Advertisement
০৫ মে ২০২৪
সাজো-সাজো রব সুতির আমুহায়

কোজাগরীতে ফেরে লক্ষ্মীরা বাপের ঘরে

প্রায় হাজার ছয়েক মানুষের বাস গ্রামে। প্রায় সকলেই কৃষিজীবী। সে কারণে ‘খেত ভরা ফসলের’ আনন্দে আমুহা গ্রামে লক্ষ্মীর বসতি। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস “মা লক্ষ্মীর আর্শীবাদেই ফসলে ভরে উঠেছে তাদের উঠোন।’’

অপেক্ষা। সুতির আমুহায়। নিজস্ব চিত্র

অপেক্ষা। সুতির আমুহায়। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা ও কল্লোল প্রামাণিক
রঘুনাথগঞ্জ ও তেহট্ট শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩০
Share: Save:

বিকেলে উঠোনে মাদুর পেতে গোল হয়ে বসে নারকেল নাড়ু বানাতে বসেছেন মা-দিদি-বৌদিরা। বিশ ত্রিশটা নারকেল মালা কুরতে কুরতে হাত অবশ। তাই পালা করে চলছে নারকেল কোরা। কেউ নতুন বৌ, কেউ প্রবীণা। কেউ বাপের বাড়ি এসেছেন, কেউ বাপের বাড়ি যেতেই পারেননি। ফি বছর এমনই দৃশ্যের দেখা মেলে সুতির আমুহায়, তেহট্টের কুষ্টিয়ায়। করিমপুরের লক্ষ্মীপাড়ায়।

কৃষি থেকেই এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য। তাকে লক্ষ্মীর আশিস হিসেবেই দেখছেন সুতির আমুহার বাসিন্দারা। বুধবার তাই ব্যস্ততা গ্রামে। সকাল থেকেই কয়েক পশলা বৃষ্টি পর দুপুরে দেখা মিলেছে রোদের। বসেছে মেলাও। লক্ষ্মী মন্দিরের পাশেই চলছে নাটকের শেষ মহড়া। শতবর্ষ প্রাচীন কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোকে ঘিরে উৎসবমুখর আমুহা।

প্রায় হাজার ছয়েক মানুষের বাস গ্রামে। প্রায় সকলেই কৃষিজীবী। সে কারণে ‘খেত ভরা ফসলের’ আনন্দে আমুহা গ্রামে লক্ষ্মীর বসতি। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস “মা লক্ষ্মীর আর্শীবাদেই ফসলে ভরে উঠেছে তাদের উঠোন।’’

গ্রামেরই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী উমা দাস বলছেন “সেই কবে গ্রামেরই নিতাই দাস বাড়িতেই প্রথম শুরু করেছিলেন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। বছর তিনেক পর সেই পুজোই তুলে দেন গ্রামবাসীদের হাতে।’’

গ্রামের তরুণ শেখর দাস বলছেন, “আগে পেট্রোম্যাক্সের আলোয় গলা ছেড়ে অভিনয় করতেন গ্রামের নাট্যপ্রেমীরা, যাতে উপস্থিত হাজারো দর্শক শ্রোতার কাছে সংলাপ পৌঁছুতে পারে। এখন এসেছে মাইক, বিদ্যুতের আলো। তৈরি হয়েছে মন্দিরের পাকা দালান।’’

অরঙ্গাবাদের বাসিন্দা তপতী শীল সরকার বলেন , “কৃষি থেকে আর্থিক সচ্ছলতা আসায় গ্রামে শিক্ষার হারও বেড়েছে। গ্রামের মানুষের বিশ্বাস, লক্ষ্মীর কৃপায় এ সব সম্ভব হয়েছে।’’

একই ভাবে মায়ের চেয়ে মেয়ে লক্ষ্মীর কদর বেশি তেহট্টের কুষ্টিয়া, করিমপুরের লক্ষ্মীপাড়ায়। লক্ষ্মীপুজো এখানে বড়পুজো। পাঁচ দিনের পুজোকে ঘিরে লক্ষ্মীপাড়া আবেগে মেতে ওঠে। এই সময় যাঁরা কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন, বাড়ি ফেরেন। বড়পুজো উপলক্ষে বাপের বাড়ির আসেন মেয়েরা।

লক্ষ্মীপাড়ার আলোকপাত ক্লাবের সভাপতি মন্টু সরকার জানান, এ বারে তাঁদের পুজো ৫৯ বছরে পা দিল। এ বারে চার লক্ষ টাকার বাজেটের পুজোর থিম গোপালভাঁড়। একই ভাবে প্রায় ৭১ বছর ধরে লক্ষ্মীপুজো হয়ে আসছে কুষ্টিয়া গ্রামে। এলাকার বাসিন্দা শ্যামল বিশ্বাস বলেন, “গ্রামের সিংহরায় বাড়িতে প্রথম লক্ষ্মী পুজো শুরু হয়। সেই থেকে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় গ্রামে লক্ষ্মীপুজো হয়ে আসছে।’’ তিনি জানান, পুজোর দিন সন্ধে বেলায় গ্রামের ছোটরা মাটি দিয়ে পুতুল তৈরি করে। সেগুলি নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে গান গেয়ে নাড়ু মুড়কি মিষ্টি সংগ্রহ করে। পুতুলগুলি ‘কাংলা’ নামে পরিচিত।

পুজো উপলক্ষে কুষ্টিয়ায় বাপের বাড়িতে এসেছেন শিল্পা হালদার। তাঁর কথায়, “প্রতি বছর এ বছর গ্রামের মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসি। বড়পুজো ছেড়ে থাকতে পারি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE