Advertisement
০৪ মে ২০২৪

মাকে হারিয়ে দিয়ে এখানে সেরা লক্ষ্মী

মা উমা হার মেনে যায় মেয়ে লক্ষ্মীর কাছে।করিমপুরের লক্ষ্মীপাড়া, পাট্টাবুকা ও তেহট্টের কুষ্টিয়াতে দুর্গা অপেক্ষা লক্ষ্মীর কদর অনেক বেশি। আর তাই প্রতি বছরের মতো দুর্গাপুজো শেষ হতেই এখানে সাজো সাজো রব পড়ে গিয়েছে।

লক্ষ্মীপুজোর আলোকসজ্জা। করিমপুরের লক্ষ্মীপাড়ায়।—নিজস্ব চিত্র

লক্ষ্মীপুজোর আলোকসজ্জা। করিমপুরের লক্ষ্মীপাড়ায়।—নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৬
Share: Save:

মা উমা হার মেনে যায় মেয়ে লক্ষ্মীর কাছে।

করিমপুরের লক্ষ্মীপাড়া, পাট্টাবুকা ও তেহট্টের কুষ্টিয়াতে দুর্গা অপেক্ষা লক্ষ্মীর কদর অনেক বেশি। আর তাই প্রতি বছরের মতো দুর্গাপুজো শেষ হতেই এখানে সাজো সাজো রব পড়ে গিয়েছে। জোরকদমে চলছে লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতি। হাতে যে সময় খুব কম। তারই মধ্যে বাজার-দোকান-প্যান্ডেল-আলো, কত কাণ্ড!

ব্যাপারটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। দুগ্গাপুজোর বদলে এই দিনটার জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে এখানকার মানুষ। উন্মাদনাও মারাত্মক। জাঁকজমক ও ধুমধাম, সে-ও কিছু কম নয়। করিমপুরের লক্ষ্মীপাড়ার আলোকপাত ক্লাবের সভাপতি মন্টু সরকার যেমন বললেন, “এ বারে আমাদের পুজো ৬১ বছরে পা দিল। এক সময় খুব ছোট করে পুজো শুরু হলেও যত দিন যাচ্ছে পুজোর বাজেট তত বাড়ছে। এ বছর পুজোর বাজেট প্রায় ছ’লক্ষ টাকা।’’ প্রত্যেক বছরের মতো এ বারেও চন্দননগর থেকে এসেছে আলোকশিল্পী। কাঠের চামচ দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা ও পুজোমণ্ডপ। সবটাই দর্শকদের নজর কাড়বে, আশায় ক্লাব কর্তৃপক্ষরা। তাঁদের দাবি, নদিয়া জেলায় সব চেয়ে বড় বাজেটের পুজো এটি।

লক্ষ্মীপুজোর ছুটিটাও বেশ অন্য রকম। দুর্গাপুজোয় বাড়ি ফিরতে পারেনি তো কী আছে? লক্ষ্মীপুজোয় ঘরের ছেলে ঘরে। সপরিবার বাপের বাড়িতে যান বিবাহিত মেয়েরা। এ বছরেও লক্ষ্মীপুজোয় বাড়ি ফিরেছে মহারাষ্ট্রে কর্মরত প্রলয় সরকার কিংবা সৌদি আরবে কর্মরত দেবব্রত চক্রবর্তী। তাঁদের কথায়, “লক্ষ্মীর টানে বাইরে কাজ করতে গেলেও, মা লক্ষ্মীর টানেই আবার এই সময়টা বাড়ি ফেরা। না আসলে মন খারাপ করে। প্রতি বছর অবশ্য ফেরা হয় না, কিন্তু এলে লক্ষ্মীপুজোর সময়টাতেই আসি। পুরনো বন্ধু, আত্মীয়স্বজন বা পাড়ার সকলের সঙ্গে দেখা হয়। বছরভর কাজের একঘেয়েমি কেটে যায় পুজোর কটা দিনের আনন্দে।’’

আবার তেহট্টের নতিপোতায় পারিজাত ক্লাব প্রতি বছর লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে এক দিনের ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আটটি দল অংশ নেয়। করিমপুরের পাট্টাবুকায় স্থানীয় ‘ভোরের আলো’ ক্লাবের লক্ষ্মীপুজো ১৯-এ পড়ল। মণ্ডপ আর আলোর সাজ দেখতে এ দিন প্রচুর মানুষের সমাগম হয় পাট্টাবুকায়। উৎসবের সাজে তেহট্টের কুষ্টিয়াও। স্থানীয় বাসিন্দা নীলোৎপল দত্ত বলেন, “৭০ বছর ধরে ধুমধাম করে লক্ষ্মীপুজো হয়ে আসছে কুষ্টিয়া গ্রামে। একটি বিশেষ ঘটনার পর থেকেই এখানকার সিংহরায় বাড়িতে দুর্গাপুজো বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় লক্ষ্মীপুজো। তার পর থেকেই বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে লক্ষ্মীপুজো হয়ে আসছে।’’ বলে চললেন নীলোৎপলবাবু... ‘‘পুজোর দিন সন্ধ্যায় গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা মাটি দিয়ে নানা ধরনের পুতুল তৈরি করে। মাটির তৈরি সেই সব
পুতুল নিয়ে তারা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গান গেয়ে নাড়ু-মুড়কি মিষ্টি সংগ্রহ করে। এই পুতুলগুলোকে সবাই ‘কাংলা’ বলে।’’ গ্রামের মনোতোষ মণ্ডল বলেন, “পারিবারিক ও বারোয়ারি পুজো মিলিয়ে এখানে মোট ৫০টি পুজো হচ্ছে এবছর। পুজো উপলক্ষে জলঙ্গির তীরে মেলা বসে। নাগরদোলা বসে। পুতুল
নাচের খেলা হয়। অনেক দোকানপাটও বসে মেলায়।’’

কুষ্টিয়া বাঁধেরপাড়া বারোয়ারি পুজো কমিটির কর্তা তরুণ মণ্ডল বলেন, “পুজো উপলক্ষে প্রত্যেক বারের মত এ বছরও পুজোর পর দিন রবিবার জলঙ্গি নদীবক্ষে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। নদিয়া-মুর্শিদাবাদ জেলার বহু নৌকা
অংশ নেয়। প্রতিযোগিতার শেষে পুরস্কারও আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Karimpur Lakshmi puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE