অপেক্ষা: বহরমপুর কিসান মান্ডিতে। নিজস্ব চিত্র
বছর পঞ্চান্নের সন্তোষ সরকার। কিসান বাজারে তাঁর ধান কেনার দিনক্ষণ জানতে সাইকেলে নিয়ে বেরিয়েছেন। প্রায় আট কিলোমিটার সাইকেল ঠেঙিয়ে বহরমপুরের ভাকুড়ির কিসান মান্ডিতে পৌছে অপেক্ষা করেছিলেন প্রায় তিন ঘণ্টা। চার পর জানতে পারেন, তাঁর কাছ থেকে কবে কেনা হবে ধান, তা জানা যাবে শুক্রবার।
বৃহস্পতিবার বহরমপুর কিসান মান্ডিতে দাঁড়িয়ে গোয়ালজানের কৃষক সন্তোষ সরকার বলছেন, ‘‘কিসান মান্ডি না আদালতে এসেছি বুঝতে পারছি না। এই নিয়ে দিনের পর দিন ঘুরে চলেছি, আর কোনও ভরসা নেই।’’ মেয়ের বিয়ে দেখাশুনা চলছে, বোরো মরসুমে ধান চাষের জন্য টাকার দরকার। জানিয়ে গেলেন, ‘‘শুক্রবার শেষবারের মত দেখব। ধান না কিনলে অন্য কোথাও যে দরে পাব বিক্রি করে দেব।’’
সন্তোষ একা নন, তাঁর মত অনেক চাষিকে রেজিস্ট্রেশনের কাগজ ও ধান বিক্রির দিন পেতে গিয়ে এমনই দিনের পর দিন ঘুরে শুনতে হচ্ছে, ‘কতা দিতে পারছি না ভাই!’
মুখ্যমন্ত্রী নিদান দিয়েছেন, ফড়ে হটাও। প্রশাসনের কর্তারাও কৃষকদের সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। কিন্তু কৃষকদের এই ভোগান্তির শেষ নেই। এর কোনও স্পষ্ট উত্তর প্রশাসনের কাছেও নেই।
বৃহস্পতিবার বহরমপুরে কৃষি দফতরের একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘ফড়ে বা মধ্য সত্বভোগীরা যাতে কৃষকদের সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রিতে সমস্যা না হয়ে ওঠে তার ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জেলা শাসকদের নিয়ে বৈঠক করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশও দিয়েছেন।’’
তা হলে জেলা প্রশাসন কী বলছে? মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলেন, ‘‘ধান কেনা নিয়ে এখনও কোনও অভিযোগ আসেনি। কৃষকদের হয়রান করা যাবে না। হয়রানির অভিযোগ পেলে ধান কেনার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
গোয়ালজানের সন্তোষ সরকারের ১৫ কুইন্টাল ধান রয়েছে। বহরমপুর কিসান মান্ডিতে কেন্দ্রীয় ধান ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি লাগবে তা জানতে দিন পনেরো আগে সেখানে এসেছিলেন সন্তোষ। তার পরে রেজিস্ট্রেশনের জন্য কাগজপত্র জমা দেন।
গত শুক্রবার রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিতে এসেও পাননি। বৃহস্পতিবার হাতে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেলেও ধান বিক্রির দিন পাননি। সেই দিন পেতে আজ শুক্রবার তাকে কিসান মান্ডিতে আসতে হবে।
নিয়াল্লিশপাড়ার নওদাপাড়ার বাসিন্দা নওসাদ শেখ বলেন, ‘‘এই নিয়ে চার দিন ঘুরেও ধান বিক্রি দিন পেলাম না। ধান কবে নেবে তা জানার জন্য ফের শুক্রবার আসতে বলেছে আংমাকেও।’’ তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী সহায়ক মূল্যে ধান কিনে নেওয়ার কথা বলছেন। অথচ তাঁদের হয়রানি করা হচ্ছে। এ ভাবে হয়রানি করলে ধান কিভাবে বিক্রি করব। এরকম হয়রানির থেকে অন্য কোথাও ধান বিক্রি করে দেওয়া ভাল।’’
গজধরপাড়ার চাষি মুকাজুদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘পাঁচ দিন ধরে আমার ধান ফেলে রেখেছিল। মুখ্যমন্ত্রী কড়া পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করতেই এ দিন ধান কিনেছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ফড়েদের দাপটের কারণে আমার ধান এ ভাবে ফেলে রাখা হয়েছিল।’’
ধান বিক্রিতে ফড়ে রাজ আটকাতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বহরমপুরের বিডিও রাজর্ষি নাথ, বহরমপুরের আইসি সনৎ দাসে কিসান মান্ডিতে এসে কৃষক ও ধান কেনার সাথে যুক্ত সরকারি আধিকারিকদের সাথে কথা বলেন। পরিচয়পত্র দেখে ধান কেনার নির্দেশ দেন। পরে বিডিও বলেন, ‘‘হয়রানির বিষয়টি আমার জানা নেই। কারও এমন অভিযোগ থাকলে যেন সরাসরি আমাদের জানান।’’
বহরমপুরে কিসান মান্ডিতে ধান কেনার সাথে যুক্ত এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এখানে কৃষকদের ধান কেনা হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশন কার্ড হওয়ার পর ধান নেওয়ার দিন দেওয়া হয়। সেই মত ধান কেনা হয়। হয়রানি কোথায়!’’
তা হলে সন্তোষকে ঘুরতে হল কেন? না, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy