Advertisement
E-Paper

মেঝেতে রোগীর ভিড়, ধুঁকছে হাসপাতাল

প্রচণ্ড জ্বর ও গায়ে ব্যথা নিয়ে শনিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মহিষবাথানের বছর তেরোর কিশোরী প্রিয়াঙ্কা খাতুন। হাসপাতালে শয্যা না জোটায় তার ঠাঁই হয়েছে বারান্দার মেঝেতে।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০০:৫২
করিমপুর গ্রামীন হাসপাতালে রোগীদের ভিড়। — নিজস্ব চিত্র।

করিমপুর গ্রামীন হাসপাতালে রোগীদের ভিড়। — নিজস্ব চিত্র।

চিত্র-১: প্রচণ্ড জ্বর ও গায়ে ব্যথা নিয়ে শনিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মহিষবাথানের বছর তেরোর কিশোরী প্রিয়াঙ্কা খাতুন। হাসপাতালে শয্যা না জোটায় তার ঠাঁই হয়েছে বারান্দার মেঝেতে। বৃষ্টি হলেই জলে ভিজে যাচ্ছে বালিশ ও বিছানার চাদর। দু’দিন কেটে গেলেও এখনও শয্যা মেলেনি।

চিত্র ২: মুরুটিয়ার জেলেহার বিবি পেটের যন্ত্রণা নিয়ে শনিবার রাত থেকে ভর্তি আছেন হাসপাতালে। শয্যা পাননি তিনিও। বাড়ি থেকে বিছানা-বালিশ এনে তিনিও পড়ে রয়েছেন মহিলা ওয়ার্ডের মেঝেতে। হাসপাতালের মেঝে পরিষ্কারের সময় হলেই তাঁকে বিছানা গোটাতে হয়। স্যালাইনের বোতল ধরে মাকে নিয়ে ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকেন মেয়ে রাখেয়া বিবি। ঘর পরিষ্কার হলে আবার মেঝেতে শুয়ে পড়া।

চিত্র ৩: রবিবার সকাল। কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগী দেখছিলেন প্রসূতি বিভাগে। আচমকা গলায় দড়ির ফাঁস দেওয়া এক মহিলাকে নিয়ে হাজির রোগীর বাড়ির আত্মীয়েরা। জরুরি বিভাগে চিকিৎসক নেই দেখে শুরু হল হইচই। প্রসূতি বিভাগ ছেড়ে মেঝেতে শুয়ে থাকা রোগীদের টপকে হাঁফাতে হাঁফাতে এসে জরুরি বিভাগ সামাল দিলেন ওই চিকিৎসক। রোগী দেখতে দেখতেই বিড়বিড় করছেন তিনি, ‘‘কোন দিকে যাই বলুন তো? একার পক্ষে এই ভিড় সামাল দেওয়া সম্ভব নাকি?’’

কথাটা কিন্তু কথার কথা নয়। আর প্রশ্নটাও ওই চিকিৎসকের একার নয়, রোগীদেরও। মহিষবাথানের প্রিয়াঙ্কা যেমন বলছে, ‘‘আমি বাড়ি যেতে চাই। ভিজে বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে আরও শরীর খারাপ করছে।’’ জেলেহার বিবি বলছেন, ‘‘এর থেকে দোজখও বোধহয় ঢের ভাল। হাসপাতালে একটা বেডও জোটে না গো। কী কষ্ট করে যে আছি সে উপরওয়ালাই জানে! একজন ডাক্তার থাকে। তাঁকে সবসময় ডেকেও পাওয়া যায় না।’’

অতিরিক্ত রোগীর চাপে গত কয়েক দিন ধরে নিজেই ধুঁকছে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল। পঞ্চাশ শয্যার এই হাসপাতালে শুধু শনিবারেই ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭০ ছাড়িয়েছে। ফলে অতিরিক্ত ওই রোগীদের ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে। চিকিৎসকেরাও কবুল করছেন, ‘‘শয্যার কথা ছেড়ে দিন। মেঝের ভিড় সামাল দিতেই হিমসিম খাচ্ছি।’’

হাসপাতাল সূত্রে খবর, সীমান্ত ঘেঁষা এই গ্রামীণ হাসপাতালের উপর প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। বহির্বিভাগেই প্রতি দিন প্রায় আটশো রোগী আসেন। দৈনিক গড়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা চল্লিশ হলেও এই সময় রোগীর চাপ অনেক বেড়ে যায়। রোগীর এই বিপুল চাপ থাকলেও সেই অনুপাতে শয্যা, চিকিৎসক কিংবা অন্যান্য কর্মীর সংখ্যা অনেক কম।

১৯৫৭ সালে করিমপুরে প্রায় ৫.৮৫ একর জমির উপর গড়ে উঠেছিল এই হাসপাতাল। তখন অবশ্য এটা ছিল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। পরে ৩০ শয্যার হাসপাতালে ৫০ শয্যার সরকারি অনুমোদন মিলেছে। কিন্তু সমস্যা থেকে গিয়েছে সেই একই জায়গায়। শীতকালে রোগী ভর্তির সংখ্যা কিছুটা কম হলেও অন্য সময় গড়ে প্রায় একশো জন রোগী ভর্তি থাকেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, গরম ও বর্ষাকালে রোগীর চাপ অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। সকলকে শয্যা দেওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া হাসপাতালে দশ জন চিকিৎসক থাকার কথা। আছেন মাত্র
ছ’জন। ফার্মাসিস্ট, এক্স-রে টেকনিশিয়ান, ল্যাব টেকনিশিয়ান, অ্যাম্বুল্যান্স চালক, নার্স ও অন্যান্য কর্মী সবই রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

করিমপুর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র বলছেন, “এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে ঠিক মতো পরিষেবা দেওয়ার পরিকাঠামো হাসপাতালের নেই। দিন কয়েক আগেই জেলাশাসক ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে নিয়ে হাসপাতাল ঘুরে সব সমস্যা নিজে চোখে দেখেছি। খুব তাড়াতাড়ি যাতে এই সমস্যার সমাধান হয় তার জন্য সবরকম চেষ্টা চলছে।’’

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “কিছুদিনের মধ্যে ওই হাসপাতালে অস্ত্রোপচার চালু করা ও শয্যা সংখ্যা পঞ্চাশ থেকে বাড়িয়ে দেড়শো করার চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগের ব্যাপারেও স্বাস্থ্য ভবনকে জানানো হয়েছে।’’

Karimpur hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy