এ ভাবেই চলছে দেওয়াল লিখন। কান্দিতে। নিজস্ব চিত্র
কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা যুক্তি খাড়া করে এ বারও বহরমপুরে প্রার্থী দিয়ে লড়াই করার প্রস্তুতি শুরু করেছে বাম শরিক আরএসপি। আর সেখানেই বেধেছে গোলমাল!বিশেষ করে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী পদ দেওয়া নিয়ে বামেদের দুই শরিক দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে বিবাদ বেধেছে।
এর আগে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব ভোটকে একত্রিত করার ‘সদিচ্ছা’র বার্তা দিতে অধীর চৌধুরীর বহরমপুর ও আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরীর মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বামফ্রন্ট। কিন্তু কেরলে বামেদের বিরুদ্ধে স্বয়ং কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দুই শিবিরের সমীকরণের আরও অবনতি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার আরএসপি প্রার্থী ইদ মহম্মদ বহরমপুরে নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যদিও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে থেকেই বেলচা-কোদাল প্রতীক এঁকে প্রার্থী ইদ মহম্মদের নামে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের নানা প্রান্তে দেওয়াল লিখতে শুরু করে দিয়েছে আরএসপি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কিন্তু আরএসপি-র রাজ্য নেতৃত্বের ওই সিদ্ধান্তে আলিমুদ্দিনে রাজ্য বামফ্রন্টের সিলমোহর না দেওয়ায় সিপিএম এবং আরএসপি দলের মধ্যে কিছুটা হলেও সম্পর্কে ফাটল ধরেছে।
যেমন সিপিএমের নিচুতলার কর্মীরা কান্দি ও নওদা এলাকায় বাম শরিকের প্রার্থীর বদলে কংগ্রেসের প্রার্থী অধীর চৌধুরীর হয়ে প্রচার করছে। তাঁরা প্রকাশ্যে বলছেন ইদ মহম্মদ আরএসপির প্রার্থী, সিপিএমের প্রার্থী নয়। ফলে তারা ভোটের আসরে ইদ মহম্মদের সঙ্গে থাকবে না। বরং তারা অধীর চৌধুরির হয়েই ভোট করবে। ফলে ভোটও পড়বে বামের শরিক আরএসপির বিরুদ্ধে। এতে ক্ষুব্ধ জেলা আরএসপি নেতৃত্ব। অন্য দিকে ‘বামফ্রন্ট প্রার্থী’ বলে ইদ মহম্মদের নামে দেওয়াল লিখন করার বিষয়টিও তেমনি সিপিএম নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছে না। ফলে আরএসপির প্রার্থীকে সমর্থন না করে সরাসরি কংগ্রেসের প্রার্থীর হয়ে দেওয়াল লিখন থেকে প্রচার শুরু করেছে সিপিএম।
আরএসপির নওদা ব্লক কমিটির সদস্য শাহজাহান বিশ্বাস বলছেন, ‘‘আমরা তো বামের মধ্যে আছি। তাই দেওয়াল লিখনে বাম কথাটি লিখছি। তবে বামফ্রন্ট ‘মনোনীত’ কথাটি লিখছি না। এতে সিপিএমের আপত্তি থাকার কথা নয়।’’
আরএসপি’র ওই নেতা বলছেন, ‘‘নওদা ও কান্দির বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে লোকসভায় প্রার্থী হওয়ায় আগামী দিন ওই দুটি আসনে উপ-নির্বাচন হবে। এখন নওদা বিধানসভা কেন্দ্রে লড়তে গেলে দলের সংগঠন মজবুত করার লক্ষেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।’’
যদিও সিপিএম সে কথা মানতে পারছে না। সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সদস্য শমিক মণ্ডল সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলাখুলি লিখেছেন। শমিক বলছেন, ‘‘বহরমপুর আসনে রাজ্য বামফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আরএসপি প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। এখন তারা বামফ্রন্ট প্রার্থী বলে দেওয়াল লিখন করছে। কিন্তু আমরা যে প্রার্থী তৃণমূল ও বিজেপিকে হারাতে পারবে সেই প্রার্থীকেই (কংগ্রেস) ভোট দিতে অনুরোধ জানাব।’’
আরএসপির জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় প্রার্থীর পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘সকল বাম মনোভাবাপন্ন মানুষ আমাদের সঙ্গে। ফলে কোন সমস্যা নেই।’’ যদিও সিপিএম আগেই ঘোষণা করেছে রাজ্যে ৪০টি আসনে বামফ্রন্টের হয়ে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে, কিন্তু মুর্শিদাবাদে ও মালদহের একটি করে কেন্দ্রে বামফ্রন্ট কোনও প্রার্থী দেবে না।
বামফ্রন্টের ওই সিদ্ধান্ত না মেনেই আরএসপি নিজেদের শক্তি ধরে রাখতে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী অধীরের বিরুদ্ধে ভরতপুর বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক ইদ মহম্মদ কে প্রার্থী করে আরএসপি নেতৃত্ব। এমনকি আরএসপি নেতৃত্ব ইদ মহম্মদের হয়ে জোর কদমে প্রচার শুরু করেছে এলাকায়। কিন্তু সিপিএম এলাকায় কংগ্রেস প্রার্থীর প্রচারে দেওয়াল লিখন শুরু করায় ক্ষুব্ধ আরএসপি নেতৃত্ব। আরএসপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী বলেন, “সিপিএম শরিকি ধর্ম পালন করছে না সেটা ওই ঘটনায় তার বড় প্রমাণ। সিপিএম যেখানে প্রার্থী দিয়েছে সেখানে আমরা সিপিএমের হয়েই প্রচার করছি, কিন্তু বহরমপুরে সিপিএমের ওই কাজ নিয়ে রাজ্য জুড়ে বামফ্রন্টের মধ্যে একটা আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা সমর্থনযোগ্য নয়।”
সিপিএমের কান্দি এরিয়া কমিটির সম্পাদক স্বরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান মঙ্গলবার যে সিদ্ধান্তের কথা ঘোষনা করেছে আমরা বহরমপুর কেন্দ্রে সেই নির্দেশ পালন করেই কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার জন্য দেওয়াল লিখন ও প্রচার করছি।”
সিপিএমের সম্পাদক জেলা মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলছেন, “আমরা রাজ্য বামফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy