Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শস্যবিমায় ভরসা ইমাম, মোয়াজ্জিন

তিনি জানিয়েছেন, এর আগে, বাংলা শষ্যবিমা প্রকল্প এবং কৃষক বন্ধু প্রকল্পের ব্যাপারে প্রচার কম করেনি কৃষি দফতর। কিন্তু সাড়া তেমন মেলেনি। জেলার কৃষি কর্তারাই তা মেনে নিচ্ছেন। ইমামরা ভরসা দেওয়ায় এ বার সেই চেহারাটাই বদলে গিয়েছে। 

সচেতনতা শিবিরে ইমাম-মোয়াজ্জিনেরা। নিজস্ব চিত্র।

সচেতনতা শিবিরে ইমাম-মোয়াজ্জিনেরা। নিজস্ব চিত্র।

মফিদুল ইসলাম
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২৭
Share: Save:

কথার ওজন আছে বটে!

মোয়াজ্জিনদের নিদানে ইতিমধ্যেই হাতেনাতে ফল মিলেছে পালস-পোলিও থেকে বাল্যবিবাহ রদে। মসজিদের মাইক ঘোষণা করলে নির্মল বাংলা গড়তে লোকে যে মাঠ-ময়দানে শৌচকাজে ছুটতেও দ্বিধা করছে, নজর এড়ায়নি প্রশাসনের।

এ বার, বাংলা শস্য বিমার ফর্ম ইমাম-মোয়াজ্জিনদের হাতে তুলে দিয়ে তাই ফাটকা খেলতে চাইছে কৃষি দফতর। মুর্শিদাবাদ জেলাকে মডেল করে সে কাজই শুরু করেছে নবান্ন।

মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশানের কর্তারাও বলছেন, ‘‘ওঁদের কথায় তো ওজন আছে। গ্রামীণ মানুষ মান্যিগন্যি করে যে!’’

মডেলটা মুর্শিদাবাদকে দিয়েই শুরু করতে চাইছে নবান্ন। কৃষি দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘কৃষিজীবীদের মধ্যে শস্যবিমা নিয়ে অনাগ্রহটা নতুন নয়। সংখ্যালঘু প্রভাবিত মুর্শিদাবাদে অনীহাটা সবচেয়ে প্রকট। তাই জেলার ইমামদের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। তাঁরা যদি একটু বল-ভরসা জোগাতে পারেন।’’

কৃষি দফতরের সেই চেষ্টাকে অবশ্য খোলা মনেই নিয়েছেন ইমামেরা। মুর্শিদাবাদের জেলা ইমাম নিজামুদ্দিন বিশ্বাস বলছেন, ‘‘পিছিয়ে পড়া জেলা তো, মানুষের সব ব্যাপারেই সংস্কার। সরকারের এই উদ্যোগে যে কৃষিজীবীদেরই লাভ তা বোঝাতে হবে তো। মানুষ আমাদের কথায় ভরসা পায়, তাই মসজিদ থেকে আমরাই না হয় শস্য বিমার ফর্ম বিলি করব, আপত্তি কোথায়।’’

মুর্শিদাবাদ দিয়ে শুরু হলেও পরে মালদহ, পূর্ব বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়াতেও এ ব্যাপারে ইমামদের সাহায্য নেওয়া হবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।

সপ্তাহ দুয়েক আগে জেলার হরিহরপাড়া এলাকায় মোয়াজ্জিনদের দিয়ে শস্যবিমার ফর্ম বিলি শুরু হয়েছে। ফল যে যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক হরিহরপাড়ার মহকুমা কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) আনিকুল ইসলামের কথাতেই তা স্পষ্ট, ‘‘ইমাম-মোয়াজ্জিনদের পাশে পাওয়ায় ইতিমধ্যেই হরিহরপাড়া, ডোমকল, রানিনগর, জলঙ্গি ব্লকে যথেষ্ট সংখ্যক কৃষিজীবী শস্যবিমা করতে এগিয়ে এসেছেন।’’

তিনি জানিয়েছেন, এর আগে, বাংলা শষ্যবিমা প্রকল্প এবং কৃষক বন্ধু প্রকল্পের ব্যাপারে প্রচার কম করেনি কৃষি দফতর। কিন্তু সাড়া তেমন মেলেনি। জেলার কৃষি কর্তারাই তা মেনে নিচ্ছেন। ইমামরা ভরসা দেওয়ায় এ বার সেই চেহারাটাই বদলে গিয়েছে।

শুধু শস্যবিমা নয়, একই সঙ্গে এলাকায় প্রশিক্ষণ শিবির করে চাষিদের পাট পচানোর যে কৃত্রিম উপায় বাতলাচ্ছেন কৃষি কর্তারা সেখানেও ডাক দেওয়া হয়েছে মোয়াজ্জিনদের। তাঁদের উপস্থিতি বাড়তি সাহস জোগাবে সাধারন কৃষিজীবী মানুষকে, এই ভরসাতেই বুক বেঁধেছে কৃষি দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidsabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE