Advertisement
E-Paper

মাঠ বাঁচাতে এর পর লড়াই গ্রিন বেঞ্চে

ওয়াইএমএ-র মাঠকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। জেলাশাসকের মালিকানায় থাকা বহরমপুরের এই মাঠে ভবিষ্যতে সরকারি, বেসরকারি মিটিং বা মেলা করার বিষয়ে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে জনস্বার্থ মামলার আর্জিও জানানো হয় হাইকোর্টে।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:১৫
ওয়াইএমএ মাঠের বর্তমান অবস্থা। (ইনসেটে) মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্যে সবুজ ধ্বংস করে তৈরি করা মঞ্চ। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

ওয়াইএমএ মাঠের বর্তমান অবস্থা। (ইনসেটে) মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্যে সবুজ ধ্বংস করে তৈরি করা মঞ্চ। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

ওয়াইএমএ-র মাঠকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। জেলাশাসকের মালিকানায় থাকা বহরমপুরের এই মাঠে ভবিষ্যতে সরকারি, বেসরকারি মিটিং বা মেলা করার বিষয়ে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে জনস্বার্থ মামলার আর্জিও জানানো হয় হাইকোর্টে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গ্রিন ট্রাইবুনালে আবেদন করার কথা জানিয়েছে। মামলার আইনজীবী অরিন্দম দাস বলেন, ‘‘স্থায়ী নিষেধাঞ্জার ব্যাপারে গ্রিন ট্রাইবুনালেই আবেদন করব।’’

মাঠের সবুজ ধ্বংস করে ১ জুলাই সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক জনসভা করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে গত ৯ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থের মামলা দায়ের করে মাঠটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানান বহরমপুর শহরের দুই আইনজীবী শুভাঞ্জন সেনগুপ্ত ও সফিকুল আলম। শুক্রবার মামলার শুনানির পরে মাঠটি ‘অবিলম্বে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার’ রায় দেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।

শুভাঞ্জনের আইনজীবী অরিন্দম দাস বলেন, ‘‘মাঠ পুরুদ্ধারের জন্য সরকার পক্ষের আইনজীবী আদালতের কাছে কিছুটা সময় চাইলে ডিভিশন বেঞ্চ ওই আর্জি খারিজ করে দেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি প্রতিক্রিয়ায় বলেন গত ১ জুলাই সভা হয়েছে। এক মাস অতিক্রান্ত। মামলাকারীদের আবেদন সত্ত্বেও মাঠ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে আগের অবস্থায় মাঠ ফিরিয়ে দিলে এই মামলার প্রয়োজন হত না। ফলে আর সময় দেওয়া যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব মাঠটি আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে। এ ব্যাপারে জেলাশাসককে নির্দেশ দেওয়া হল।’’ এই রায়ে মামলার আবেদনকারীর আর্জিই মান্যতা পেল।

মুর্শিদাবাদ জেলাশাসক ওয়াই রত্মাকার রাও বলেন, ‘‘মামলা দায়ের করার আগেই ওই মাঠে নতুন করে ঘাস লাগানো হয়েছে। নতুন লাগানো সেই ঘাসের সুবজে ইতিমধ্যে মাঠটি ঢেকে গিয়েছে। হাইকোর্টে জমা দেওয়ার জন্য সেই ছবি ও নথি সরকার পক্ষের আইনজীবীর হাতে দেওয়া হয়েছে।’’ এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি। বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর পরামর্শে দুই আইনজীবী শুভাঞ্জন সেনগুপ্ত ও সফিকুল আলম মাঠ বাঁচাতে জনস্বার্থ মামলা করেন। শুভাঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘মাঠের পুরোটো এখনও সবুজায়ন হয়নি। মাঠের উত্তরের ও দক্ষিণের প্রবেশ পথের সামনের অংশে ঘাস লাগানো হয়নি। তা ছাড়া মাঝমাঠে লাগানো নতুন ঘাসের অনেকটাই শুকিয়ে মরে গিয়েছে!’’

সবুজ ধ্বংসের পরে ওই মাঠে ফের সবুজ ফেরানোর রায়ে খুশি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘কয়েক’শো লরি পাথরকুচি ও বালি ঢেলে, লাখখানেক খুঁটি পুঁতে লক্ষাধিক বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে ম্যারাপ বেঁধে গোটা মাঠটাকে শেষ করে দেওয়া হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভার আগের দিন শহরে বিভিন্ন স্তরের নাগরিক সংগঠন পথে নেমেও ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে প্রশাসনকে দমাতে পারেনি। তারপরই জনস্বার্থের মামলা করার
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কলকাতা হাইকোর্ট নাগরিকদের দাবিকে মান্যতা দেওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনের তুঘলকি পদক্ষেপ নস্যাৎ করে দেওয়ায় আমরা খুশি।’’

সবুজ ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি জেলাশাসকের মালিকানায় থাকা ওয়াইএমএ মাঠে ভবিষ্যতে সরকারি বা বেসরকারি মিটিং ও মেলা করার বিষয়ে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে জনস্বার্থ মামলায় আর্জি জানানো হয়েছে। মামলার আইনজীবী অরিন্দম দাস বলেন, ‘‘ওই বিষয়ে গ্রিন ট্রাইবুনাল উপযুক্ত ক্ষেত্র। তাই ওই বিষয়ে সেখানেই আবেদন করার জন্য প্রধান বিচারপতির ডিভিশন আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন।’’ আবেদনকারী শুভাঞ্জন সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, সবুজ বাঁচাতে হাইকোর্টের পরামর্শ মেনে এ বার গ্রিন ট্রাইবুনালে আবেদন করা হবে।

ওয়াইএমএ মাঠ বাঁচানোর জনস্বার্থ মামলায় বহরমপুরের ঐতিহাসিক ব্যারাক স্কোয়ার মাঠের সবুজ ধ্বংসের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। ব্রিটিশ রাজত্বের একেবারে প্রথম পর্বে বহরমপুর শহরে গড়ে ওঠে ব্যারাক স্কোয়ার মাঠ। একই সঙ্গে সেনা ছাউনি ও প্রশাসনিক ভবন চারপাশে রেখে মাঝখানে গড়ে তোলা হয় বিশাল আয়তনের ব্যারাক স্কোয়ার মাঠ। রেঙুন থেকে রেন-ট্রি এনে লাগানো হয় মাঠের চারপাশে। এ বারের মতোই বছর তিনেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি জনসভা করা হয় ব্যারাক স্কোয়ার মাঠে। সেই বারও ঘেস ফেলে ঐতিহাসিক ব্যারাক স্কোয়ার মাঠের সবুজ ধ্বংস করে মুখ্যমন্ত্রীর সভা করা হয়। তখনও নাগরিক প্রতিবাদ সংগঠিত হয়।

বছরখানেক আগে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মুর্শিদাবাদ সফরের জন্য ব্যারাক স্কোয়ার মাঠের মাঝখানের সবুজের উপর ঘেস ফেলে হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়। ওই সময় তাঁর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন স্থানীয় সাংসদ অধীর চৌধুরী। প্রশাসনিক মহলের অন্দরের কথা, সেই প্রতিবাদের কথা মাথায় রেখেই এ বার মুখ্যমন্ত্রীর সভার ক্ষেত্রে ব্যারাক স্কোয়ার মাঠ এড়িয়ে ওয়াইএমএ মাঠ নেওয়া হয়। ব্যারাক স্কোয়ার মাঠের প্রতিষ্ঠা কাল নিয়ে অতি সম্প্রতি চিনটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে বহরমপুর শহরের ২৫০ পূর্তি উদযাপন করতে পৃথক দুটি অনুষ্ঠান করা হয়।

ফলে ওয়াইএমএ মাঠ বাঁচানোর বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে শহরবাসী খুশি। ব্যারাক স্কোয়ার মাঠের হৃত গৌরব ফিরে পাওয়ার বিষয়েও আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন তাঁরা। ওয়াইএমএ রক্ষার তাগিদে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা দু’টি নাগরিক সংগঠেনের দুই কর্ণধার অতীশ সিংহ ও তরুণ মুখোপাধ্যায় পৃথক ভাবে বলেন, ‘‘ওয়াইএমএ মাঠ রক্ষার হাইকোর্টের রায়ে আমরা খুশি। হাইকোর্টের ওই রায় ব্যারাক স্কোয়ার মাঠ রক্ষার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।’’

YMA field high court baharampur murshidabad Pranab mukherjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy