এমনই অবস্থা অঞ্জনা খালের। সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
সারাক্ষণ যানজট লেগেই রয়েছে
কৃষ্ণনগর একটি প্রাচীন শহর। অনেক প্রতিভাবান মানুষ কৃষ্ণনগর এই শহরে জন্মেছেন, কাজ করেছেন। সে কারণে এই শহরের নাগরিক হিসেবে আমি গর্বিত। তবে শহরের কিছু কিছু সমস্যা বড় পীড়া দেয়। শহরে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজবাড়িটি এখনও থাকলেও নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের নামে কোনও রাস্তাই নেই! শহরে প্রায় কুড়িটি হাইস্কুল ও তিনটি মহাবিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু যানজট সারাক্ষণ লেগেই রয়েছে। টোটো চালু হওয়ায় পর সেই অবস্থাটা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শহরের দু’টি বড় রাস্তা ডিএল রায় রোড ও আরএন টেগোর রোডে ফুটপাথ বলে কিছু নেই। পুরসভা দোকানিদের জন্য নির্দিষ্ট ঘর করে দিলেও তাঁরা পসরা নিয়ে মূল রাস্তায় উঠে আসেন। তা ছাড়া সাইকেল, মোটরবাইক, গাড়ি নিয়ম না মেনে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। সেই সঙ্গে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ হকার, খাবার স্টল। তাই বাধ্য হয়েই শহরবাসীকে মূল রাস্তা ধরে প্রাণ হাতে নিয়ে হাঁটতে হয়। বাসস্ট্যান্ড ও বেলেডাঙার মোড়ে যানজট নিত্য লেগে রয়েছে। তার উপরে সারাক্ষণ তারস্বরে গাড়ির হর্নে শিশুদের তো বটেই সাধারণ মানুষের শ্রবণশক্তি নষ্ট হওয়ার জোগাড়!
শহরের একমাত্র মিষ্টি জলের নদী—জলঙ্গি, যাকে সবাই আমরা আদর করে ‘খড়ি’ বলে ডাকি, তা এখন স্রোত হারিয়ে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনের সময় তা আরও ভয়ঙ্কর চেহারা নেয়। নানা জায়গায় ঘটা করে ‘জলঙ্গি কবিতা উৎসব’ পালন করা হলেও বাস্তবে নদী সংস্কারের দিকে কারও কোনও হোলদোল নেই। অন্য দিকে, শহরের মধ্যে বয়ে যাওয়া অঞ্জনা খালের উপর নিয়ম ভেঙে গজিয়ে উঠছে পাকা বাড়ি। মিছিল, প্রতিবাদ করেও কোনও সুরাহা হয়নি। প্রশাসনেরও এ ব্যাপারে কোনও হোলদোল নেই। অঞ্জনা খাল ও জলঙ্গির সংস্কার না করলে বর্ষা শুরু হলে নাগরিকদের প্রবল সমস্যায় পড়তে হবে। তাই মাতৃসমা জলঙ্গিকে নাব্য করে তোলার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের অনুরোধ করছি।
শহরের প্রধান রাস্তার নাম আরএন টেগোর রোড হলেও এখানে কোনও ‘রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র’ নেই। যদিও কবির পদধূলি পড়েছিল এই শহরে। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রধান ডাকঘরে এক সময় ‘নীলদর্পণ’ নাটক খ্যাত দীনবন্ধু মিত্র কাজ করতেন। কিন্তু আজও তাঁর নামে একটি লেটারবক্স উৎসর্গ করা হয়নি। ২০১২ সালে তৎকালীন চিফ পিএমজি তথ্য নিয়ে গিয়ে ছিলেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
এত বড় শহরে ছোটদের জন্য পার্ক থাকলেও বড়দের মিলিত হওয়ার জন্য তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। রাতে নদীর ধারে ও অন্যান্য জায়গায় মদ-জুয়ার আসর বসে। অথচ নদীতীরেই একটা মনোরম পার্ক করা যায়। শহরে মহিলাদের জন্য একটি ক্লাব গড়ে উঠলে ভাল হয়। স্বাস্থ্য পরিষেবারও আরও উন্নতি দরকার। রাস্তায় অসংখ্য নেড়ির জ্বালায় রাস্তায় বেরনো দায় হয়ে পড়ে। তাই ‘ডগ ক্যাচারে’র প্রয়োজন রয়েছে। শহরের অদূরে ঘূর্ণি এলাকার উন্নতি প্রয়োজন। এতে মৃৎ-শিল্পীরা উপকৃত হবেন।
প্রতিমা অধিকারী পোস্টমাস্টার, কৃষ্ণনগর
জবরদখলের জেরে অঞ্জনা এখন নালা
গত ১৪ ও ১৫ নদিয়া-মুর্শিদাবাদ পাতায় ‘আমার শহর’ —কৃষ্ণনগরকে নিয়ে সুস্মিত হালদারের দু’টি প্রতিবেদন পড়ে ভাল লাগল। তবে শহরের কিছু সমস্যা রয়েছে। এক সময়ে শহরের নিকাশি ব্যবস্থার মেরুদণ্ড অঞ্জনা খাল ‘অঞ্জনা নদী’ নামে পরিচিত ছিল। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘‘অঞ্জনা নদী তীরে চন্দনা গাঁয়, পোড়া মন্দিরখানা গঞ্জের বাঁয়...’’। শোনা যায়, নদীয়ারাজ মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রও নৌকাপথে অঞ্জনা নদী বেয়ে মুর্শিদাবাদে পৌঁছতেন। নদী বুজে গিয়ে এখন খালের তকমা পেয়েছে। ইদানীং সেই অস্তিস্ত্বটুকুও মুছে যাওয়ার জোগাড়। জবরদখল হতে হতে খাল নালায় পরিণত হয়েছে। তাই দখলদারদের হটিয়ে সংস্কার করে যদি খালের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা যায় তা হলে খুব ভাল হয়। দু’পাশে গাছ লাগিয়ে শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিও করা যেতে পারে।
কদমতলা হাট থেকে দ্বিজেন্দ্র সেতু পর্যন্ত একটি মাটির বাঁধটি চলে গিয়েছে। ২০০০ সালে বন্যার হাত থেকে শহরবাসীকে বাঁচিয়ে ছিল ওই বাঁধটিই। এখন বাঁধটির কোথাও কোথাও ভেঙে গিয়েছে। বাঁধের গাছপালাও উধাও হয়ে যাচ্ছে। এর প্রতি যত্নবান হলে ভাল হয়।
যানজট শহরের অন্যতম সমস্যা। ফুটপাথ কার্যত হকারদের দখলে চলে গিয়েছে। রয়েছে গাড়ি পার্কিং করার সমস্যাও। এ ছাড়াও শহরের রাস্তায় ‘রোমিওরা’ যে ভাবে মোটরবাইক চালায় তাতে মধ্য বয়সীদের হার্টফেল করার জোগাড়। শহরে জগধাত্রী পুজো ধুমধাম করে পালিত হলেও সে ভাবে প্রচার পায় না। চন্দননগরের মতো একই ভাবে কৃষ্ণনগর পুরসভা পদক্ষেপ করলে ভাল হয়। শহরের সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তাদের দাপটে ব্যবসা করা দায় হয়ে পড়েছে। থানায় অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয় না।
নিরঞ্জন পাল ব্যবসায়ী, কালেক্টরি মোড়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy