছে লালবাগের রাস্তায়। গত দু’দিনের কুয়াশামাখা কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যেও পর্যটকদের ভিড় হাজারদুয়ারি প্রাসাদ চত্বরে। এমনিতেই আগামী ২৩-২৫ ডিসেম্বর তিন দিন ছুটি, পরে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ইংরেজি বর্ষবরণ, সব মিলিয়ে তিন দিন ছুটি থাকায় বহরমপুর ও লালবাগের বিভিন্ন হোটেলের ঘর পর্যটকরা আগাম বুক করে নিয়েছেন। এই অবস্থায় ছেলেমেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হতেই বেরিয়ে পড়েছেন অনেকেই। কোন্ননগরের সমরেশ সরকার ১৪ ডিসেম্বর সপরিবারের লালবাগ বেড়াতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেমেয়ের পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বড়দিনের ছুটিতে প্রচণ্ড ভিড়ের কথা জানতে পেরে আগেই বেড়াতে চলে এসেছি। এখানে এসে দেখি বড়দিনের ছুটির ভিড় এড়াতে আমার মতই ভাবনা নিয়ে অনেকেই বেড়াতে চলে এসেছেন। ফলে ভিড়ে ঠাসা লালবাগের রাস্তা।’’ লালবাগের এক হোটেল মালিক আশিস রক্ষিত জানান, গত বছর নোট বাতিলের কারণে পর্যটকদের দেখা মেলেনি। এবার সে লোকসান পুষিয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy