Advertisement
০৮ মে ২০২৪

দায়িত্ব ছাড়তে চান কল্যাণ, নারাজ বিজেপি

জেলা নেতৃত্বের শীর্ষ পদ ছাড়তে চাইছেন বিজেপির নদিয়া জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী। সূত্রের খবর, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের কাছে তাঁর এই ইচ্ছার কথা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন জেলা সভাপতি। কল্যাণবাবু নিজে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তিনি বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ভাবে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলব না।” বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে নদিয়া জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, “শারীরিক অসুস্থতার কারণে কল্যাণবাবু দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন।”

কল্যাণ নন্দী। ফাইল চিত্র।

কল্যাণ নন্দী। ফাইল চিত্র।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৪৯
Share: Save:

জেলা নেতৃত্বের শীর্ষ পদ ছাড়তে চাইছেন বিজেপির নদিয়া জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী। সূত্রের খবর, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের কাছে তাঁর এই ইচ্ছার কথা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন জেলা সভাপতি। কল্যাণবাবু নিজে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তিনি বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ভাবে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলব না।”

বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে নদিয়া জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, “শারীরিক অসুস্থতার কারণে কল্যাণবাবু দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। তবে তিনি অব্যাহতি চাইলেও রাজ্য নেতৃত্ব আপাতত কল্যাণবাবুকেই জেলা বিজেপির সভাপতি হিসেবে কাজ চালাতে বলেছেন।” তা হলে কি নদিয়া জেলা বিজেপির সভাপতি পদে নতুন কেউ আসছেন? সৈকতবাবু জানান, এখনই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় আসেনি। কল্যাণবাবুই এখন জেলা বিজেপির সভাপতি। তাছাড়া পুরো বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বের উপর নির্ভর করছে। তাঁদের নির্দেশ মতোই কাজ হবে।

রাজ্য নেতৃত্বের কোনও নির্দেশ আসার আগেই অবশ্য বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা গত লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর আসনে বিজেপির প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় (জলুবাবু) বলেন, “বিষয়টি আমিও শুনেছি। এই পরিবর্তন দরকার ছিল। আমিও কোনও সহযোগিতা পাইনি। দলের পক্ষে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। বিজেপি এ রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে।”

জেলা নেতৃত্বের তরফে এটাও জানানো হয়েছে যে, তাঁদের দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসারে কোনও একজন ব্যক্তি পরপর দু’বারের বেশি জেলা সভাপতি পদে থাকতে পারেন না। নদিয়ার জেলা সভাপতির পদে কল্যাণবাবু পরপর দু’বার নির্বাচিত হয়েছেন। জেলা বিজেপির সহ সভাপতি জীবন সেন বলেন, “এখনও নদিয়া জেলা বিজেপির সভাপতির নাম কল্যাণ নন্দী। এর বাইরে আর কিছু বলতে চাই না। তবে আগামী দিনে উনি রাজ্য পর্যায়ে আরও বড় দায়িত্ব পেতে চলেছেন।”

বিজেপির তরফে কল্যাণবাবুর অব্যাহতি নিয়ে যে কারণই দেখানো হোক না কেন, জেলার রাজনৈতিক মহল কিন্তু গত লোকসভা ভোট পর্ব জুড়ে বিজেপির ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় তথা জলুবাবুর সঙ্গে কল্যাণবাবুর ‘মতান্তর এবং মনান্তরের’ একটা সম্পর্ক এর মধ্যে খুঁজে পাচ্ছেন। জেলা রাজনীতিতে জলুবাবুর সঙ্গে কল্যাণবাবুর সম্পর্ক কোনওদিনই মধুর নয়। লোকসভা ভোটের আগে এবং পরে একাধিক বার জলুবাবুর সঙ্গে কল্যাণবাবুর রাজনৈতিক সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছে। লোকসভা নিবাচন পর্বে জলুবাবুর তরফে জেলা সভাপতির সক্রিয়তা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। অন্য দিকে কল্যাণবাবুর অভিযোগ ছিল, জলুবাবু জেলা নেতৃত্বের তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়াল খুশি মতো কাজ করেছেন। এখন কল্যাণবাবুর অব্যাহতি চাওয়ার পিছনে সেই দ্বন্দ্ব কোনও ছায়া ফেলছে কিনা তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।

বিজেপির জেলা নেতৃত্ব অবশ্য কোনও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের তত্ত্ব মানতে চাননি। তাঁদের বক্তব্য, জেলায় বিজেপির যাবতীয় সাফল্যের পিছনে রয়েছে কল্যাণবাবুর অবদান। ২০০৯ সালে দলের বিপর্যয়ের পর তাবড় তাবড় নেতারা যখন বিজেপি ছেড়ে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন, তখন কল্যাণ নন্দীই একা কুম্ভ হয়ে জেলার হাল ধরেছিলেন। গোটা জেলায় তখন দলের সদস্য সংখ্যা সাকুল্যে হাজার চারেক হবে। বর্তমানে সেই সদস্য সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। জেলায় বিজেপির ভোট ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ২২ শতাংশ। শেষ লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রবল শক্তিশালী তৃণমূলকে পিছনে ফেলে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে। এ সবের পিছনে বর্তমান সভাপতির ভূমিকা অনস্বীকার্য।

বিজেপির জেলা সভাপতির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির জেরে সত্যব্রতবাবু দলীয় কার্যালয়ের ছায়া পর্যন্ত মাড়ান না। উল্টে কৃষ্ণনগরের চ্যালেঞ্জ মোড়ের উকিলপাড়ায় বিজেপির জেলা দফতর থেকে সামান্য কিছু দূরে আনন্দময়ী তলায় একটি দোতলা বাড়িতে জলুবাবু বেশ বড় মাপের একটি পৃথক রাজনৈতিক কার্যালয় সাজিয়ে নিয়েছেন নিজের জন্য। গত শনিবারে সেখানেই দীর্ঘ সময় ধরে নিজের অনুগামীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন তিনি। দলের পরবর্তী জেলা সভাপতি নিয়ে তিনি কি ভাবছেন জানতে চাইলে জলুবাবু বলেন, “শনিবার দলের সর্বস্তরের নেতাদের সঙ্গে এই নিয়ে কথা হয়েছে। আমি বলেছি বিষয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে সবাই মিলে একজনকে বেছে নিতে হবে।”

অন্যদিকে পরবর্তী সভাপতি নিয়ে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব কী ভাবছেন? দলের মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, “পুরো বিষয়টি বিজেপির রাজ্য সভাপতির উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যদি রাজ্য নেতৃত্ব বর্তমান সভাপতির ইচ্ছাকে মেনে নিয়ে তাঁকে অব্যাহতি দেন, তাহলে আপাতত অ্যাড-হক সভাপতি হিসেবে কাউকে বেছে নেওয়া হবে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে রাজ্য কমিটির উপর।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE